রাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী লিটন, বিএনপির কে?

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। দুই বারের মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনই মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খায়রুজ্জামান লিটনকে এবারও মেয়র পদে নির্বাচন করতে বলেছেন বলে জানিয়েছে দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র। সূত্রটি বলছে, রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে গণভবনে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। দুপুর ২টার দিকে তিনি গণভবন থেকে বের হয়ে আসেন। এর পর তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করবেন বলে রাজশাহীর নেতাদের জানান।

এদিকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনই শুধু নয় বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না বিএনপি। এ অবস্থায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেল। এখন কেবলই ঘোষণা দেবার বাকি।

তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির অনেক প্রার্থী, বিএনপির যে দাবি ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না’- সে অবস্থানে থাকবে না। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকার, কুমিল্লার মনিরুল হক সাক্কু, সাবেক সংসদ সদস্য ও খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তারা তারেকের নেতৃত্বের বিরোধীতা করার জন্যও সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।

সূত্র জানায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর মাধ্যমে লন্ডনে অবস্থানরত তারেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও বিএনপির প্রার্থীদের সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা অস্বীকার করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।       

তবে একাধিক সূত্র বলছে, যদি দল থেকে নির্বাচনের অনুমতি না পাওয়া যায়, স্বতন্ত্র হলেও সিটি নির্বাচনে অংশ নিবেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। কেননা বিএনপির রাজশাহী তৃণমূলের নেতারা মনে করেন, আন্দোলন এবং নির্বাচন দুটোই সমানতালে চালিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনে গেলেই কেবল নির্বাচনী বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে- তা প্রকাশ করা যাবে। 

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, রাসিকের মেয়র পদে কে নির্বাচন করবেন তা নিয়ে আলোচনার জন্য দলীয় প্রধানের সঙ্গে আজ সাক্ষাৎ করেন খায়রুজ্জামান লিটন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খায়রুজ্জামান লিটনকে আবারও মেয়র পদে নির্বাচন করতে বলেছেন। আর তাই তিনি এবারও রাসিকে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। সোমবার (১০ এপ্রিল) তিনি দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন এবং মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) জমা দেবেন। এরপর রাজশাহী ফিরে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবেন।

অন্যদিকে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবার মেয়র পদে নির্বাচন করছেন কিনা তা নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে নানান ধরনের আলোচনা চলছিল। কেউ বলছিলেন তিনি মেয়র নির্বাচন করবেন। আবার কেউ বলছিলেন এবার তিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করবেন। এ নিয়ে তিনি নিজেও কিছু স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি কেবল বলেছেন- দলীয় প্রধান তাকে যেখানে চাইবেন সেখানেই নির্বাচন করবেন।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, গণভবন থেকে বের হওয়ার পর সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামানের সঙ্গে তার মোবাইলে কথা হয়েছে। তিনি (খায়রুজ্জামান লিটন) জানিয়েছেন, দলীয় প্রধান আসন্ন সিটি নির্বাচনে আবারও তাকে প্রস্তুতি নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর দলীয় প্রধান সাধারণত এভাবেই বলে থাকেন। তিনি সরাসরি কিছু বলেন না। সর্বোচ্চ নির্ধারণী বোর্ডেই তা চূড়ান্ত হয় বলে উল্লেখ করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। সেদিক থেকে খায়রুজ্জামান লিটনই রাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন। আর বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত বলেই মন্তব্য করেন আসাদুজ্জামান আসাদ।

উল্লেখ্য, বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে পরাজিত হন- বিএনপির হেবিওয়েট নেতা মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এর আগে গত ৩ এপ্রিল দেশের ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরুও করেছে।