ইনসাইড পলিটিক্স

১৪ দলের অসন্তোষ ঠেকাতে ব্যর্থ আমু!


প্রকাশ: 27/03/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন দলই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারার কারণে ক্ষমতার পালাবদলে এবং সরকার গঠনের ক্ষেত্রে শরিক দলগুলোর উপর নির্ভরশীলতা দেখা দেয়। তারই ফলশ্রুতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১৪ দলীয় জোট এবং বিএনপি সমর্থিত ১৮ দলীয় মহাজোট গঠন করা হয়েছিল। কার্যত বিএনপি মহাজোট ভেঙ্গে দিলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১৪ দল এখনও বলবৎ রয়েছে। এই ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলে জানিয়েছে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র। 

তবে সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে এখন কেবলই অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। শরিক দলগুলোর অসন্তোষ থেকেই ১৪ দল থেকে শরিক দলগুলো সরে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টনের দাবিতে সোচ্চার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা। প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগেই বিষয়টি ‘ফয়সালা’র আশ্বাস দিলেও অন্য শরিকরা তাতে আস্থা পাচ্ছে না। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) মধ্যেও ছড়িয়েছিল অসন্তোষের ডালপালা। তবে সম্প্রতি বিএনপির রুমিন ফারহানার পদত্যাগে শূন্য হওয়া জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে ইনু স্ত্রী আফরোজা হক রীনাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করায় এই অসন্তোষ নিবারন হয়েছে।  

তবে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর একটি সংবাদ সম্মেলন করে ১৪ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন জাসদ (একাংশ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। তিনি বলেন, ‘১৪ দলের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ১৪ দলীয় জোট এখন ভাইরাস প্ল্যাটফর্ম। ওখানে সব দল এখন আওয়ামী লীগের কাজ করে। ১৪ দলের শরিক অন্য দলকেও ওখান থেকে সরে এসে গণতন্ত্রের পথে ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ ১৭ বছর পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায় জাসদের এই অংশটি। 

সূত্রগুলো বলছে, যদিও ১৪ দলের মুখপাত্র এবং সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলছেন, ‘১৪ দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে। ১৪ দলের ঐক্য ছিল, আছে, থাকবে।’ তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য ১৪ দলের অসন্তোষ ঠেকাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত মুহাম্মদ নাসিম যখন ১৪ দলের সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন, তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এই জোটে কখনও অসন্তোষ দেখা যায়নি। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্তও ১৪ দলীয় জোটে খুব একটা অসন্তোষ চোখে পড়েনি। 

এদিকে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক হলেও সেই জোট এবং সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করে আবারও আলোচনায় এসেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতা তিনি। পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য। জোট রাজনীতি, আগামী নির্বাচন, বর্তমান সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন সময় তাকে সরকার বিরোধী বক্তব্যে সরব ভূমিকায় দেখা গেছে।  

চলতি বছরের শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। দলটির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছেন,  আপনারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের বলেছিলেন, ‘এক সঙ্গে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন, একসঙ্গে সরকার। আমাদের কোনও দাবি ছিল না। আপনারাই বলেছিলেন, একসঙ্গে আন্দোলন করেছি, নির্বাচনও করেছি। কিন্তু যখন সরকার গঠনের প্রশ্ন এলো, আমরা হোঁচট খেলাম। তারপরও আমরা পিছিয়ে থাকিনি। সেই ঐক্যকে চোখের মনির মতো রক্ষা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। ২০১৪ সালে যেসব সিট হাতুড়ি নিয়ে নির্বাচন করেছিলাম। ২০১৮ সালে ওই সিট আমাদের ভাগে এসেছিল। কিন্তু আমাদের বলা হলো, নৌকা নিয়ে নির্বাচন করুন। কিন্তু নির্বাচন করতে গিয়ে দেখলাম নৌকার মাঝিরাই নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। যেখানে জাতীয় পার্টিকে জিতিয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিভক্তি করেছে। এই নগ্ন খেলা আর যাই হোক জোটের রাজনীতি হতে পারে না।’

সূত্রমতে, ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ- হাসানুল হক ইনু), ওয়ার্কাস পার্টি (রাসেদ খান মেনন), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এম, এল- দীলিপ বড়ুয়া),  বাংলাদেশ গনতন্ত্রী পার্টি (নুরুর রহমান সেলিম),  গন আজাদী লীগ (হাজি আবদুস সামাদ),  বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বিএসডি- রেজাউল রশিদ খান), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র (জাকির হোসেন),  কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ (সিপিবি), গণফোরাম (ড.কামাল হোসেন), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ),  শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ- মোজাফফর আহমেদ)। কিন্তু গত একাদশ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম ১৪ দল ছেড়ে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিলেন। অর্থাৎ ১৪ দলে তার গণফোরাম এখন আর নেই।    

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন বাস্তবতা হচ্ছে, রাজনীতি বলেন আর নির্বাচন বলেন- কোনো ক্ষেত্রেই জোটের বাইরে গিয়ে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। বিএনপি অনেকগুলো দল নিয়ে জোট করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এবং পশ্চিমবঙ্গেও জোট রাজনীতি ও জোটভিত্তিক নির্বাচন হচ্ছে। আসলে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে জোট একটা সাধারণ ‘বৈশিষ্ট্যে’ পরিণত হয়েছে। ফলে জোট ছেড়ে দেওয়া বা ভিন্ন কিছু ভাবা মুশকিল। নির্বাচন এগিয়ে আসায় এই অনাস্থা জোটের ঐক্যে কিছুটা হলেও সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

তারা আরও বলছেন, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনা, যা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে লালন করা হয়েছে, সেটার জন্যই ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। এখন জোট যদি সব সময়, সব পর্যায়ে কার্যকর না থাকে, তাহলে তো কিছু করার নেই। মূলত গত দুই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা শরিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। এখন দেখার বিষয় ১৪ দলীয় জোটের এই সঙ্কট মোকাবেলায় কি ব্যবস্থা নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭