ইনসাইড গ্রাউন্ড

বোলারদের পর স্টারলিংয়ের নৈপূন্যে ধবলধোলাই এড়ালো আইরিশরা


প্রকাশ: 31/03/2023


Thumbnail

ওয়ানডে সিরিজের পর পুরো টি-টোয়েন্টি সিরিজেই আধিপত্য দেখিয়ে আসছিলো বাংলাদেশ। স্বভাবতই এ ম্যাচে তাই প্রত্যাশাটা বেশিই ছিলো স্বাগতিকদের কাছে। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে ছিলো আরেকটি সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশের হাতছানি। আর আইরিশদের জন্য ছিলো ঘুরে দাড়ানোর পরীক্ষা। বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে মুদ্রার উল্টো পিঠের দেখা পেয়েছে উভয়ই। বাংলাদেশকে হতাশায় ভাসিয়ে ৭ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে আয়ারল্যান্ড।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভাল হয়নি বাংলাদেশের। এদিনও ইনিংসের শুরু থেকে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে থাকে দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার। দুজনই ফিওন হ্যান্ডের করা প্রথম ওভার থেকে একটি করে বাউন্ডারি তুলে নেন। তবে মার্ক অ্যাডায়ারের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে বড় শট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের কাছাকাছি জর্জ ডকরেলের হাতে ধরা পড়েন লিটন। ৯ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। পরের ওভারের শেষ বলে হ্যারি ট্যাক্টরের বলে ক্যাম্ফারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত।

তৃতীয় ওভারে ক্যাম্ফারের শিকারে পরিণত হয়ে রনি তালুকদার প্যাভিলিয়নের পথ ধরলে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় স্বাগতিকরা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয় বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বাজে শট খেলার খেসারত দিয়ে ফিরেছেন দুজনই। দলীয় ৪১ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সাকিব। পরের ওভারে স্কোরবোর্ডে কোন রান না যোগ করেই অধিনায়ককে অনুসরণ করে ডাগআউটে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়। 

আগের দুই ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে রান বন্যা বইয়ে দিলেও, টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ধুঁকতে থাকে স্বাগতিকরা। ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। অভিষিক্ত রিশাদ হোসেনকে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন শামীম হোসেন। কিন্তু ১০ম ওভারে এসে চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দেখে বাংলাদেশ। সে ওভারের প্রথম বলে রিশাদকে বোল্ড করেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া ম্যাথিউ হামফ্রিস। ক্রিজে এসে এক বল পরেই বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন তাসকিন আহমেদ। হামফ্রিসের জোড়া আঘাতে বড়  সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের।

একপ্রান্ত থেকে সতীর্থদের আশা যাওয়া দেখছিলেন শামীম। নাসুম আহমেদকে নিয়ে জুটি গড়ে দলকে টেনে নিতে থাকেন তিনি। অষ্টম উইকেটে এই দুজনের জুটিতে ভর করে একশোর নিচে অলআউট হওয়ার লজ্জা থেকে বাঁচে স্বাগতিকরা। স্কোরবোর্ডে ৩৩ রান যোগ করেন দুজনে। যা পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। ১৬তম ওভারে প্রথমবারের মতো গ্যারেথ ডিলানিকে বোলিংয়ে আনেন স্টারলিং। প্রথম বলেই মিড অফে স্টারলিং এর হাতে ক্যাচ দেন নাসুম। সে ওভারের শেষ বলে দলীয় শতরানের দেখা পায় বাংলাদেশ।

১৭তম ওভারে দলের রান যখন ১০৪ তখন মার্ক অ্যাডায়ারের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন সিরিজে প্রথমবার খেলতে নামা শরিফুল। তাতে সম্মানজনক স্কোরের আশাতেও শঙ্কার কালো মেঘ ঝড়ো হয়। পরের ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে রিভার্স সুইপে দারুণ এক ছয় মারেন শামীম হোসেন। কিন্তু ওয়াইড লাইন লেন্থে বল করে তাকে হাত খুলে খেলতে দেয়নি আইরিশ বোলাররা। যোগ্য সঙ্গের অভাবে একাই যুদ্ধ করতে থাকেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। ৪০ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটি। তার ৫১ রানের ইনিংসে ভর করে লড়াইয়ের সংগ্রহ পায় টাইগাররা। তবে চার বল বাকি থাকতেই শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। জয়ের জন্য আয়ারল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাড়ায় ১২৫ রানের।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় দ্রুত গতিতে রান তুলেছে আয়ারল্যান্ড। প্রথম দুই ওভার থেকে ১৫ রান তুলে নিয়ে আগ্রাসী ক্রিকেটের বার্তা দেন দুই ওপেনার পল স্টারলিং ও রস অ্যাডায়ার। তৃতীয় ওভারে তাসকিন আহমেদ দারুণ এক ইয়র্কারে অ্যাডায়ারকে বোল্ড করে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন। দলীয় ১৭ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। এরপর লরকান টাকারকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন আইরিশ অধিনায়ক স্টারলিং। পুরো সিরিজে তার ব্যাট না হাসলেও আজ রানের দেখা পেয়েছেন তিনি। স্পিনার-পেসার উভয়ের বিপক্ষেই আক্রমণাত্নক ব্যাটিং করতে থাকেন স্টারলিং।

ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা শরিফুলকে আক্রমণে আনেন সাকিব। বল হাতে নিয়েই লরকান টাকারকে ফেরান শরিফুল। দারুণ এক আউট সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। পাওয়ার প্লের নির্ধারিত ৬ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ দাড়ায় ২ উইকেটে ৪৭ রান।

পরের গল্পটা নিজের হাতে লিখেছেন স্টারলিং। তৃতীয় উইকেটে হ্যারি টেক্টরকে নিয়ে ৬৮ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের সুবাস এনে দেন। বোলারদের শাসন করে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২২তম হাফ সেঞ্চুরি। শরিফুলের করা ১১তম ওভার থেকে ২০ রান তুলে নিয়ে জয়কে সময়ের ব্যবধানে পরিণত করেন আইরিশ অধিনায়ক। তবে দল যখন জয় থেকে হাতছোঁয়া দুরত্বে তখন সাজঘরের পথ ধরেন স্টারলিং। অভিষিক্ত রিশাদের বলে আউট হওয়ার আগে ৪১ বলে ১০ চার ও ৪ ছয়ে খেলেন ৭৭ রানের ঝলমলে ইনিংস। টেক্টর ও ক্যাম্ফারের ব্যাটে বাকি পথটা সহজেই উতরে যায় আইরিশরা। তাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টিতে জয়ের দেখা পেলো আয়ারল্যান্ড। সেই সাথে ধবলধোলাইয়ের লজ্জা থেকেও বাঁচলো সফরকারিরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭