প্রেস ইনসাইড

প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে ‘বলির পাঠা’ বানাচ্ছে প্রথম আলো


প্রকাশ: 01/04/2023


Thumbnail

গত বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর রাতে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি সংবাদের ঘটনায় দৈনিকটির সাভারে কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে আটক করে সিআইডি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকা আমবাগান থেকে তাকে আটক করা হয়। শামসুজ্জামান শামসকে আটক করার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দেশে- বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা তাদের নিজস্ব মতামত ফেইসবুক স্ট্যাটাসে প্রকাশ করেছেন। দেশের সাংবাদিকরাও এ থেকে বাদ যাননি। তারাও প্রকাশ করেছেন তাদের নিজস্ব অভিমত। 

কেউ বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হোক। আবার কেউ বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে হীন চক্রান্তে মেতেছে দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো, এর সম্পাদক মতিউর রহমান এবং এর দোসররা। তারা হীন এ ঘটনায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার এবং বিচার দাবি করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, মূলত বিএনপি এবং দোসরদের সরকার বিরোধী চক্রান্তের সূত্র ধরেই বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই এই ধরনের চক্রান্ত শুরু করেছেন মতিউর রহমান ও তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা প্রথম আলো। আর সরকার বিরোধী এই হীন চক্রান্তের শিকার হয়ে ‘বলির পাঠা’ হচ্ছেন প্রথম আলোর সাভারে কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস। মূলত প্রথম আলো শামসুজ্জামান শামসকে ‘বলির পাঠা’ বানাচ্ছে।  তবে প্রশ্ন ওঠেছে, কে এই শামসুজ্জামান শামস? শামস কেন সাংবাদিক? শামস কেন রাষ্ট্রদ্রোহি?  

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিবেদক নূর সিদ্দিকীর ফেইসবুক স্ট্যাটাস ধরে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া গেছে। নূর সিদ্দিকীর সেই ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি আবার কপি করে তার নিজস্ব ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়েছেন শবনম রসি নামের একজন নারী। তিন তার সেই স্ট্যাটাসে  নূর সিদ্দিকীর ক্রেডিটও উল্লেখ করেছেন।   

 

গত বুধবার (২৯ মার্চ) বেসরকারি টেলিভিশনটির বিশেষ প্রতিবেদক নূর সিদ্দিকী তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি, এমন খবর পেলাম আজ ভোর ৫টার দিকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগান এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়। হায় খবর! হায়!!

সাভারের আশুলিয়ার ভাড়া বাসা থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিরুদ্ধে। আজ বুধবার ভোর পাঁচটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকা আমবাগান থেকে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার ভোর চারটার দিকে তিনটি গাড়িতে মোট ১৬ জন ব্যক্তি শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। তাঁদের মধ্যে ৭-৮ জন বাসায় ঢোকেন। একজন শামসুজ্জামানের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাঁর ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুইটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। বাসায় ১০-১৫ মিনিট অবস্থান করার পর তাঁকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যান তাঁরা।’ 


নূর সিদ্দিকী আরও লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বটতলার নুরজাহান হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, শামসুজ্জামানসহ মোট ১৯ জন ব্যক্তি সাহরীর খাবার খান। ভোর পৌঁনে পাঁচটার দিকে বটতলা থেকে তাঁরা আবার শামসুজ্জামানের বাসায় যান। সিআইডির ব্যবহৃত দুইটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিলো (ঢাকা মেট্রো চ ৫৬-২৭৪৭ এবং ঢাকা মেট্রো জ ৭৪-০৩৩১) আরেকটিতে কোন নম্বর প্লেট দেখা যায়নি। দ্বিতীয়বার বাসায় যাওয়ার সময় আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজু সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় শামসুজ্জামানের বাসায় ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাসায় এসে তাঁরা জব্দ করা মালামালের তালিকা করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষের ভেতরে দাঁড় করিয়ে তাঁর ছবি তোলা হয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে আবার তাঁরা বের হয়ে যান। বাসা তল্লাশির সময় দুই বারই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন উপস্থিত ছিলেন।’ 

তুলে নেওয়ার সময় ওই বাসার মালিককে ডাকেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। পুলিশ তাঁকে জানায়, শামসুজ্জামানের করা একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নেওয়া হচ্ছে।’- স্ট্যাটাসে লিখেন নূর সিদ্দিকী। 


কে এই শামস!

নূর সিদ্দিকীর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে দেয়া তথ্যানুসারে, ‘শামসুজ্জামান শামস গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশের সহকারি কমিশনার- এসি রবিউল করিমের একমাত্র ছোট ভাই।’

নূর সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘শামস কেন সাংবাদিক? আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদক ছিলাম। পড়াশোনা শেষ মানে প্রথম আলোর ক্যাম্পাস রিপোর্টারের কাজও শেষ। তখন শামস প্রথম আলোতে কাজ শুরু করে। ক্যাম্পাসে কাজ করার সময় শামস অসাধারণ সব কাজ করেছে। আমি তো বলবো- প্রথম আলোই শুধু নয় সকল পত্রিকায়ই যতজন ক্যাম্পাস প্রতিনিধি হিসেবে এ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগরে কাজ করেছেন শামস তাদের সবার সেরা। আমি মুগ্ধ হতাম ওর কাজে। পড়াশোনা শেষ করে শামস ঢাকায় এসে দৈনিক বণিক বার্তায় নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কাজ শুরু করে। বণিক বার্তায়ও অনেক ভালো কাজ আছে ওর। কিন্তু এক ভাই পুলিশে আরেক ভাই সাংবাদিক এটা শামসের মা মানতে পারছিলেন না। দুই ছেলেই চরম ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজত থাকলে মা কিভাবে শান্ত থাকেন! 

মায়ের আশঙ্কাই সত্যি হয়। ২০১৬ সালের ১লা জুলাই শামসের বড় ভাই আমার শৈশবের বন্ধু রবিউল করিম (কামরুল) গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় শহীদ হয়।

শামস ঢাকায় নিজেই ব্যবসার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। পরে অনেক চেষ্টায় শামস একটি ব্যাংকে চাকরি শুরু করে। পোস্টিং সাভারে। আমরা তখন হাফ ছেড়ে বাঁচি। শামসের একটা গতি হলো এবার। কিন্তু বছর না ঘুরতেই শামসের কান্নাকাটি শুরু হয়। ভাই আমি এখানে কাজ করতে পারবো না, ব্যাংক টাকা দেয় কিন্তু সব শুষে নেয়, আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি- আরও কত কথা। ওর মা আমাকে ফোন করে কান্না করে। দুজনের কান্না থামাই। শামস আবার প্রথম আলোতে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ পায়। নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে। কাজ করতে হবে সাভারে। মূল বেতন ব্যাংকের অর্ধেক। কিন্তু লাইনেজ, ছবি, ভিডিও, যাতায়াত ভাতা সব মিলিয়ে আবার ব্যাংকের সমান বেতন। এসব বিবেচনা করে প্রথম আলোতে কাজ করার অনুমতি দিই। ওর নিয়োগপত্রের কপি আমার কাছে আছে। কয়েক মাসের বেতনের পে-স্লিপও আছে। 

গেলো বছর শামস প্রথম আলো ছেড়ে দৈনিক সমকালে নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে ঢাকায় কাজ শুরু করে। সেটি ছিলো আমার জন্য অন্যতম খুশির দিন। ক্রাইম বিটে খারাপ করছিলো না। কিন্তু কিছুদিন পরই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়। মাসাধিককাল বাসায় বন্দি থাকতে হয়। ততদিন আবার ওর মাথায় প্রথম আলো প্রথম আলো চলতে থাকে।

এবার আর আমাকে কিছু না জানিয়েই সমকালে পদত্যাগ পত্র পাঠায়। কিন্তু সেই পত্র সমকালে পৌঁছানোর আগেই আমি পেয়ে যাই। বুঝতে পারি প্রথম আলোতেই ফিরবে। তাই করলো। আমি কিছুদিন অভিমান করে থাকলাম। কিন্তু ভাইইই বলে ডাক দিলে আর অভিমান থাকে না। ও আমার এতটাই আপন যে মাঝে মাঝে তুই-তুমিও বলে। একবার ওর মার সামনে আমাকে তুমি বলায় বকা খেয়েছিলো। তারপর তুমিই ডাকতো সব সময়। যাই হোক। এবার স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর অনলাইনে ওর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সারাদেশে ঝড় ওঠে। যদিও প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবি আর ক্যাপশনে গড়মিল ছিলো। প্রথম আলো ছবি প্রত্যাহার করে নিয়েছে, প্রতিবেদনেও সংশোধনী দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের জন্য ওর নামে হয়তো মামলা হচ্ছে। আর সেজন্যই বাসা থেকে আজ ভোর রাতে আটক করেছে সিআইডি।

এই হচ্ছে আমার শামস কাহিনী। এক ভাই দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। আরেক ভাই রাষ্ট্রদ্রোহী হতে পারে!’ 

এই হলো নূর সিদ্দীকির স্ট্যাটাস। এই হলো শামসুজ্জামান শামসের পরিচয়। নূর সিদ্দীকির স্ট্যাটাস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, শামসের সাথে তাঁর একটি পারিবারিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শামস কারাগারে, কিন্তু শামসের সম্পাদকীয় প্যানেল কেন কারাগারে নয়? প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান কেন কারাগারে নয়? 

এসব ব্যাপারে বিজ্ঞ মহল বলছে, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে বুধবার (২৯ মার্চ) মধ্যরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। রাজধানীর রমনা থানায় করা এই মামলায় প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদক (সাভারে কর্মরত) শামসুজ্জামানকেও আসামি করা হয়েছে। রমনা থানায় দায়ের করা ওই মামলায় প্রথম আলোর প্রতিনিধি শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। কিন্তু ওই মামলার প্রধান আসামি অর্থাৎ হুকুমের আসামি করা হয়েছে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একই মামলায় প্রতিবেদক যদি গ্রেপ্তার হতে পারেন, তবে সম্পাদক কেন নয়? প্রকৃতপক্ষে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে ‘বলির পাঠা’ বানাচ্ছে প্রথম আলো। এখন দেখার বিষয়, এই মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় কি না? 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭