ইনসাইড আর্টিকেল

রমজান এবং রোজা সম্পর্কে কি বলছে কোরআন?


প্রকাশ: 12/04/2023


Thumbnail

ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে সিয়াম বা রোজা অন্যতম একটি স্তম্ভ। পবিত্র রমজান মাসের রোজা সম্পর্কে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্যে সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহ ভীরুতা অবলম্বন করতে পারো।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৩)।

আল্লাহতাআলা বলেন,‘সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূর্ণ করবে। যাদের জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক হয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া-একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্যে অধিকতর কল্যাণকর যদি তোমরা তা জানতে।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৪)। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা বলেন, ‘রমাজান মাস, এ মাসেই মানুষের জন্য আলোর দিশা এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে এবং কেউ অসুস্থ্য থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা সহজ তাই চান এবং যা তোমাদের জন্যে কষ্টকর তা চান না, এজন্যে যে তোমাদের সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মাহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৫)। 

আল্লাহতাআলা বলেন, ‘সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্যে তোমাদের স্ত্রীদের বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্যে এবং তোমরাও তাদের জন্যে পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের সাথে খিয়ানত করছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে মার্জনা করেছেন, সুতরাং এখন তোমরা তাদের সাথে সংগত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন (অর্থাৎ সন্তান) তা অন্বেষণ করো। আর তোমরা আহার করো ও পান করো যতক্ষণ তোমাদের জন্যে (রাত্রির) কালো রেখা থেকে ফজরের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়ে যায়। এরপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো। আর তোমরা মসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা, সুতরাং এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ মানুষের জন্যে তার আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া বা আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারে।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৭)। 

পবিত্র কোরআনে সুরা ‘বাকারাহ’র ১৮৩, ১৮৪, ১৮৫ ও ১৮৭- এই আয়াতগুলোতে রমজান মাসে আল্লাহতাআলা আমাদের রোজা রাখতে বলেছেন এবং রোজার বিধানসমূহ দিয়েছেন। তিনি এটাও বলেছেন, আন তাসুমু খায়রুল লাকুম ইন কুনতুম তা’লামুন’; অর্থাতৎ রোজা রাখাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে। কিন্তু এই বোঝার কাজটা আমরা পরিপূর্ণভাবে পেরেছি বলে মনে হয় না।

আমরা রোজা রাখি অনেকটা অভ্যাসবশত এবং আমাদের রোজা অনেকাংশে শুধু উপবাসে থেকে যায়, যেটা আল্লাহর কাছে মোটেই কাম্য নয়। মনে রাখতে হবে, রোজা নিছক উপবাস নয়, এর সঙ্গে নিয়ত ও নিয়ম সংশ্লিষ্ট আছে। রোজা মানুষকে সংযম শেখায়। এটা মানুষের জন্য একটা বড় পাওয়া। রোজার কিছু মূল্যবোধ আছে, যেটা নিজের জন্য, প্রতিষ্ঠানের জন্য ও দেশের জন্য মঙ্গলজনক। 

রোজা দেহের শৃঙ্খলার জন্যও প্রয়োজনীয়। আমাদের শরীর একটি ইঞ্জিনবিশেষ। খাবার হচ্ছে এই ইঞ্জিনের জ্বালানি। যতক্ষণ পাকস্থলীতে খাবার থাকে, ইঞ্জিন চলতেই থাকে। অবশ্য কিছুক্ষণ খাবার না খেলেও শরীরের মধ্যে যে খাদ্য মজুত থাকে, মেদ বা চর্বি তা জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। অত্যধিক খাবার গ্রহণ করার ফলে শরীরে যে বাড়তি মেদ জন্মে, তা থেকে শরীরে অনেক ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। তাই এই মেদকে জ্বালানি হিসাবে পুড়িয়ে ফেলাই বাঞ্ছনীয়। রোজা এই প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। তবে সারা দিন রোজা রাখার পর রাতে বেশি খেলে এ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। সব ব্যাপারেই রোজা মানুষকে সংযমী হতে সহায়তা করে। খাদ্যে সংযমী হওয়া যায়, তবে শরীরের ভেতরের যে জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া হয়, সেগুলোর পরিমাণ কিছুটা কম হয়। 

মানবদেহের ইঞ্জিনটা কিছুটা বিশ্রাম পায়। আমরা কোনো যন্ত্র সারা বছর বা বছরের কিছুটা সময় চালানোর পর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে চাই- করাটা বাঞ্ছনীয়- তাহলে মেশিনের আয়ুষ্কাল বাড়ে। তবে মানুষের যান্ত্রিক ইঞ্জিনটাকে একেবারে থামিয়ে দেওয়া যায় না। বস্তুত, মানুষের জন্মের পর থেকেই হৃদপিণ্ড একটা ভাল্বের মতো শরীরে রক্ত পাম্প করতেই থাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

তবে হৃদপিণ্ড ও দেহের ইঞ্জিনের অন্য যেসব যন্ত্রপাতি আছে, সেগুলোকে একেবারে থামিয়ে বিশ্রাম দিতে না পারলেও খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কম হলে, অর্থাৎ শরীরে খাদ্য নামক জ্বালানি কম প্রবেশ করালে কয়েকটি অংশ সামান্য বিশ্রাম পায়; বিশেষ করে ওই সব অংশ, যেগুলোর সঙ্গে পাকস্থলীর কার্যবিধির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। তা ছাড়া সারা বছর সমস্ত শরীরে টক্সিন বা জৈব বিষ জমা হয়, এক মাস রোজা রাখার ফলে সেই জৈব বিষ দূরীভূত হয়। এই জৈব বিষ দেহের স্বায়ু ও অপরাপর জীবকোষকে দুর্বল করে দেয়। রোজা শরীরের রক্তপ্রবাহকে পরিশোধন করে এবং সমগ্র প্রবাহপ্রণালি নবজীবন লাভ করে। 

পবিত্র কোরআনে যেমন রমজানে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে, তেমনি মানব শরীরের জন্যও রোজা রাখা অত্যন্ত উপকারী। সংযমের মাস রমজান আমাদের পারিবারিক, সামাজিক এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সংযমী হতে শেখায়। 

রমজান মাসের শবে কদরে নাজিল হয় পবিত্র কোরআন। শবে কদরের অর্থ কদরের রাত বা মহিমান্বিত রজনী। কদর বলতে একটি বিশেষ মর্যাদা বা অবস্থান বোঝায়। শবে কদরকে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এটাকে আক্ষরিক অর্থে না নিয়ে যদি এর স্পিরিটটা নিই, তাহলে এটাই বোঝায় যে সবে কদরের গুরুত্ব বা মর্যাদা অপরিসীম। এই মর্যাদা কিসের কারণে? এ কারণে যে এই রাতে সকল গ্রন্থের সেরা গ্রন্থ যে ঐশীগ্রন্থ কোরআন নাজিল হয়েছিল ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে, তা মানবজাতির জন্য এক অনবদ্য সংবিধান।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭