প্রেস ইনসাইড

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি


প্রকাশ: 01/04/2023


Thumbnail

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকার শাহবাগে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রথম আলো এবং মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হবে, ততক্ষণ আমাদের এই আন্দোলন চলতে থাকবে। 

শনিবার (১ এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান নিয়ে তারা যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তারা। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’- ব্যানারে এই কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।


এদিকে শনিবার (১ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন নিয়ে তামাশা করা কোনো ভুল নয়, এটি ফৌজদারি অপরাধ। দেশি- বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা আরও একটি পঁচাত্তর তৈরি করতে চাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য আগামী নির্বাচন ভণ্ডুল করে অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত করা। স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর সংবাদ সে ষড়যন্ত্রেরই অংশ।’

যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইফতারের দাওয়াত দিয়ে সাংবাদিকদের বেধড়ক পিটিয়ে বিএনপি দোষ চাপায় আওয়ামী লীগের ওপর। প্রথম আলো আর বিএনপি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। তাদের টার্গেট হলো সরকার।’


অন্যদিকে, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘শিশুর নামে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে অসত্য সংবাদ পরিবেশন’র বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং দেশের টিভি চ্যানেল, বেতার, সংবাদপত্র ও অনলাইন গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সম্মিলিত সংগঠন এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ। শুক্রবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এবং এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু ও সাধারণ সম্পাদক ইনাম আহমেদ স্বাক্ষরিত পৃথক দু’টি  বিবৃতি দেন।

এছাড়াও, প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিবেদক ও পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর একাধিক বিদেশি গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিদেশি এ সমস্ত গণমাধ্যম বলছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রতিবেদক শামসুজ্জামান এবং মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে এবং এই সংবাদের প্রতিবেদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথম আলো প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়- ভুল, অসত্য এবং ‘পলিটিক্যালি মোটিভেটেড’, উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রতিবেদন করার কারণে। যে বিষয়টি বিদেশি গণমাধ্যমগুলো উল্লেখ করেনি। কেননা রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজারের প্রগতি ভবনে অবস্থিত প্রথম আলো অফিস থেকে এ সকল বিদেশি গণমাধ্যমে ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ পাঠানো হয়েছে এবং এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরেই বিদেশি গণমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। সূত্রটি বলছে, প্রথম আলো অফিস থেকে বিদেশি গণমাধ্যমুগলোতে ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ পাঠানোর কাজে সহযোগিতা করেছেন প্রথম আলোর বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সংবাদকর্মী। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মূলত একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের সাবেক সংবাদকর্মী, এখন প্রথম আলোতে কর্মরত; তিনি এবং তার বেশ কিছু সহযোগী মিলে প্রথম আলো অফিস থেকে এ সকল বিদেশি সংবাস মাধ্যমে এবং কূটনৈতিক পাড়ায়, বিশেষ করে সরকার বিরোধী বিভিন্ন মহলে চিঠি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। এছাড়াও দেশিয় বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিকে দিয়ে বিবৃতি প্রদান করানো এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা যেমন জাতিসংঘ, বিভিন্ন বিদেশি হাই কমিশনার, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার, পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকার বিরোধী চিঠি এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে তাদেরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল বোঝানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন তারা। এসব করে সরকারকে একটি চাপে ফেলার চেষ্টা করছেন তারা। এ ধরনের রাাষ্ট্রবিরোধী, সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড ফৌজদারি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ। যার মূলনায়ক হচ্ছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।          

এদিকে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের গ্রেপ্তারের দাবিতে শাহবাগে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামান সামিসহ বেশ কয়েকজন বক্তব্য রাখেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবারও একই দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সে সময় উপস্থিত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।

স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চে প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক সংবাদ প্রতিবেদনের জেরে গত বুধবার ভোররাতে সিআইডি পরিচয়ে ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে তার সাভারের বাসা থেকে আটক করা হয়। পরে ওই প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা ও জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে সেই রাতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয় শামসের বিরুদ্ধে। পরে আরেকটি মামলা হয়, সেই মামলায় শামসের সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদককেও আসামি করা হয়।

সেই মামলায় শামসকে কারাগারে পাঠানোর পর এখন মতিউর রহমানকেও গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’- ব্যানারে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। শনিবারের এই কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ নেতা জামান সামি বলেন, ‘তারা (প্রথম আলো) সব সময়ই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এসব দেখে আমরা বসে থাকতে পারি না। আমরা এর বিচার চাই।’

শাহরিয়ার শহিদ শুভ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রথম আলো পাবলিক সেন্টিমেন্টকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করতে গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের দাবি, প্রথম আলোর লাইসেন্স বাতিল ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা।’

সমাবেশে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থী শাহ ইবনে সোয়াদ বলেন, ‘স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এই কাজ করা হয়েছে। এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।’

তানভীর মাহতাব নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রথম আলো বারবার এ ধরনের মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে। আমরা প্রথম আলোর এই মিথ্যা সংবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছি। আমরা প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

শুক্রবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, ‘করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সংবাদ যে মুহূর্তে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, সেই মুহূর্তে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সরকারের বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরা বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ধরনের সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি এবং সেইসঙ্গে উক্ত সংবাদপত্রসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায়  ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

এডিটরস গিল্ডের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত প্রথম আলোর বিতর্কিত প্রতিবেদনটি মহান স্বাধীনতাকে হেয় করার শামিল। এটি সাংবাদিকতার নামে এজেন্ডা বাস্তবায়নের ধারাবাহিক চেষ্টার অংশ। বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ সাংবাদিকতা নয়, অপসাংবাদিকতা। এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’

এদিকে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মামলা এবং শামসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং সাংবাদিক শামসকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে আসছে। এই প্রসঙ্গ ধরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ অবিলম্বে স্থগিত করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ফোলকার টুর্ক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭