প্রেস ইনসাইড

নরম হলো প্রথম আলোর সুর!


প্রকাশ: 03/04/2023


Thumbnail

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় জামিন পেয়ে কারামুক্ত হয়েছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস। সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্ত হয়ে বের হয়ে আসেন। এর আগে দুপুরে শামসুজ্জামানকে ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত। 

এদিকে গতকাল রোববার (২ এপ্রিল) রমনা থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই মামলার প্রধান আসামি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেয় হাইকোর্ট। রোববার বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিনের এ আদেশ দেন। সেই সঙ্গে আদালত বলেন, প্রথম আলোর বিষয়টি আরেকটি বাসন্তী কাহিনী। দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এটা করা ঠিক হয়েছে কিনা- সেই প্রশ্নও করেন আদালত। বিকেলে হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো.আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন। শুনানি শেষে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে আগাম জামিন দেন আদালত। শুনানিতে ‘বিষয়টি আরেকটি বাসন্তী কাহিনী’ - বলেও মন্তব্য করেন আদালত।  

শুনানিতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। স্বাধীনতা দিবসে সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাভারে কর্মরত প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের নামে ২৯ মার্চ মধ্যরাতে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করেন আবদুল মালেক নামের আইনজীবী। এ মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক, প্রতিবেদক ছাড়াও সহযোগী একজন ক্যামেরাম্যান ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। এর আগে একই ঘটনায় তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিবেদক শামসের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়। রমনা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সোমবার জামিন পেয়েছেন প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস।       

অন্যদিকে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকেই প্রথম আলো তথা মতিউর রহমানের দোসর সুশীলদের মাথা ব্যথ্যা শুরু হয়। এই মামলা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে প্রথম আলো এবং মতিউর রহমানের দোসর সুশীলরা একের পর এক বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিয়ে বিষয়টিকে আলোচনামুখর করে তুলে। এসব বিবৃতি প্রথম আলোতে লাগাতার ফলাও করে ছাপানো হয়। বিবৃতিগুলো প্রথমে পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সনে এবং পরে কাগজে প্রকাশিত হতে থাকে।  

গত বুধবার (২৯ মার্চ) থেকে রোববার (২ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রথম আলো ও এর সম্পাদক মতিউর রহমানের পক্ষে সরকারকে আক্রমণ করে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চেয়ে দেশি বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার দেওয়া বিবৃতি ও লেখা ছাপানোর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল দৈনিকটি। ওই পাঁচ (৫) দিনে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, এসব বিবৃতি, প্রতিবেদন ও প্রতিটি লেখাই ছিল সরকারের প্রতি আক্রোসমূলক। লেখা ও বিবৃতিগুলোতে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এবং প্রতিবেদক মামসুজ্জামান শামস-এর পক্ষে বেশ জোরেশোরেই সাফাই গেয়েছিলেন প্রথম আলো ও মতিউর রহমানের দোসররা।  
কিন্তু গতকাল ২ এপ্রিল (রোববার) দৈনিক প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আমাদের সম্পাদকীয় নীতির ভিত্তি’- শিরোনামে একটি উপ-সম্পাদকীয় লিখেছেন। ওই উপ-সম্পাদকীয়তে তিনি দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাই দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিকটির সম্পাদকীয় নীতি। উপ-সম্পাদকীর শুরুতেই তিনি লিখেছেন, ‘গত ২৩ মার্চ প্রথম আলোর ২৭ জন নতুন কর্মীকে নিয়ে জ্যেষ্ঠ সহকর্মীরা অফিসের বড় সভাকক্ষটিতে বসেছিলাম। বসেছিলাম প্রথম আলোয় চর্চিত সম্পাদকীয় নীতি, মূল্যবোধ আর সংস্কৃতি তাঁদের বুঝিয়ে বলতে। সেখানে খুব সুনির্দিষ্টভাবে আমরা বলেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের যেটা চেতনা, এক কথায় সেটাই প্রথম আলোর সম্পাদকীয় নীতির মূল ভিত্তি।’ 

তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভেতরে গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, সম–অধিকার, সাম্য ও বাঙালিত্বসহ যেসব আদর্শের অভাব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতা এবং কোটি মানুষকে পীড়িত করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল, সেই চেতনাই আমাদের সাংবাদিকতা–চর্চার ভিত্তি।’

এসব বিষয়ে সংবাদ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ মহল বলছেন, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ২৯ মার্চ রাতে প্রথম আলো সম্পাদক এবং প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর পরই একটু নরম হয়েছে প্রথম আলোর সুর। এ সময়ে প্রথম আলো নিজেদের স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি বলে দাবি করছে। প্রথম আলো সব সময়ই খোলস বদলায়। এবারও তার ব্যতিক্রম করেনি। প্রথম আলোতে প্রকাশিত এই উপ-সম্পাদকীয়টির লেখাটিও এমনই একটি খোলস বদলানোর রূপ। 

বিজ্ঞ মহল আরও বলছেন, অপসাংবাদিকতা, সরকার বিরোধী অপপ্রচার, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিরর লক্ষ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্রদ্রোহী সংবাদ পরিবেশন করে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বিবৃতি প্রদান করিয়ে বার বারই পার পেয়ে যায় প্রথম আলো। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সংখ্যায় রাষ্ট্রবিরোধী, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিয়ে কটুক্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে আবারও সেই বিবৃতির ছকে বাঁধা ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিল প্রথম আলো। কিন্তু মামলা হওয়া এবং প্রতিবেদক গ্রেপ্তার হবার পর প্রথম আলো এসব লেখা ও বিবৃতি প্রকাশ করলেও ভেতরে ভেতরে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে একটু নরম হয়েছিল প্রথম আলো। এ মামলায় সম্পাদক মতিউর রহমান এখনও গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন। যে কারণেই তিনি হাইকোর্ট থেকে দ্রুত আগাম জামিন নিয়েছেন। তবে এখন দেখার বিষয় প্রথম আলোর এই সুর কতদিন নরম থাকে? আবার কখন খোলস বদলায় প্রথম আলো?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭