ইনসাইড পলিটিক্স

রাজনৈতিক উত্তেজনা: টার্গেট সেপ্টেম্বর


প্রকাশ: 26/03/2023


Thumbnail

মনে করা হয়েছিল চলতি রমজান মাসে বিএনপি আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি দেবে না। ঐতিহাসিকভাবে এবং ঐতিহ্যগতভাবে রমজান মাসে কোন রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করে না। কিন্তু এবার বিএনপি ব্যতিক্রম ঘটালো। রমজান মাসেও বিএনপির বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। প্রতি শনিবার ধরে ধরে বিএনপি ঢাকা এবং সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং অবস্থানসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্য দিয়ে রমজান মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি না করার সংস্কৃতি ভাঙলো বিএনপি।

যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর সমালোচনা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেতারা বলছেন, রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করছে বিএনপি। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা এতে উল্লসিত। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কর্মসূচি থেকে সরে এলেই রাজনৈতিক আবেদন নষ্ট হয়ে যাবে। আর এ কারণেই বিএনপি অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, সেপ্টেম্বর মাসকে টার্গেট করে তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই সময়ের মধ্যে তারা একটি বড় পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সংকটকে একটা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায়। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগও মনে করছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন নিয়ে যে সংকট, অনিশ্চিয়তা সেটি তারা দূর করতে চান এবং তারা দেশকে একটি নির্বাচনী মহাসড়কে তুলতে চান। যেখানে নির্বাচনমুখী রাজনীতি হবে প্রধান বিষয়। আর আওয়ামী লীগ-বিএনপির এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান সেপ্টেম্বরে রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করবে এবং চূড়ান্ত পরিণতি তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি আন্দোলনের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা সিরিয়াস এবং আগামী নির্বাচনে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছাড়া অংশগ্রহণ করবে না। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদেরকে যে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিল সেই বৈঠকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে। একদিকে তারা দলকে সঙ্গবদ্ধ করতে যাচ্ছে, দলের মধ্যে যারাই অন্য কোন দিকে নজর দিচ্ছে বা সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্য গোপন যোগাযোগ করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এতোটুকু কাপর্ণ্য বোধ করছে না। এর অংশ হিসেবে তারা শওকত মাহমুদকে বহিস্কার করেছে। এর মাধ্যমে আরও নেতাদেরকে বার্তা দেয়া হয়েছে। যারাই দলের অবস্থানের বিপরীতে কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণে কুণ্ঠিত হবে না দলটি। পাশাপাশি বিএনপি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সঙ্গেও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে। অন্যদিকে বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গেও নিবিড় ভাবে যোগাযোগ রাখছে। 

বিএনপি মনে করছে, এই ধারা যদি তারা অব্যাহত রাখতে পারে তাহলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সেপ্টেম্বর নাগাদ একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আওয়ামী লীগ সরকার অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়বে। এখান থেকেই তারা আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বিএনপির নেতৃবৃন্দ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন এই কারণে যে, তারা মনে করছেন সাম্প্রতিক সময়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য বেড়েছে, কর্মীরা এখন যেকোন মূল্যে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে প্রস্তুত। এটিকে বিএনপি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনে করছে, পরিস্থিতিকে সামাল দেয়ার মত যথেষ্ট ক্ষমতা তাদের রয়েছে। আওয়ামী লীগ হিসাব করছে সেপ্টেম্বর নাগাদ দেশে নির্বাচনী রাজনীতির চিত্র প্রস্ফুটিত হয়ে উঠতে পারে। এই সময়ের মধ্যে কারা কারা নির্বাচনে 
অংশগ্রহণ করছে এবং কারা কারা করবে না তা সুস্পষ্ট হতে পারে। আওয়ামী লীগ মনে করছে এই সময়ের মধ্যে যদি নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল চলে আসে বিশেষ করে কোনো চমকের সৃষ্টি হয় তাহলে পরে পুরো দেশ নির্বাচনের মুখে যাবে। তাহলে পরে বিএনপির আন্দোলনে আর কোন গতি থাকবে না এবং দেশে একটি নির্বাচনী আবহাওয়া তৈরি হবে। তবে নির্বাচন হবে নাকি রাজনৈতিক আন্দোলন তীব্র হবে সেটিই এখন দেখার বিষয়। কৌশলের খেলায় কে জিতবে? আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭