ইনসাইড আর্টিকেল

রাণীর দেশ ব্রিটেনে পবিত্র মাহে রমজান


প্রকাশ: 05/04/2023


Thumbnail

পশ্চিমা সভ্যতার পীঠস্থান, স্বপ্নের দেশ, রাণীর দেশ ব্রিটেন। এককালে আমরা যাদের উপনিবেশ ছিলাম- সেই ব্রিটেন এক সময় অর্ধ বিশ্ব শাসন করত। পশ্চিমা সভ্যতার পীঠস্থান, স্বপ্নের দেশ, রাণীর দেশ ব্রিটেন। এককালে আমরা যাদের উপনিবেশ ছিলাম- সেই ব্রিটেন এক সময় অর্ধ বিশ্ব শাসন করত।

ব্রিটেনে রমজানজুড়ে বিরাজ করে এক ভিন্ন আমেজ। এ মাসে নামাজের সময় মসজিদগুলো হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। বিশেষ করে জুমা ও তারাবির নামাজের সময় থাকে মুসল্লিদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। পবিত্র কোরআন খতমের জন্য থাকে বাড়তি উচ্ছ্বাস ও আবেগ। কোরআন নাজিলের এই মাসে আয়োজিত হয় কোরআন তেলাওয়াতের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। ছোট-বড় সবার সুযোগ থাকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের। ব্রিটেনের মুসলমানরা এ মাসে হাত খুলে দান-খয়রাত করেন ও জাকাত প্রদান করেন।

পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে সাহরি ও ইফতারি করা তাদের অন্যতম রীতি। এছাড়া ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্যও থাকে ইফতারে অংশগ্রহণের সুযোগ। এমন আয়োজন সাধারণত বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ও মসজিদ কর্র্তৃপক্ষের তরফে করা হয়। যা ইসলাম ধর্মের সম্প্রীতি ও উদারতার পরিচায়ক।

তাজমহলের আদলে তৈরি গম্বুজ ও মিনারবিশিষ্ট ইস্ট লন্ডন মসজিদে জুমা, ঈদ ও তারাবির নামাজে হাজার হাজার মানুষের ঢল দেখে ব্রিটেনে তাকওয়াভিত্তিক সমাজের প্রতি গভীর অনুরাগ লক্ষ্য করা যায়। লন্ডনের মেয়র হিসেবে নবনির্বাচিত সাদিক খান এবং ক্যামডেন শহরের মেয়র বাংলাদেশি নাদিয়া শাহ’র বিজয় আমাদের এই ধারণাকে অসার হতে দেয় না।

পাশ্চাত্যের যেসব দেশে ইসলামের বিস্তার বা জাগরণ চোখে পড়ার মতো- সেসব দেশের মধ্যে ব্রিটেন অন্যতম। শুধু টাওয়ার হ্যামলেটসে মসজিদের সংখ্যা হচ্ছে ৪০-এরও বেশি। প্রতিটি গলিতে একটি করে মসজিদ। জোহর বা আসরের নামাজের সময় আপনি যদি হোয়াইট চ্যাপেল হাইরোড দিয়ে হাঁটেন, তখন একাধিক মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি শুনতে পাবেন। টাওয়ার হ্যামলেটসের বাইরে বেশি মুসলমান বাস করেন নিউহাম ও রেডব্রিজ বারাতে। যুক্তরাজ্যে মসজিদের সংখ্যা ১৬শ’ এর অধিক। লন্ডনে মসজিদের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় চার শ’র মতো। নামকরা মসজিদগুলোর মধ্যে হচ্ছে, আরবদের তৈরি রিজেন্ট পার্ক মসজিদ এবং হ্যকনি বারাতে তুর্কিদের তৈরি সোলায়মানিয়া মসজিদ।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে গত বছর থেকে বিশ্বকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। গণজমায়েত ও ধর্মীয় উৎসব পালনে কমবেশি নিষেধাজ্ঞা ছিল প্রায় সব দেশেই, ব্রিটেনও এর ব্যতিক্রম নয়। সেখানেও বহাল ছিল কঠোর নিষেধাজ্ঞা। তাই গত বছর ব্রিটেনের মুসলমানরা রমজান কাটিয়েছেন এক রকম গৃহবন্দি অবস্থায়। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মসজিদগুলো সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল।

গত বছর মসজিদ বন্ধের সময়টাতে বিবিসির একটি প্রতিবেদন মানুষের মনে বেশ দাগ কাটে। ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়, করোনার কারণে মসজিদ বন্ধ থাকায় আট বছর বয়সী ইয়াহইয়া নামের এক কিশোর রমজানের ইবাদতের জন্য মসজিদে যেতে না পেরে নিজ আবাসস্থলে মসজিদ সদৃশ একটি ঘর নির্মাণ করেছে। ঘরের ভেতরে নির্মিত ওই মসজিদে ইয়াহইয়া নিজেই আজান দেয় এবং নামাজ আদায় করে। মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখে বহু মানুষ আপ্লুত হন।

গত রমজানে মসজিদ বন্ধ রাখাসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকলেও চলতি বছর মসজিদগুলো খোলা রাখা হয়েছে। তবে সতর্কতার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সচেতন করতে মুসলিম কাউন্সিল মুসলমানদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, মসজিদে পরস্পরে যতটুকু সম্ভব বেশি পরিমাণ দূরত্বে অবস্থান করা। বিশেষ করে পরস্পরে তিন ফুট দূরত্ব থাকা বাঞ্ছনীয়। মসজিদে নির্মল বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা। মসজিদে ইফতার না করা, তবে ভার্চুয়াল ইফতারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এবার মসজিদে ইতিকাফ না করে বাসায় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সতর্কতা মেনে মসজিদেও ইতিকাফের সুযোগ রয়েছে। লন্ডন সেন্ট্রাল মসজিদের ওয়েবসাইটে মসজিদ খোলা প্রসঙ্গে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো-ফজর, জোহর ও আসরের আজানের ২০ মিনিট পূর্বে মসজিদ খোলা এবং প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজ শেষে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া। মাগরিবের সময় মসজিদ বন্ধ থাকবে এবং ইফতার ও মাগরিবের নামাজ বাসায় আদায় করতে হবে। এশা ও তারাবিতে নারী-পুরুষ সবার জন্য নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। তবে উপস্থিতির সংখ্যা থাকবে নির্দিষ্ট পরিমাণ এবং মানতে হবে বেশ কিছু বিধিনিষেধ।

সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জুম কলে যুক্ত হয়ে মুসলমানদের সঙ্গে ভার্চুয়াল ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং খেজুর দ্বারা ইফতার করেন। এ সময় তিনি রোজাদারদের রমজানের শুভেচ্ছা জানান।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭