এডিটর’স মাইন্ড

সার্বভৌম জাতীয় সংসদ ক্ষমতাহীন কেন


প্রকাশ: 10/04/2023


Thumbnail

সংসদীয় গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর ব্রিটেন। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সম্পর্কে একটি কথা বহুল প্রচলিত। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সম্পর্কে বলা হয়একমাত্র নারীকে পুরুষ এবং পুরুষকে নারীতে পরিবর্তন ছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সব পারে সংসদীয় গণতন্ত্রে পার্লামেন্ট জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সরকার পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু। সংসদের মধ্য দিয়েই প্রজাতন্ত্রে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে পার্লামেন্টকে দেশ পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু মনে করা হয়। যুক্তরাজ্য, ভারতসহ সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশগুলো এর উদাহরণ। বাংলাদেশেও সংসদীয় গণতন্ত্র। নানা টানাপোড়েন এবং চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ গত এপ্রিল ৫০ বছর পূর্ণ করল। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এক বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। রাষ্ট্রপতি অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদের সিনিয়র নেতারা ভাষণ দেন। কিন্তু সংসদের ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে আমরা কি বলতে পারি আমাদের জাতীয় সংসদ ক্ষমতাবান? ব্রিটেন বা ভারতের মতো রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু? জাতির পিতা সারা জীবন ছিলেন জনগণের ক্ষমতায়নের পক্ষে। সংসদীয় গণতন্ত্রে তার আস্থা ছিল। কারণেই ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরপরই তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গণপরিষদে নভেম্বর ১৯৭২ সালে নতুন সংবিধান প্রণীত হয়। ৭২-এর সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর ১৫ ডিসেম্বর গণপরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৭৩-এর মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের পর ১৯৭৩ সালের এপ্রিল জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় সংসদের এই ৫০ বছরের যাত্রাপথ সহজ সরল স্বাভাবিক ছিল না। ৫০ বছরে ১১টি সংসদ গঠিত হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। এর মধ্যে ছয়টি সংসদই তার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ ছিল বছর মাস। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর অবৈধ রাষ্ট্রপতি সংসদের বিলুপ্তি ঘোষণা করে। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের নারকীয় নৃশংসতার পর সংসদ এমনিতেই ছিল অকার্যকর। প্রথম জাতীয় সংসদেই সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগ। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল গঠন এবং রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি প্রবর্তিত হওয়া রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা বহাল ছিল ১৯৯১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সময়কালে সংসদ তার সার্বভৌমত্ব হারায়। সংসদ ছিল নির্বাহী কর্তৃত্বের অধীনে। সংসদ সময় অবৈধ শাসকদের ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হয়। জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের নভেম্বর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন। সেনাশাসন জারি করে সংবিধান স্থগিত করেন। বুটের তলায় পিষ্ট হয় গণতন্ত্র। সেনা পোশাকেই জিয়া অস্ত্রহাতে বঙ্গভবন যান। নামমাত্র রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মো. সায়েমকে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতাচ্যুত করেন। উর্দি পরেই স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হন জিয়া। সময় জিয়া সংবিধান স্থগিত করেই ক্ষান্ত হননি। সাময়িক ফরমানের মাধ্যমে একের পর এক সংবিধান কাটাছেঁড়া করেন সামরিক একনায়ক জিয়া। ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রের মতো রাষ্ট্রের মৌলিক স্তম্ভগুলোকে উপড়ে ফেলেন সংবিধান থেকে। রক্তাক্ত এবং ক্ষতবিক্ষত হয় পবিত্র ৭২-এর সংবিধান। ক্ষমতায় বসেই জিয়া রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক শাসনের মধ্যেই আয়োজন করা হয় দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রহসনের এই নির্বাচনে একটি ফলাফলই নির্ধারিত ছিল। তা হলো, সামরিক শাসনের গর্ভে জন্ম নেওয়া জিয়ার দল বিএনপিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সংসদে আনা। পাতানো ওই নির্বাচনে সেটিই হয়। ২০৭টি আসন পায় জিয়ার দল বিএনপি। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে এপ্রিল। প্রথম অধিবেশনের আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র পাঁচ দিন। পাঁচ দিনেই জিয়ার সামরিক শাসন জারি থেকে অবৈধ ক্ষমতা দখল, সবকিছুর বৈধতা দেওয়া হয়। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য এক অভিশাপ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে। দ্বিতীয় সংসদের প্রধান কাজই ছিল জিয়ার অবৈধ শাসন বৈধতা দেওয়া। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ক্ষমতা দখল করেই তিনি জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করেন। তিন বছরের কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের মৃত্যু হয়। ক্ষমতা দখল করে এরশাদ জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। সংবিধানে কাটাছেঁড়া করা হয় সামরিক ফরমানে। এরশাদও ক্ষমতায় বসে দল গঠন করেন। তার অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দিতে প্রয়োজন হয় নতুন সংসদ। ১৯৮৬ সালের মে বহুল বিতর্কিত, সমালোচিত, মিডিয়া ক্যু-এর মাধ্যমে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১০ জুলাই মাত্র আট দিনের জন্য বসে প্রথম অধিবেশন। প্রথম অধিবেশনেই সপ্তম সংশোধনী বিলের মাধ্যমে এরশাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয় সংসদ। বিরোধী দলের সরব উপস্থিতিতে সংসদ ছিল উত্তপ্ত। প্রাণবন্ত। কিন্তু রাজপথের আন্দোলনের মুখে ১৯৮৭ সালে ডিসেম্বর এরশাদ সংসদ বাতিল করেন। তৃতীয় জাতীয় সংসদও মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি।

এরশাদ সংসদ ভেঙে দিয়ে আন্দোলন দমন করেন। নতুন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। ১৯৮৮ সালের মার্চ অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রধান প্রধান সব রাজনৈতিক দল বর্জন করে। এরশাদ আবদুর রবের মতো ভাড়া করা অনুগত বিরোধী দল জোগাড় করেন। এই অনুগত, গৃহপালিত বিরোধী দলকে নিয়ে জাতীয় পার্টি চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ২৫ এপ্রিল ১৯৮৮ সালে বসে প্রথম অধিবেশন। কিন্তু সংসদও তার মেয়াদপূর্তি করতে পারেনি। বছর মাসের মাথায় জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হয়। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে এরশাদের পতন হয়। এভাবেই স্বাধীনতার পর প্রথম বিশ বছর চারটি সংসদই ছিল অকার্যকর। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বৈধতা দেওয়ার প্রতিষ্ঠান। রাবার স্ট্যাম্প। চারটি সংসদ একবারও তার মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। ৭৫-এর পর দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা ছিল সামরিক স্বৈরাচারদের হাতে। সংসদ ছিল স্রেফ অলংকার। রাষ্ট্রের সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো একনায়কতান্ত্রিক ভাবেই।

নব্বইয়ের গণআন্দোলনের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তিনজোট এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অঙ্গীকার করে যে, এরশাদের পতনের পর তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাবে। ৯১-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান। সবাইকে অবাক করে ওই নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে ৯১-এর জাতীয় সংসদ ছিল অন্যতম প্রাণবন্ত এবং কার্যকর। ৯১-এর জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থা অবসান ঘটে। সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়। কিন্তু সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আসলে রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থার বদলে প্রধানমন্ত্রীর শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়। রাষ্ট্রপতির সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকে অর্পণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি হয়ে যান ক্ষমতাহীন। ৯১-এর নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন বেগম জিয়া। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রে অনভ্যস্ত, আড়ষ্ট ছিলেন। সংসদে আসতেন কম। কথা বলতেন আরও কম। সংসদের বাইরে মন্ত্রিসভা দিয়েই দেশ পরিচালনা করতেন। মন্ত্রীদের সংসদে জবাবদিহিতায় তীব্র অনীহা এবং আপত্তি ছিল লক্ষণীয়। কারণ ক্ষমতার গর্ভে জন্ম নেওয়া বিএনপি সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চায় অভ্যস্ত ছিল না। ফলে সংসদীয় গণতন্ত্র শুধু কাগজে কলমেই থাকে। সংসদ জবাবদিহিতার কেন্দ্রবিন্দুও হয় না। বিএনপি ক্ষমতায় এসে ভোটচুরি কারচুপির একই ধারা শুরু করে। বিশেষ করে মাগুরা এবং মীরপুরের উপনির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। বিএনপি সেই আন্দোলনের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানায়। উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে পঞ্চম জাতীয় সংসদ মেয়াদপূর্তির মাত্র চার মাস আগে ভেঙে যায়। বিরোধী দল একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়াই ছিল একমাত্র বিকল্প। ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর সংসদ বিলুপ্ত করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দল নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। বিরোধী আন্দোলন উপেক্ষা করে বিএনপি একতরফাভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচন হয়। বিএনপি ছাড়া ৭৫-এর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দল ওই নির্বাচনে অংশ নেয়। তীব্র গোলযোগ এবং সহিংসতার মুখে ভোট ছাড়াই নির্বাচন কমিশন ঘরে বসে ফলাফল বানায়। ২১ মার্চ জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডাকা হয়। মাত্র ১১ দিন স্থায়ী ছিল ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ। সংসদে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবলিত সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী পাস করা হয়। ৩০ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২১ বছর পর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। সংসদীয় গণতন্ত্রকে অর্থবহ এবং কার্যকর করতে সংসদ নেতা সময় বেশ কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। সংসদীয় কমিটিগুলোর সভাপতি করা হয় মন্ত্রী নন এমন সংসদ সদস্যদের। যাতে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব চালু করেন। কিন্তু সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে যে বিপুল নির্বাহী ক্ষমতা দিয়েছে তাতে সংসদ শুধু আলোচনা এবং বিতর্কের কেন্দ্র হতে পারে। জবাবদিহিতার মাধ্যমে ক্ষমতাবান হতে পারে না। তবে সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি এবং কার্যকর সংসদীয় কমিটি যে সংসদকে ক্ষমতাবান করতে পারে পঞ্চম সপ্তম জাতীয় সংসদ তার প্রমাণ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সংসদ যেটি মেয়াদপূর্ণ করে। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। বেগম জিয়া যেহেতু সংসদীয় গণতন্ত্রে স্বাচ্ছন্দ্য নন, তাই আবার সংসদ পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যায়। সময় স্বীকৃত সরকারের চেয়ে হাওয়া ভবনে প্রতিষ্ঠিত ছায়া সরকারই অধিক ক্ষমতাবান হয়ে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেই বিতর্কিত করে ফেলে। নানা বিতর্ক টানাপোড়েনের পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি . ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ হন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান। বিএনপির অনুগত ইয়াজউদ্দিন একটি প্রহসনের নির্বাচনের পথে হাঁটেন। যে কোনো মূল্যে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনাই ছিল তার লক্ষ্য। এরকম বাস্তবতায় সেনা সমর্থনে সুশীল নিয়ন্ত্রিত অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। দুই বছর গণতন্ত্র নির্বাসনে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে। সেই থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি টানা ১৪ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায়। সংসদে বিরোধী দল উত্তাপহীন। ২০০৯ সালের নবম সংসদে বিরোধী দল ছিল দুর্বল। সংখ্যায় খুবই কম। ২০১৪ সালে বিরোধী দল আর সরকারি দল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ২০১৮-এর নির্বাচন জাতীয় সংসদকে প্রায় বিরোধী দলশূন্য করে ফেলে। ফলে সংসদ উত্তাপহীন, আগ্রহহীন একটি রুটিন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মন্ত্রীরা সংসদে জবাবদিহিতা করেন না। কারণ বিরোধী দল শক্তিশালী নয়। সংসদ এখন আলোচনা এবং বক্তৃতার জায়গা। সিদ্ধান্ত হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, মন্ত্রিসভায়। এমপিদের ভূমিকা এখন গৌণ। আমলারা ক্ষমতাবান। তবে একটা ইতিবাচক দিকে হলো, ১৯৯৬ সাল থেকে সংসদের অপমৃত্যু নেই। সব সংসদই মেয়াদপূর্ণ করছে। জাতীয় সংসদ গণতন্ত্রের পাহারাদার। রাষ্ট্রপরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় সংসদ উপেক্ষিত এটা সত্যি। তবে এও সঠিক যে, জাতীয় সংসদ আছে বলেই এখনো গণতন্ত্র টিকে আছে। মনে রাখতে হবে, সবচেয়ে খারাপ গণতন্ত্রও অনির্বাচিত স্বৈরশাসনের চেয়ে ভালো। জাতীয় সংসদ তার ৫০ বছর পূর্ণ করল। জাতীয় সংসদ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতিষ্ঠান। তাই একে কার্যকর করা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। শক্তিশালী বিরোধী দল, সংসদ সদস্যদের বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থিতি এবং প্রাণবন্ত বিতর্কই সংসদকে শক্তিশালী করতে পারে। সে জন্য প্রয়োজন একটি ভালো নির্বাচন।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭