ইনসাইড পলিটিক্স

ফখরুলকে হিরো বানাচ্ছে কারা?


প্রকাশ: 26/03/2023


Thumbnail

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন তিনি একটি অগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ নয় এবং সে সময় তিনি দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতাও ছিলেন না। আর সেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন বিএনপির প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবং প্রায় জাতীয় নেতার মর্যাদা পেতে চলেছেন। ১/১১-এর সময়ে তার বিতর্কিত রহস্যময় ভূমিকা ছিল, স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের এই সন্তানকে এখন অনেকেই দেশের দ্বিতীয় প্রধান নেতা হিসেবেই স্বীকৃতি দিচ্ছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে হিরো বানাচ্ছে। আর তাকে হিরো বানানোর পেছনে আওয়ামী লীগের অবদানও কম নয়। কারা কিভাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হিরো বানাচ্ছেন? 

আওয়ামী লগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতিনিয়ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছেন, ব্যক্তিগতভাবে তার চরিত্রহনন করছেন, ব্যক্তিগতভাবে তাকে নিয়ে ঠাট্টা উপহাস করছেন। রাজনীতিতে এই সংস্কৃতিগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। আর এটি গ্রহণযোগ্য নয় জন্যই সাধারণ মানুষের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্যাপারে সহানুভূতি তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের মতো বড় দলের সাধারণ সম্পাদক যখন প্রতিনিয়ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম ধরে তাকে সমালোচনা করেন। তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। আদতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির দ্বিতীয় সাড়ির নেতা ছিলেন। ২০০৮ সালের ১/১১-এর সময়ে তিনি এবং তার আত্মীয়রা সংস্কারপন্থী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একটি জটিল পরিস্থিতিতে তাকে দলের মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কিংবা মির্জা আব্বাস বা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মতো নেতাদের কাতারে এখনও ওঠতে পারেননি। বরং তিনি দ্বিতীয় সাড়ির নেতা হিসেবেই পরিচিত। 

কিন্তু দলের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল না, তার বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল না এবং তার নেতৃত্ব নিয়ে নানা রকম বিতর্ক এবং প্রশ্ন ছিল। কিন্তু সেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্রমে ক্রমে দলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন, গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেছেন। এর একটি বড় কারণ আওয়ামী লীগ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতারা অন্য নেতাদের চেয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বেশি আক্রমণ করে তাকে জনসমক্ষে আলোচনায় আনছেন। এই কারণটি ছাড়াও বিএনপির রাজনৈতিক মেরুকরণও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হিরো বানানোর ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখছে বলে জানা গেছে। বিএনপিকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার মহাসচিব থাকা অবস্থায় বিএনপিতে বড় ধরনের ভাঙন ঘটেনি। সাধারণ কর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা না থাকলেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাদের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করেছেন এবং তারেকের একান্ত অনুগত বাধ্যগত হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছেন। আর এ কারণেই তিনি আস্তে আস্তে দলের ভেতর গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন এবং এখন তিনি দলের প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন। 

এছাড়া বিভিন্ন গণম্যাধ্যম এবং সুশীলদের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি সুসম্পর্ক থাকার কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একটি ইতিবাচক ভাবে উপস্থাপনের একটি চেষ্টা লক্ষ্য করা যায় গণমাধ্যমে। বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অতীত ভূমিকাগুলোকে এড়িয়ে, তাকে বিএনপির বিকল্প নেতা হিসেবে উপস্থাপনের একটি চেষ্টা মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোতে লক্ষ্য করা যায়। আর সর্বশেষ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাকপটু এবং অন্যান্য নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ফখরুল এখন বিএনপির প্রধান নেতায় পরিণত হয়েছেন। আর এটি কি কোনো পরিকল্পনা হিসেবে তাকে বানানো হয়েছে যে, মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে বিএনপি যদি নির্বাচনে যায়, তাহলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় অথবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার বাইরে গিয়ে কোনো অবস্থান নেন, সেই অবস্থান স্বীকৃত হয়, এ রকম একটি চিন্তা থেকেই কি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হিরো বানানো হচ্ছে?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭