ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি, মাহে রমজানের পবিত্রতা প্রশ্ন!


প্রকাশ: 05/04/2023


Thumbnail

সব মহানগর ও জেলা সদরে অবস্থান কর্মসূচির পর এবার মহানগরীর সব থানা এবং সব উপজেলায় দুই ঘণ্টা যুগপৎ অবস্থান কর্মসূচি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে আগামী ৮ এপ্রিল বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্রটি বলছে, এর আগে ১ এপ্রিল রাজধানীসহ সব মহানগর ও জেলা সদরে বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা যুগপৎ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

তবে বিএনপির কর্মসূচি নিঃসন্দেহে রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। একইসঙ্গে তিনি জানান, বিএনপির খোঁচায় সরকারের কিছু আসে যায় না। রোববার (২ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের (বিএসপি) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) ইসলামের কথা বলে, অথচ রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করে তারা কর্মসূচি পালন করছে। এটি অনভিপ্রেত, দুঃখজনক, তাদের অপরাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। 

এছাড়াও পল্লবীবে বিএনপির ইফতার পার্টিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সেখানে পবিত্র রমজানের ইফতার আয়োজনকে কেন্দ্র করে একটি হট্টগোল সৃষ্টি হয়। যা পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করেছে বলেও জানায় সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল। আবার সাংবাদিকদের ওপর এই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি মহাসচিব এর দায় আওয়ামী লীগের ওপর দিয়েছেন। কিন্তু পবিত্র মাহে রমজানে এমন একটি ডাহা মিথ্যা কথা বলা- পবিত্র রমজানের পবিত্রতাকে নষ্ট করাই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল। 

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘তাদের ইফতার পার্টিতে কি আওয়ামী লীগ গিয়েছিল? ইফতার পার্টির ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, কে কোন দলের, কার কি পোস্ট, সেটা সরকারও জানে, তারাও জানে। বিএনপির মহাসচিব মিথ্যা বলায় যে তিনি চ্যাম্পিয়ান, তা আরও একবার প্রমাণ করলেন এই বক্তব্য দিয়ে। মিথ্যা বলায় যদি অস্কারর পুরুষ থাকত- তাহলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব- তা পেতেন।’       

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ ১৩টি মহানগরীর ১২৮টি থানায় এবং সাড়ে ৫শ’উপজেলা মিলে প্রায় সাড়ে ৬শ’ স্থানে একযোগে ৮ এপ্রিল এই অবস্থান কর্মসূচি হবে। এই কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, দলের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা অংশ নেবেন। ইতিমধ্যে নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়া ১০ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১ সপ্তাহ সব বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন ও প্রচারপত্র বিলি কর্মসূচি হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি হবে বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত। এই কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দলের এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌরসভা ইউনিটকে ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতি সভা, কর্মিসভা, গণসংযোগ জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পৌর ইউনিটের নেতা-কর্মীদের উপজেলার কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে ‘রমজান মাসে বিএনপি আন্দোলনকে কীভাবে দেখছেন’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রোববার (২ এপ্রিল) সচিবালয়ের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমরা কখনো শুনিনি, দেখিনি পবিত্র রমজানের মধ্যে কেউ রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এখন রমজানেও বিএনপি মানুষকে নিস্তার দিচ্ছে না। দলের কর্মসূচি নিসন্দেহে রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করেছে।  

‘বিএনপির রাজনীতি সহিংসতার দিকে যাচ্ছে’- এ বিষয়ে মত জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চাইতো সহিংসতা। তাদের রাজনীতিই হচ্ছে সহিংসতার রাজনীতি। তারা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করেছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। যারা রাজনীতি জানে না, বুঝে না, করে না তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারা (বিএনপি) পরেও সহিংসতা করার চেষ্টা করেছে। গত ১০ ডিসেম্বরের আগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার চেষ্টা করেছে। সহিংসতার জন্য অফিসের মধ্যে তাজা বোমা মজুদ করে রেখেছিল। বিএনপি চায় সহিংসতা। তবে তারা আগের মতো সহিংসতা করতে পারবে না।  

‘বিএনপির এই কর্মকাণ্ডে সরকার শঙ্কিত কি না’- জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির এই খোঁচানিতে সরকারের কিছু আসে যায় না। এরকম খোঁচানি আমরা ১৪ বছর ধরে দেখছি। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে তাদের সহিংস রাজনীতি মোকাবিলা করছি। সরকার জানে কখন কি করতে হবে, আওয়ামী লীগ জানে-বুঝে কখন কী করতে হবে।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রমজানের আগে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে আশানুরূপ কোনো ফলাফল পায়নি বিএনপি। তারই ধারাবাহিকতায় পবিত্র রমজানেও সেই কর্মসূচি চালু অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা রক্ষার যে প্রশ্ন ওঠেছে, সে প্রশ্নে বিএনপি আবারও পিছিয়ে পড়েছে। পল্লবীতে রমজানের ইফতারের সময় যে হট্টগোল হয়েছে, তাতে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নি:সন্দেহে সংযমের মাস পবিত্র রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করেছেন। ধর্মের নামে অধর্ম, সহিংসতা করাই বিএনপির প্রধান কাজ- এটা ইতিমধ্যেই বার বার প্রমাণিত হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, তবে বিএনপির এসব কর্মসূচিতে সরকারের কিছু আসে যায় না। বিএনপি আন্দোলনের নামে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতিই সৃষ্টি করুক না কেন, সরকার তা মোকাবিলায় সব সময় সার্থক হয়েছে। কাজেই এসব নিয়ে সরকারের এখন আর কোনো মাথা ব্যথা নেই। এখন শুধুই দেখার বিষয়, আসছে দিনগুলোতে বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছে সেখানে পবিত্র রমজানের পবিত্রতা কতটুকু রক্ষা করতে পারে বিএনপি?    



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭