ইনসাইড গ্রাউন্ড

ওপেনিংয়ের দুর্ভাবনা কি কাটবে বাংলাদেশের?


প্রকাশ: 28/03/2023


Thumbnail

এখনো হাঁটি হাঁটি পা পা করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পথ চলছে বাংলাদেশ। তবে শুরুটা কিন্তু ছিলো বেশ আশা জাগানিয়া। ২০০৭ সালে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে প্রথম বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে চমক দেখিয়েছিলো বাংলাদেশ। তবে শুরুর সে স্বপ্ন সময়ের সাথে সাথে ম্লান হয়েছে। এই ফরম্যাটে দলের কঙ্কালসার বেরিয়ে আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেটের নবীনতম দল আফগানিস্তানের উন্নতিও সে তুলনায় চোখে পড়ার মতো। তবে চলতি বছর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দিন বদলের আগমনী বার্তা দিচ্ছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটির আগে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পর প্রথম সিরিজ খেলতে নেমেই হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে জশ বাটলারের দল।

যা টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা অর্জন। ঘরের মাঠে উইকেট ও কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের মতো দলকেও টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে ইংলিশদের বিপক্ষে সেই সিরিজে তেমন কিছু দেখা যায়নি। স্পোর্টিং উইকেটে খেলে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়েই জয় তুলে নিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। 

এই সংস্করণে বাংলাদেশের বড় দুর্ভাবনার জায়গা ছিলো উদ্বোধনী জুটি। তামিম ইকবালের অবসরের পর এই দুশ্চিন্তা আরো বেড়েছে। কোন থিতু উদ্বোধনী জুটি এখনো পায়নি বাংলাদেশ। ২০২২ সালে ২১টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। সেখান ৯ জন ওপেনারকে নানা সময়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানো হয়েছে। কিন্তু আসেনি কাঙ্খিত সাফল্য। ৯ জন ওপেনারের মধ্যে ৩ জন ছাড়া কেউই একশো রানের কোটা পার করতে পারেন নি। ৮ ম্যাচ খেলে ২৪৮ রান নিয়ে সবার উপরে ছিলেন লিটন দাস। সমান সংখ্যক ম্যাচ থেকে ২৩৬ রান করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মেক শিফট ওপেনারের দ্বায়িত্ব দিয়ে উপরে পাঠানো মেহেদী মিরাজ ৫ ম্যাচে করেছেন ১১১ রান। বাকিদের কেউই পঞ্চাশ রানও তুলতে পারেন নি।

এই তিনজন ছাড়া উদ্বোধনী জুটিতে সুযোগ পাওয়াদের তালিকায় থাকা মুনিম শাহরিয়ার ৫ ম্যাচে করেছেন ৩৪ রান। তার থেকে এক ম্যাচ কম খেলে সমান সংখ্যক রান তুলেছেন এনামুল হক বিজয়। দীর্ঘ বিরতির পর দলে ফিরে সৌম্য সরকার করেন ৪ ম্যাচ ৩৩ রান, সাব্বির রহমান ৪ ম্যাচ ৩১, নাঈম শেখ ৩ ম্যাচ ২১ ও এক ম্যাচ খেলা পারভেজ হাসান ইমনের ব্যাট থেকে এসেছিলো মাত্র ২ রান। সব মিলিয়ে ৯ জন ওপেনারের মধ্যে লিটন-শান্ত-মিরাজ ছাড়া সবার গড় ১০ এর নিচে। এই তিনজনের সাথে শুধুমাত্র সৌম্য সরকারের স্ট্রাইক রেট ছিলো একশোর বেশি।

গত বছর ১০টি ভিন্ন ভিন্ন ওপেনিং জুটি দেখা গেছে বাংলাদেশ দলে। যার মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি ছিলো একটি, ভারতের বিপক্ষে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের কাছে থেকে এসেছিলো মাত্র ৪টি ফিফটি। সমান দুটি করে অর্ধশতক রানের ইনিংস এসেছিলো লিটন ও শান্তর ব্যাট থেকে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩টি ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১টি ম্যাচ। এর মধ্যে দুটি ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস দেখা গেছে উদ্বোধনী জুটিতে। দুটি ফিফটি এসেছে ওপেনারদের কাছ থেকে। গত বছর পুরো সময়ে যে সংগ্রাম ছিলো চোখে পড়ার মতো, চলতি বছর যেন শুরু হয়েছে মুদ্রার বিপরীত দিক থেকে। আর তাতেই নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে টাইগার শিবিরে।

যেখানে গত বছর টি-টোয়েন্টিতে রানের অভাবে ধুঁকতে হয়েছে ওপেনারদের। সেখানে এবার ৪ ম্যাচেই মানসিকতার বদল দেখিয়েছেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার। ৪ ম্যাচ থেকে ১৪১ রান এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে। স্ট্রাইক রেট ১৪২ ও গড় ৩৫। দীর্ঘ ৮ বছর পর জাতীয় দলে ফিরেছেন রনি। গতকাল আইরিশদের বিপক্ষে খেলেছেন ৩৮ বলে ৬৭ রানের ঝড়ো ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খুব বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও টি-টোয়েন্টির ইনটেন্ট দেখিয়েছেন স্পষ্টভাবেই। ৪ ম্যাচে ১৩৭ স্ট্রাইক রেট ও ৩০ গড়ে ১২১ রান করেছেন রনি তালুকদার।

ইংল্যান্ডকে হারানোর পর এই সংস্করণে দিন বদলের আগমনী বার্তা দিয়েছিলো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও সে ধারা অব্যাহত ছিলো। মাত্র ৪টি ইনিংসেই লিটন-রনির উদ্বোধনী জুটি নজর কেড়েছে সকলের। যে ওপেনিং পজিশন নিয়ে এত সংগ্রাম, এত পরীক্ষা-নীরিক্ষার পরও ফল পায়নি দল, সেখানেই তারা দেখাচ্ছেন নতুন দিগন্তের আলো। তাতে আরো একবার আশায় বুক বেঁধেছে দল থেকে বোর্ডসহ ভক্ত-সমর্থকরা সকলেই। সবার মুখে ঘুরে ফিরছে একটাই প্রশ্ন- ওপেনিংয়ের দুর্ভাবনা কি কাটবে বাংলাদেশের?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭