ইনসাইড থট

রেখেছ বাঙালি করে...


প্রকাশ: 11/04/2023


Thumbnail

গত কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ করে টুইটার - এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  প্রথম আলো - কে কড়া ভাষায় সমালোচনা করায় ব্যাপক লেখালেখি চলছে। তার সাথে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না নেটিজেনরা। এদের মধ্যে অনেকে বিদেশের মাটিতে বসে দেশের বিরুদ্ধেই এমন ভাবে বিষেদগার করে চলছেন যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন মন্তব্য করে বিশাল অপরাধ করে ফেলেছেন। সত্য কথা বললে বলতে হয়, পশ্চিমা বিশ্বের মতো এসব তথাকথিত নেংটি নেটিজেনদের  একটা বদভ্যাস আছে। তারা মনে করে অন্যদের বিষয়ে বিশেষ করে দেশের বিরুদ্ধে  মন্তব্য করার ক্ষেত্রে তাদের ঈশ্বরপ্রদত্ত অধিকার রয়েছে। নিজ দেশের বিরুদ্ধে নাক গলালেও বিদেশে অবস্থান করা দেশের সম্পর্কে মন্তব্য করার সাহস রাখেন না। তারা ভালো করেই জানেন, সেটা পশ্চিমা বিশ্ব ভাল ভাবে নেয় না। তাই করলে যদি ওই দেশের নাগরিকত্ত্ব হারাতে হয় !

রাষ্ট্র, সমাজ, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এ ধরণের অসত্য পরিবেশন সর্বমহলের মতে একটি অপরাধ, ডিজিটাল অপরাধ। অপরাধ আর সাংবাদিকতা এক জিনিস নয়, কোনো সাংবাদিক যদি অপরাধ করে তার কি শাস্তি হবে না? কেউ যদি অপসাংবাদিকতা করে, স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে এবং একটি ছেলের হাতে ১০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে তার নামে অসত্য লেখে, চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন করে, সেটার কি বিচার হবে না? আমরা কি কেউ বিচারের উর্ধ্বে, আইনের উর্ধ্বে? তা তো নয়। ঐ সব নেটিজেনরা কি কখনো আমেরিকাতে গেলো ৩ মাসে ১৩৯টি গান ভায়োলেন্স - এ কতজন মারা গেছেন, কিংবা ইজরায়েল কর্তৃক মসজিদে নামাজরত অবস্থায় মুসলিমদের উপর অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন? কিছুদিন আগে বিবিসি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপর একটা প্রামাণ্য চিত্র প্রচার করেছিল, ভারত সরকার যে ভাবে ভারতের বিবিসি অফিসে চড়াও হয়ে কঠিন ব্যবস্থা নিয়েছিল, তখন তাদেরকে তেমন উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় নি। সেখানকার বিদেশী দূতাবাসগুলো মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল।   

গঠনমূলক সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু অশ্লীল ভাষার প্রয়োগ আর দেশের ইমেজ নষ্ট করার অধিকার থাকাটা কোনো ভাবেই বাঞ্চনীয় নয়। যারা এসব করে চলেছেন, তাদেরকে আয়নাতে মুখ দেখার অনুরোধ করি আর তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বিশ্বের দেশে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদাহরণ আছে, এ ধরনের আইন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে। যুক্তরাজ্যে সাইবার সিকিউরিটি ল’জ এন্ড রেগুলেশন ২০২২, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার ল’ এন্ড পানিশমেন্ট এবং এ ধরণের আইন বিশ্বের বহু দেশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের অপরাধের শাস্তি হচ্ছে ২০ বছর কারাদন্ড এবং ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কারণে যদি কারো মৃত্যু হয়, তবে সেই ডিজিটাল অপরাধের শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড। আমাদের দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য অনেক দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনেক বেশি কঠিন।

বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বঙ্গমাতা’র শেষ দুই পঙ্‌ক্তিতে লিখলেন -
সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ কর নি।’

বাঙালির বৃটিশ ঘেষা মিনমিনে স্বভাবকে কটাক্ষ করে তিনি আরো লিখলেন, ‘বাঙালি চিরদিন দালালী করতে পারে, কিন্তু দল গড়ে তুলতে পারে না।’ কবির এসব উক্তিতে নিজ জাতিসত্তা নিয়ে এহেন অসম্মানসূচক মন্তব্যে আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগতো বৈকি। ভাবতাম কবিগুরু নিজে বাঙালি হয়েও কি করে পারলেন এ মন্তব্য করতে!

সে প্রশ্নের উত্তর পেতে অবশ্য বেশি বেগ পেতে হয় নি। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে ফিরে ১৭ জানুয়ারির জনসভায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,‘কবিগুরু দেখে যান বাঙালি মানুষ হয়েছে...মনে সন্তোষ এসেছিলো এই ভেবে যে, বাঙালির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথকে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট রাতে এই বাঙালিরাই যখন বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করলো, তখন কবিগুরুর উক্তির যথার্থতা আবার প্রমাণিত হয়ে গেল।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭