প্রকাশ: 31/03/2023
অপসাংবাদিকতা, সরকার বিরোধী অপপ্রচার, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিরর লক্ষ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্রদ্রোহি সংবাদ পরিবেশন করে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বিবৃতি প্রদান করিয়ে বার বারই পার পেয়ে যায় প্রথম আলো। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সংখ্যায় রাষ্ট্রবিরোধী, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিয়ে কটুক্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে আবারও সেই বিবৃতির ছকে বাঁধা ক্ষমতা প্রদর্শন করছে প্রথম আলো।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকাল থেকেই প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ বিশ্লেষনে দেখা যায়, সেই বিবৃতির ধারাবাহিকতার চীরচেনা ছক। এই ছকে বাঁধা দেশী-বিদেশী সংস্থা বা ব্যক্তিদের বিবৃতি ছাপিয়ে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান প্রমাণ করতে চাইছেন তিনি ক্ষমতাধর।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল ওশোনোগ্রাফিক কমিশনের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে বিদেশিদের মন্তব্য, বিবৃতি, হস্তক্ষেপ কখনোই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি, হবেও না। এগুলো আমলে নেওয়া জরুরি নয়।’
অন্যদিকে প্রথম আলোর এসব কর্মকাণ্ডকে অপসাংবাদিকতা ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করছেন সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ মহল। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ মহল বলছেন, যখনই তাদের (প্রথম আলোর) বিরুদ্ধে কোনো আইনী ব্যবস্থা বা অন্য কোনো কিছু করা হয়। তখনই তাদের সহযোগিতায় থাকা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় প্রথম আলো ও এর সম্পাদক মতিউর রহমান। যার কারণ হচ্ছে, এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিবৃতির মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করানো।
জানা গেছে, ২৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদনে প্রথম আলো ইচ্ছাকৃত এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘গ্রাফিক কার্ড’-এ একটি শিশুর ছবি দিয়ে ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করে। ওই সংবাদে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে- যা একটি দেশের ভাবমূর্তি ও অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এই অভিযোগে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং সংবাদ সংশ্লিষ্ট সাভার প্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এ সংক্রান্ত দুটি মামলা হলেও একটি মামলায় ওই প্রতিবেদক সামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সর্বশেষ কাশিমপুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞ মহল বলছেন, প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধিকে সিআইডি আটক করার পর থেকেই দৈনিকটির সেই চীরচেনা বিবৃতির ছক প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। গত দু’দিন থেকে প্রথম আলো পত্রিকায় যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তার অধিকাংশই এসব বিবৃতির সংবাদ এবং সরকারের প্রতি আক্রোসমূলক।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা এবং শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ, ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। তারা বলেছে, এ ধরনের মামলা ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে। এছাড়া, প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন সম্পাদক পরিষদ, নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (নোয়াব) বিভিন্ন মানবাধিকার, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে সংবাদকর্মীরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘সাংবাদিক গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনায় বিদেশীদের মন্তব্য বা বিবৃতি সরকারের জন্য বাঁধার কারণ নয়। এ ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে ন্যূনতম আঁচড়ও পড়বে না। আদালতের রায়ে যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগের দিন বা পরেরদিন একটি করে ফ্যাক্স পেতাম আমরা। তারা পাঠিয়ে এটাও বলতেন যে, এটা তাদের পলিসিতে নেই। কিন্তু পাঠাতে হয়। আমরা তোমাদের (বাংলাদেশ) ‘গ্রাউন্ড রিয়ালিটি’ (বাস্তব অবস্থা) বুঝি। সুতরাং এটা আমাদের গ্রাউন্ড রিয়ালিটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান- এটি এত ঠুনকো নয় যে, যে কোনো কিছুর সঙ্গে এটির তুলনা করা যাবে। আমাদের সবার দায়িত্ববান হওয়ার প্রয়োজন আছে।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় সবারই কমবেশি চ্যালেঞ্জ আছে। যে দেশগুলো বিবৃতি দেয়, সেখানে আইন করা হয়েছে যে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ির পথরোধ করে দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলে সাত বছরের জেল হবে। সে দেশেও আইন পরিবর্তনের জন্য মানুষ রাস্তায় নামছে।’
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭