ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন করতে পারবে আওয়ামী লীগ?


প্রকাশ: 26/03/2023


Thumbnail

গত ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু এই বৈঠকের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বলেছেন যে, বিএনপি হয়তো আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপির অবস্থা কি তা রহস্যময় বলেও প্রধানমন্ত্রী ওই সংসদীয় বৈঠকে মন্তব্য করেছেন। 

এখন প্রশ্ন হল যে, বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে এবং তাদের রহস্যময় আচরণ অব্যাহত রাখে তাহলে কি হবে? বিএনপিকে ছাড়া কি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে এবং সেই নির্বাচন কি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য হবে? সেটাই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় প্রশ্ন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এই প্রশ্নটিই এখন নতুন করে সামনে চলে এসেছে। 

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয়। প্রায় দেড়শ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হলেও ২০১৪ নির্বাচন শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় এবং নির্বাচনের ফলে গঠিত সরকার পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে। ২০১৮ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচনে যেভাবেই হোক বিএনপি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। মাত্র ৬ টি আসন নিয়ে তারা প্রথমে ঘোষণা করেছিল যে, সংসদে যাবে না, শপথ গ্রহণ করবে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা শপথ গ্রহণ করে এবং সংসদে যোগদান করে। এবার বিএনপির পক্ষ থেকে আবার ২০১৪ সালের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তারা বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছাড়া তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আর সেটি যদি বিএনপি না করে তাহলে সেই নির্বাচনের অবস্থা কি হবে? 

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এবার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানামুখী চাপ এবং পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এখন থেকে সরব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুস্পষ্টভাবে বলছে আগামী নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ। অংশগ্রহণমূলক বলতে তারা প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ অর্থাৎ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির অংশগ্রহণের কথা বলেছে। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে, শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেই নির্বাচন কি হতে পারবে? ২০১৪ এর মতো পরিস্থিতি কি আবার তৈরি করা সম্ভব হবে?

অন্যদিকে অবশ্য ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনকে একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নির্বাচনে কে অংশগ্রহণ করলো, না করলো সেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর এখান থেকেই আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে একটি রূপ পরিকল্পনা তৈরি করছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তিনটি পথ খোলা রেখেছে।

বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ অংশগ্রহণ করবে: আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন, বিএনপি হয়তো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং সেই নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিয় বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পেয়েছেন যে, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। কাজেই বিএনপিকে বাদ দিয়ে হয়তো আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। 

বিএনপির একটি অংশকে নিয়ে নির্বাচন করা: আওয়ামী লীগ সাম্প্রতিক সময়ে ছয়টি উপনির্বাচনে উকিল ফর্মুলা ব্যবহার করেছিল। বিএনপির থেকে দলছুটদেরকে স্বতন্ত্রভাবে বা অন্য কোন ভাবে দাঁড় করিয়ে নির্বাচনকে একটা আবহ তৈরী করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির মধ্যে মতবিরোধ আছে সত্যি কিন্তু বিএনপির কেউ এখন দলছুট হয়ে  নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। কাজেই বিএনপিকে ভেঙে যে নির্বাচন করার পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছিল সেই পরিকল্পনা ক্রমশ ফিকে হয়ে গেছে।

স্ব স্ব অবস্থান থেকে নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সামনে এখন সবচেয়ে বড় যে বিকল্পটি রয়েছে তা হলো নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যে যার অবস্থান থেকে অংশগ্রহণ করবে। কোনো জোট হবে না এবং তার ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো নির্বাচন হবে না এবং নির্বাচন হবে প্রতিযোগিতামূলক। কিন্তু এরকম নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা এবং গ্রহণযোগ্য না হলে তারা কি করবে সেটি এখনও অমীমাংসিত প্রশ্ন। তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে  বিএনপিকে ছাড়াই যদি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয় তাহলে এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। তবে আওয়ামী লীগ মনে করছেন, বিনা ভোটে নির্বাচনের প্রক্রিয়া থেকে আওয়ামী লীগকে সরে আসতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭