ইনসাইড থট

 বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় বাধা


প্রকাশ: 10/04/2023


Thumbnail

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একটি পরিপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক’দিন ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরিপত্র জারি হয়েছে গত ১৬ মার্চ। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নির্দেশিত হয়ে স্বাস্থ্য মহাপরিচালককে এফ আর সি এস, এম আর সি এস, এম আর সি পি প্রভৃতি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বিদেশ গমনের আবেদন অগ্রায়ন না করার অনুরোধ করেছেন। 

পরিপত্র দাতা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের একটি পরিপত্রের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেটি গত বছরের পয়লা নভেম্বর জারি করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সে পরিপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকার পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সকল প্রকার বিদেশ ভ্রমণ পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে বৈদেশিক অর্থায়নে সেমিনার, প্রশিক্ষণ বা উচ্চ শিক্ষার্থে সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগের কথা বলা হয়েছে।

পাশ্চাত্যের ডিগ্রি এফ আর সি এস, এম আর সি এস, এম আর সি পি প্রভৃতি পরীক্ষা নিয়ে দুটি কথা বলা প্রয়োজন। এ ডিগ্রীসমূহের মূল্য বিদেশে অনেক বেশি। দেশের প্রচলিত উচ্চশিক্ষার ডিগ্রীসমুহ নিয়ে বিদেশের খুব বেশি দেশে স্বচ্ছন্দে চাকুরী করা যায় না। বিলেতের উক্ত ডিগ্রি সমূহ নিয়ে বিদেশে চাকুরী করতে গেলে সেখানকার চাকুরীর বাজার খুব সহজে ধরা সম্ভব। বেশি বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। দেশে বসেই এ সব ডিগ্রির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের লিখিত পরীক্ষা অনলাইনে দেয়া যায়। কিন্তু শেষ পর্বের ব্যবহারিক পরীক্ষা যুক্তরাজ্য সহ নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশে যেয়ে দিতে হয়। ভারতেও দেয়া যায়।

বিপত্তি হচ্ছে, এ ডিগ্রিগুলি শেষ করার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। যেমন, এম আর সি পি প্রথম পর্ব সর্বোচ্চ সাতবার দেয়া যায়। প্রথম পর্ব শেষ করার সাত বছরের ভেতর পুরো ডিগ্রিটি শেষ করা বাধ্যতামূলক। নয়তো কোর্স থেকে বিচ্যুত হতে হয়। এম আর সি এস’র শেষ পর্ব চারবারের প্রচেষ্টার মধ্যে শেষ করতে হয়। নচেৎ বিদায়। এফ আর সি এস ঠিক একই রকম। প্রথম পর্ব চারবার দেয়া যায়। দ্বিতীয় পর্বও চারবার। শুরু করার সাত বছরের মধ্যে শেষ করতে হয়। যাঁরা এসব পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই এ প্রচেষ্টার শেষ পর্যায়ে রয়েছেন। 

বিশ্বের সীমিত কিছু কেন্দ্রের মধ্যে পরীক্ষার আসন প্রাপ্তি একটি চ্যালেঞ্জ। সব সময় সব কেন্দ্রে পরীক্ষার সুযোগ পাওয়া যায় না। কখনো কোন কেন্দ্রে আসন পাওয়া গেলে সাথে সাথে ফি পরিশোধ করতে হয়। ফি’র পরিমান আকাশচুম্বী। ডলার সংকটের এ যুগে ফি’র পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। পরীক্ষা ভেদে বর্তমানে এ পরীক্ষার ফি এক লক্ষ বিশ হাজার থেকে দু লক্ষ সত্তর হাজার টাকা। কঠিন এসব পরীক্ষার দুটি ধাপ পার করে, সিট পেয়ে, মোটা অংকের ফি পরিশোধ করে পরীক্ষা দিতে না পারলে তাঁদের বিগত পাঁচ সাত বছরের প্রচেষ্টা বিফলে যায়। প্রচুর সময় নষ্ট হয়।  অনেক অর্থ বিনষ্ট হয়। ডলার বাঁচাতে পরীক্ষা দেয়ার জন্য এঁদের বিদেশ সফর স্থগিত করলে পূর্বে লগ্নিকৃত অর্থ ও শ্রম -দুটোই জলে যাবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বৈশ্বিক দুর্মূল্যের প্রেক্ষিতে বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে যাঁরা এসব পরীক্ষায় ফি পরিশোধ করেছেন বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি পত্র পেয়েছেন তাঁদের নিজ খরচে বিদেশ গিয়ে পরীক্ষার সুযোগ দান করতে বিবেচনা করতে পারে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে কখনই বাধা প্রদান করা কাম্য নয়। আর সে উচ্চ শিক্ষা যদি নিজ খরচে হয়, তাহলে আর বাধা কেন ? অর্থ বিভাগ বিশ্বব্যাপী ডলার সংকটের প্রেক্ষিতে অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর বাতিল করে নিজ খরচে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নিমিত্তে বিদেশ সফরকে প্রয়োজনীয় ঘোষণা করতে পারে। উচ্চশিক্ষায় উৎসাহ দিতে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করবে বলে প্রত্যাশা করি। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭