ইনসাইড পলিটিক্স

স্বাধীনতা বিরোধী ১/১১ কুশীলবরাই প্রথম আলোর পক্ষে বিবৃতিদাতা


প্রকাশ: 10/04/2023


Thumbnail

স্বাধীনতা বিরোধী এবং এক-এগারোর কুশীলবরাই প্রথম আলোর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। গতকাল ৯ এপ্রিল (রোববার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম আলোর অন্যতম দোসর এবং ১/১১ কুশীলব ‘ডেইলি স্টার’র বাংলা বিভাগ ‘প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে নাগরিকের বিবৃতি’- শিরোনামে একটি সংবাদ পরিবেশন করে। ওই প্রতিবেদনে প্রথম আলো পত্রিকাটির পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে এই পত্রিকাটির পক্ষে বিবৃতিদানকারী এরা কারা? 

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সংখ্যায় দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বকে কটাক্ষ করে সংবাদ পরিবেশন করে দৈনিক প্রথম আলো। যে কারণে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল ও চক্রান্তকারীদের শাস্তি চেয়েছে দেশের স্বাধীনতা-সচেতন নাগরিক সমাজ। এই দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে মানববন্ধনে স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী এবং বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তির দোসর দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিকটির নিবন্ধন বাতিল এবং পত্রিকাটি বন্ধের দাবি করা হয়। 

এই মানববন্ধনের পর থেকেই দেশের স্বাধীনতা সচেতন ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে দেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল চেয়ে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ আয়োজন করেন- যা এখনও চলমান রয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাধীনতা সচেতন ব্যক্তিরা তাদের নিজস্ব ফেইসবুক স্ট্যাটাসে প্রথম আলো পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল এবং দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বকে কটাক্ষ করার হীন চক্রান্তে জড়িতদের বিচার দাবি করেন। এসব ফেইসবুক স্ট্যাটাস এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুড়ছে।        

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতেই নাগরিকদের অনেকেই বিবৃতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্র। সূত্র জানায়, এই বিবৃতিতে যারা অংশগ্রহণ করেছেন বা বিবৃতিতে যে ১২০ জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের অনেকেই প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার পালিত সুশীল সমাজ এবং সরকার বিরোধী চক্র। এদের অনেকেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাজাকারের সন্তান। আবার কেউ কেউ বিএনপি-জামায়াতের দোসর বা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। 

সূত্র বলছে, বিবৃতি প্রদানকারী এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী। তারা সরকার বিরোধী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। আসিফ নজরুল ১/১১ এর কুশীলব ছিলেন। এছাড়া ওই বিববৃতিতে নাম লিখিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। তিনিও বিএনপিপন্থী শিক্ষক রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। শুধু সরকারের সমালোচনাই নয়, তারা সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। যে কারণেই সরকার বিরোধী প্রচারণায় মত্ত এবং দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কটাক্ষকারী প্রথম আলোর পক্ষে তারা বিবৃতি দিয়েছেন। 

এখানে বিবৃতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাবা একাত্তরে সিলেট অঞ্চলের কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন। তার বাবা আত্মগোপনে থাকা যুদ্ধাপরাধী প্রয়াত সাবেক প্রতিমন্ত্রী রাজাকার সৈয়দ মহিবুল হাসান। কন্যা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশবাদী হয়েও বাবার ’৭১-এর অন্ধকার জীবনের ছায়ায় হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণের ইতিহাস আড়াল করেই ঢাকায় ওঠাবসা করেন সুশীলদের সঙ্গে। পরিবেশ রক্ষার নামে সেমিনার, গোলটেবিলে তিনি অনেক কথাই বলেন। কিন্তু শুধু বলেন না হবিগঞ্জের চুনারুঘাট-বাহুবলের কুখ্যাত রাজাকার তার বাবা সৈয়দ মহিবুল হাসানের কলঙ্কিত জীবনের কথা। আইনজীবী জেড আই খান পান্না, তিনিও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন। প্রথম আলোর পক্ষে তাদের বিবৃতি দেওয়াটাও স্বাভাবিক একটি ঘটনা।

এখানে আরও বিবৃতি দিয়েছেন শহিদুল আলম। তার বাবার নাম কাজী আবুল মনসুর এবং মায়ের নাম কাজী আনোয়ারা মনসুর। শহিদুল আলমের বাবা একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী একজন রাজাকার ছিলেন। তার মা-ও ছিলেন একজন রাজাকার।         

বিবৃতিতে নাম প্রকাশ হয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানেরও। ১৯৭১ সালে বদিউল আলম মজুমদারের বাবা ছিলেন রাজাকার। কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার পোলাইয়া গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বদিউল আলম মজুমদারের বাবা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করেছেন, মুক্তিকামী নিরীহ বাঙালির উপর আমানবিক অত্যাচার চালিয়েছেন। বদিউল আলম মজুমদারও ১/১১- এর অন্যতম কুশীলব ছিলেন। মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত খুশী কবির বাংলাদেশে বসবাস করেও দীর্ঘদিন বিদেশিদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। মূলত অর্থনৈতিক কারণেই তিনি দেশে বসবাস করেও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেছেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, তিনিও খুশী কবিরের মতোই সেই একই পথের পথিক। বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের বিদেশি দোসরদের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি দীর্ঘদিন থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে কাজ করে চলেছেন। কাজেই সরকার বিরোধী প্রথম আলোর পক্ষে তাদের বিবৃতি দেওয়াটা স্বাভাবিক।           

সাংবাদিকদের মধ্যে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লেখক সৈয়দ আবদাল আহমদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। এরা সবাই জাতীয় প্রেসক্লাবকেন্দ্রীক সাংবাদিক নেতা হলেও বিএনপির রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠা দলীয় সাংবাদিক। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর বিএনপিপন্থী অংশের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইলিয়াস খান। পরে তিনি গত কমিটিতে জাতীয় প্রেসক্লাবেরও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান কমিটিতে তিনি নেই। তাই বিএনপির এসব সাংবাদিকদের প্রথম আলোর পক্ষে বিবৃতি দেওয়াটাই সমীচীন বলে জানিয়েছে সূত্র।  

সূত্র বলছে, বিবৃতিতে অংশ নিয়েছেন ব্যারিস্টার যুবায়ের আহমেদ ভূইয়া, আইনজীবী ও রাজনীতিক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ব্যারিস্টার অনীক আর হক এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ’র বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া। প্রকৃতপক্ষে এরা সবাই বিএনপি এবং জামায়াতপন্থী আইনজীবী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ে যখন শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জানানো হয়েছিল। তখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে কাজ করেছিলেন। সে সময়ে মানবাধিকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। যার মূল হোতা ছিলেন সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া। যে কারণেই প্রথম আলোর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন এরা।  

এছাড়া, বিবৃতিতে নাম দিয়েছেন কবি টোকন ঠাকুর, কবি ও কথাসাহিত্যিক চঞ্চল আশরাফ। তাদের কবিতা এবং গল্প নিয়মিত প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। যে কারণে প্রথম আলোর পক্ষে তাদের বিবৃতি দিতেই হয়। এছাড়াও, চলচ্চিত্র নির্মাতা, কবি ও অনুবাদক, অভিনেত্রী, লেখক ও সাহিত্যিক যারা বিবৃতিতে অংশ নিয়েছেন, তারা আনেকটা বাধ্য হয়েই বিবৃতিতে নাম দিয়েছেন বলেও জানায় সূত্র।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭