প্রেস ইনসাইড

প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা: সুশীলদের মাথা ব্যথা!


প্রকাশ: 02/04/2023


Thumbnail

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং ওই সংবাদটির প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন আইনজীবী আবদুল মালেক। এ মামলায় পত্রিকাটির সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়।

এর আগে বুধবার (২৯ মার্চ) সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া নামের একজন বাদী হয়ে ডিএমপির তেজগাঁও থানায় সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। ওই দিন বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর রাতে প্রথম আলোতে প্রকাশিত ওই সংবাদের ঘটনায় দৈনিকটির সাভারে কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে আটক করে সিআইডি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকা আমবাগান থেকে তাকে আটক করা হয়।

এদিকে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকেই প্রথম আলো তথা মতিউর রহমানের দোসর সুশীলদের মাথা ব্যথ্যা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। সূত্রটি বলছে, এই মামলা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে প্রথম আলো এবং মতিউর রহমানের দোসর সুশীলরা একের পর এক বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে। এসব বিবৃতি প্রথম আলোতে লাগাতার ফলাও করে ছাপানো হচ্ছে। বিবৃতিগুলো প্রথমে পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সনে এবং পরে কাগজে প্রকাশিত হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সূত্র। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, গত বুধবার (২৯ মার্চ) থেকে আজ রোববার (২ এপ্রিল) পর্যন্ত এই বিবৃতি ও লেখা ছাপানোর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে প্রথম আলো। গত পাঁচ (৫) দিনে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে এমন সব চিত্র এবং প্রতিটি প্রতিবেদন ও লেখাই সরকারের প্রতি আক্রোসমূলক। লেখা এবং বিবৃতিগুলোতে প্রথম আলো এবং এর সম্পাদক মতিউর রহমানের সাফাই বেশ জোরেশোরেই গেয়েছেন সুশীলরা। 

সূত্র জানায়, অপসাংবাদিকতা, সরকার বিরোধী অপপ্রচার, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্রদ্রোহী সংবাদ পরিবেশন করে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বিবৃতি প্রদান করিয়ে বার বারই পার পেয়ে যায় প্রথম আলো। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সংখ্যায় রাষ্ট্রবিরোধী, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিয়ে কটুক্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে আবারও সেই বিবৃতির ঝড় বইয়ে দিচ্ছে প্রথম আলো। এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়, এর আগেও এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটিয়েছে দৈনিকটি এবং এর দোসররা।  

লক্ষণীয় যে, প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্মান হনন করে থাকে। তখন এটা তাদের জন্য জায়েজ বা বৈধ বলে বিবেচ্য হয়। তখন তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনী ব্যবস্থা বা অন্য কোনো কিছু করা যায় না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলে, তাদের সহযোগিতায় থাকা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ানো হয় এবং এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করানো হয়। এবার প্রথম আলো সরাসরি সরকার এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নিয়ে অপসাংবাদিকতা শুরু করেছে।


গত পাঁচ দিনে প্রকাশিত প্রথম আলোর এসব বিবৃতি এবং প্রতিবেদন বিশ্লেষনে দেখা গেছে, ৩০ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ‘প্রথম আলো করেছিলটা কী’ শিরোনামে মতামত কলাম লিখেছেন নাদিম মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি লিখেছেন, প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত একজন দিনমজুরের মন্তব্য ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব’ সংবলিত ফটোকার্ডে ‘দেশকে অস্থিতিশীল’ করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকের অভিযোগ, ওই এক ফটোকার্ডের মাধ্যমে দেশের সম্মানহানি করা হয়েছে। যে বা যাঁরা এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন, তাঁদের কাছে আমার কিছু সরল প্রশ্ন রয়েছে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘অনেকে বলার চেষ্টা করছেন যে প্রথম আলো ওই ফটোকার্ড ইচ্ছাকৃতভাবেই করেছে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য। এই খবরটা দেশে ঠিক কী ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে, তা কি কেউ আমাকে বলতে পারেন? এ খবরের কারণে কি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিপদে পড়ত? এটা কি কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানত? দাতা সংস্থাগুলো তহবিল দিতে অপারগতা জানাত? নাকি দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতো?’


১ এপ্রিল (শনিবার) আইনজীবী শাহদীন মালিক ‘গণতন্ত্রে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন বলে অপরাধ নেই’ শিরোনামে  লিখেছেন, প্রথম আলোর অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে শেয়ারের সময় ‘গ্রাফিক কার্ডে’ উদ্ধৃতি ও ছবির অমিল ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতে পারত। প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা বুঝতে পেরে দ্রুত সেই কার্ড প্রত্যাহার এবং এ বিষয়ে অনলাইনের প্রতিবেদনে সংশোধনী প্রকাশ করেছিল। বলা বাহুল্য, ছবি প্রকাশের আগে প্রথম আলোর আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।'

তিনি লিখেছেন, ‘তবে পরের সম্পূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিলকে তাল করার একটা অভাবনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে সাভারের বাসা থেকে তুলে নেয়। মন্ত্রীরা একের পর এক বিবৃতি দিলেন। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের নামে মামলাও হয়েছে। এসব ঘটনা ঘটল ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ তুলে।’

তিনি আর লিখেছেন, ‘ফৌজদারি আইন প্রয়োগ করে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার এমন কথিত অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে শাস্তি দেওয়াটা সম্পূর্ণভাবে মধ্যযুগীয় আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতিফলন। বিশ্বের গণতান্ত্রিক কোনো দেশে ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ নামীয় কোনো অপরাধ নেই।’  


এদিকে ১ এপ্রিল (শনিবার) রওনক জাহান ‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কে নষ্ট করছে’ শিরোনামে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের গ্রেপ্তার, জামিন নামঞ্জুর করা এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে অতি দ্রুত এবং অদ্ভুত যেসব ঘটনা ঘটছে, তা আমাকে হতবাক ও বর্ণনাতীতভাবে ভারাক্রান্ত করেছে। নিজেকে প্রশ্ন করেছি, এটা কীভাবে হতে পারে? একটি উক্তি ও ভ্রমক্রমে প্রকাশ করা একটি ছবির কারণে (ভুল–বোঝাবুঝি হতে পারে ভেবে যা দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং সংশোধনী দেওয়া হয়েছে) একজন তরুণ সাংবাদিকের এমন পরিণতি কীভাবে হতে পারে?’

তিনি বলেন, ‘শামসুজ্জামান নিজে এবং তিনি যে সংবাদপত্রে কাজ করেন, সেটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বলে এই তরুণ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলায় প্রাথমিকভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। আরেকটি মামলায় তাঁর এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। পরে একই অভিযোগ করেছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা। যদিও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করা সাংবাদিক, তাঁদের সংগঠন ও বৈশ্বিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে দ্রুত এ ঘটনার নিন্দা ও সমালোচনা করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়া ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে, কে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করছে?’

এসব ঘটনাকে সরকার বিরোধী চক্রান্তের অংশ হিসেবেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, এটি কোনো নতুন ঘটনা নয়, প্রথম আলোর দোসর কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বরাবরই বিবৃতি দেওয়ায় প্রথম আলো এবং মতিউর রহমান গং। কিন্তু প্রশ্ন হলো এভাবেই বার বার অপসাংবাদিকতা করেও বেঁচে যাচ্ছে প্রথম আলো এবং মতিউর রহমান গং। এ মামলাতেও মতিউর রহমান ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন। এখন দেখার বিষয় এসব অপসাংবাদিকতা করে এবারও কি পার পেয়ে যাবে মতিউর রহমান এবং তার সম্পাদিত প্রথম আলো?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭