ইনসাইড গ্রাউন্ড

তাসকিনের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে বাংলাদেশের জয়


প্রকাশ: 27/03/2023


Thumbnail

বৃষ্টিতে দেড় ঘন্টারও বেশি সময় খেলা বন্ধ থাকার পর শুরু হয় বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বৃষ্টিত খেলা বন্ধ হওয়ার আগে বাংলাদেশ করে ৫ উইকেটে ২০৭ রান। বেশ কিছুক্ষণ হালকা বৃষ্টিতে খেলা চালিয়ে গেলেও, বেগ বাড়লে খেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন দুই অন ফিল্ড আম্পায়ার। এরপর আর মাঠে নামা হয়নি বাংলাদেশের। আর আইরিশদের সামনে বৃষ্টি আইনে পরিবর্তিত লক্ষ্য দাড়ায় ৮ ওভারে ১০৪ রানের। ওভারপ্রতি প্রয়োজন দাড়ায় ১৩ রানের। টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত জয়ের দেখা পায়নি আয়ারল্যান্ড। ২২ রানের ব্যবধানে হেরে যায় আইরিশরা। এতে ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঝড়ো শুরু আইরিশদের। পরিবর্তিত প্লেয়িং কন্ডিশনে প্রথম ২ ওভার পাওয়ারপ্লে। নাসুম আহমেদের করা প্রথম ওভার থেকে ১৮ রান তুলে নেন দুই ওপেনার পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার। স্টার্লিংয়ের ৩টি বাউন্ডারির পর শেষ বলে আরো একটি বাউন্ডারি আসে অ্যাডায়ারের ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় ওভারেও সে ধারা অব্যাহত থাকে। মুস্তাফিজুর রহমানের করা ওভারটি থেকে ১৪ রান তুলে নেয় সফরকারিরা।

তবে তৃতীয় ওভারে সে চাপ সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন হাসান মাহমুদ। টানা তিনটি ডট দেয়ার পর চতুর্থ বলে স্টাম্প উপড়ে দেন রস অ্যাডায়ারের। শেষ দুই বল থেকে ৫ রান দেন এই তরুণ পেসার। পরের ওভারের প্রথম বলেই লরকান টাকারকে বোল্ড করেন তাসকিন আহমেদ। দুই বল পর অধিনায়ক পল স্টারলিংকেও একই ফাঁদে ফেলেন তিনি। পঞ্চম বলে জর্জ ডকরেলের উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন তাসকিন। এক ওভারে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে দলকে ম্যাচে ফেরান এই পেসার।

৫ম ওভারে হাসান ১৬ রান দিলেও পরের দুটি ওভারে সাকিব ও মুস্তাফিজের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে জয়ের সুবাস পেতে থাকে বাংলাদেশ। শেষ ওভারে আইরিশদের দরকার ছিলো ৩২ রানের। প্রথম বলে মিরাজের দুর্দান্ত এক ক্যাচে হ্যারি টেক্টরকে ফেরান তাসকিন। সে ওভার থেকে ৯ রান নিলে ২২ রানে জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। ২ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন এই পেসার। যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।

এর আগে, ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ব্যাট হাতে ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছে আইরিশ অধিনায়ক পল স্টারলিং। সাগরিকার উইকেট বিবেচনায় আগে বোলিং এর সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান স্টারলিং। তবে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা দেখাতে পারেন নি আইরিশ বোলাররা।

দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদারের ব্যাটে ভর কর দুর্দান্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। হ্যারি টেক্টরের প্রথম ওভারে থেকে তুলে নেন ১১ রান। পরের ওভারে আরো মারমুখি হয়ে উঠেন দুই ব্যাটসম্যান। মার্ক অ্যাডায়ারের সে ওভার থেকে আসে ১৪ রান। 

রনি কিছুটা দেখেশুনে খেললেও শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন লিটন। চতুর্থ ওভারে বল করতে এসে ১৬ রান দেন ক্রেইগ ইয়ং। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তান্ডব চালান রনি। নির্ধারিত ৬ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাড়ায় ৮১ রান। যা পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। এর আগে ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬ রান ছিলো সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

পরের ওভারেও রান তোলার গতি ধরে রাখে বাংলাদেশ। লেগ স্পিনার বেন হোয়াইটের ওভার থেকে ১০ রান তুলে নেন লিটন-রনি। তবে সপ্তম ওভারের প্রথম বলে বাজে শট খেলার খেসারত দেন লিটন। ক্যারিগ ইয়ং এর বল উড়িয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে ঠিকমতো মেলাতে পারেন নি। ব্যক্তিগত ৪৭ রানের সময় মিড অফে সহজ ক্যাচ দেন পল স্টারলিং এর হাতে। ৯১ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

লিটন বিদায়ে ক্রিজে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুতেই হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেন নি। ১১তম ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরে টানা দুটি ওয়াইডের পর লাইন ও লেংথ বদলে ফেলেন হ্যারি টেক্টর। পরের ডেলিভারিটি খেলতে ক্রিজ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে পরাস্ত হন শান্ত। স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে ১৪ রান করে ফেরেন সাজঘরে। ১১৮ রানে বাংলাদেশ হারাল দ্বিতীয় উইকেট।

তবে একপ্রান্ত থেকে তান্ডব চালাতে থাকেন রনি তালুকদার। মাত্র ২৪ বল থেকে ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটি। যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি। আরেক প্রান্তে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। তবে দ্রুত গতিতে রান তুলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন রনি তালুকদার। ১৪তম ওভারের শেষ বলে গ্রাহাম হিউমের ফুল লেংথের বলটির লাইন বুঝতে পারেন নি রনি। বল সরাসরি আঘাত হানে স্টাম্পে। ১৫৪ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন হয় বাংলাদেশের। ৩৮ বলে ৭ চার ও ৩ ছয়ে ৬৭ রান আসে রনির ব্যাট থেকে।

তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে ভালই এগোচ্ছিলেন শামীম হোসেন। বড় শট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েছিলেন কার্টিস ক্যাম্ফারের হাতে। তবে শরীরের ভার রাখতে না পেরে শেষ মুহুর্তে ক্যাম্ফার বল ছেড়ে দিলে জীবন পান শামীম। তবে সেটি কাজে লাগাতে পারেন নি এই বাঁ-হাতি। দলীয় ১৭২ রানে মার্ক অ্যাডায়ারের বলে দুর্বল শট খেলে এক্সট্রা কাভারে ধরা পড়েন পল স্টার্লিং এর হাতে। করেন ২০ বলে ৩০ রান।

ক্রিজে এসেই অ্যাডায়ারকে স্ট্রেইটে চার মেরে রানের খাতা খোলেন সাকিব আল হাসান। দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন তিনি। তাতে বড় সংগ্রহের দিকে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে ক্রেইগ ইয়ংকে ছয় মেরে দলীয় ২০০ রান পূর্ণ করেন তৌহিদ হৃদয়। তবে এরপরের বলেই ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে। বাংলাদেশের ইনিংসের ৪ বল বাকি থাকতে বৃষ্টির কারণে বন্ধ হয়ে যায় খেলা।

টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের চতুর্থ দুইশো ছড়ানো স্কোর। হাতছানি ছিলো টি-টোয়েন্টিতে আগের সর্বোচ্চ কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা ৫ উইকেটে ২১৫ রান টপকে যাওয়ার। বে-রসিক বৃষ্টি বাঁধ না সাঁধলে তা হতেও পারতো।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭