ইনসাইড পলিটিক্স

রমজানে সাংগঠনিক শক্তি যাচাই করছে বিএনপি


প্রকাশ: 24/03/2023


Thumbnail

নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই রাজপথের আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপিকে ‘সংলাপ’-এ অংশগ্রহণের জন্য চিঠিও দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের আমন্ত্রণ বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। সূত্রটি বলছে, রমজানের রোজা চলে আসায় বিএনপির আন্দোলন এখন কেবল ইফতার পার্টি ঘিরেই সীমাবদ্ধ থাকছে। তবে রমজান মাসজুড়ে সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের সক্ষমতা প্রমাণে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। এর অংশ হিসাবে রমজানজুড়ে ইফতার রাজনীতির আড়ালে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেবে দলটি। 

এদিকে বিএনপিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি নিয়েও শুরু হয়েছিল নানা গুঞ্জন। রাজনৈতিক মহলে কথা ওঠেছিল, বিএনপি এই নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন চায়। যেহেতু এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিএনপির, সেহেতু এই নির্বাচন কমিশনের সাথে বিএনপি সংলাপে বসতে পারে না। রাজনৈতিক  মহল মনে করেন, নির্বাচনে না এসে বিএনপি আন্দোলনে যাওয়ার যে সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ের মহড়া দিচ্ছে- তাতে কোনো ফলাফল পাবে না দলটি। কেননা নির্বাচনে না এলে জাতীয় সংসদ ভবন থেকে শুরু করে তৃণমূলের রাষ্ট্রীয় কোনো অবস্থানেই থাকছে না বিএনপি। ফলে স্বার্থের লোভ দেখিয়ে আমজনতা দিয়ে বিএনপি যে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে, তা ব্যর্থ হবে। ইতিমধ্যে এই ধরনের বহু আন্দোলনের প্রয়াসে বিএনপি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।          
সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো বিএনপির পক্ষ থেকে রাজধানীর ৫০টি থানায় ইফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এ ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থাকবেন অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় সব নেতাকর্মীও। যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমর্থন আদায়ে বিএনপির পক্ষ থেকেও একাধিক ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সমমনা দল ও বিএনপিপন্থি পেশাজীবীরাও আয়োজন করবে ইফতার পার্টি।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, সোমবার (২০মার্চ) দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নির্বাহী কমিটির সভার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সেই বৈঠকে রমজানকে সাংগঠনিক মাস ধরে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই রমজান মাসজুড়েই চলবে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া। কোথাও কোনো কোন্দল বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করা হবে। ইফতার পার্টির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার চিন্তা রয়েছে দলটির। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সমন্বয়হীনতা দূর হবে। এছাড়া রমজানকেন্দ্রিক সাংগঠনিক তৎপরতায় সরকার সেভাবে বাধাও দিতে পারবে না।

বিএনপি সূত্র জানা গেছে, নির্বাচন ও আন্দোলনের বছর হওয়ার ঘরোয়া রাজনীতির অংশ হিসাবে এবার ইফতারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি ইফতারের আয়োজন করা হবে। প্রথম রমজানে লেডিস ক্লাবে এতিম ও আলেম উলামাদের সঙ্গে হবে ইফতার- যা ইতিমধ্যেই আজ প্রথম রোজার দিন সম্পন্ন করা হয়েছে। এরপর ৪ রমজান পেশাজীবী, ৭ রমজান কূটনৈতিক ও ১১ রমজান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করবে বিএনপি। এসব ইফতারে আমন্ত্রিতদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে এবারের ইফতার রাজনীতির বিশেষ গুরুত্ব হচ্ছে প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীর ৫০টি থানায় এ কর্মসূচি পালন করা হবে। অতীতে মহানগরের উদ্যোগে একটি ইফতার পার্টির আয়োজন করা হতো। কিন্তু আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে এবার ৫০টি থানায় আলাদা অলাদাভাবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২১ মার্চ) যুবদলের এক যৌথ সভা হয়। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা। এছাড়া ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এবার মহানগরের উদ্যোগে রাজধানীর সব থানায় ইফতারের আয়োজন করা হবে। সেই ইফতারের সব অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ইফতার সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে করা হয় প্রস্তুতি সভাও। এই আয়োজনকে সফল করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণকে ১৬টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি জোনে অন্তত তিনটি থানা রয়েছে। একই দিন তিন থানায় হবে ইফতার। ২৮ মার্চ থেকে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

বিএনপির একাধিক নেতারা বলছেন, বিগত আন্দোলনে ঢাকা মহানগর নিয়ে অনেকের নানা অভিযোগ আছে। তারা রাজপথে কাঙ্ক্ষিত সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। সারাদেশের মতো ঢাকা মহানগরীতে আন্দোলন হলে সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হতো। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাতে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পুনর্গঠন করে। কিন্তু তারপরও থানা এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক এলাকায় থানা বিএনপি নেতাদের কথা অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মানছে না। যার যার মতো করে কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সমন্বয়হীনতা দূর করে সবার মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে অন্যান্য মহানগরীতেও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হবে। ইতোমধ্যে যুবদলের পক্ষ থেকে ১০ মহানগরীতে ইফতার পার্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক জানান, এবার রমজানে ব্যাপকভাবে ইফতার মাহফিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ় হবে। যা আগামী আন্দোলনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন বলেন, প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি থানায় ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। এর ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা থাকলে দূর হবে। বাড়বে ঐক্য। শুধু ঢাকা নয়, অন্যান্য মহানগরীতেও ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তিও যাচাই করার সুযোগ হবে।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির শক্তি, পরিকল্পনা এবং আন্দোলন- ইতিমধ্যে সকল কিছু পরিলক্ষিত হয়েছে। বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে নাশকতার কোনো পরিকল্পনা করে- তবে সে বিষয়টিও রুখে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তত রয়েছে। বস্তুত এসব করে কোনো ফলাফল পাবে না বিএনপি। বিএনপির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এবং অন্ততপক্ষে রাষ্ট্রক্ষমতার অংশবিশেষ হলেও দখল করা। সেখান থেকে কোনো অভিযোগ থাকলে তা বক্তব্যে প্রকাশ করা। তবে এখন দেখার বিষয় হচ্ছে সাংগঠনিক শক্তি যাচাই করে কি ফলাফল পায় বিএনপি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭