ইনসাইড থট

কৃষকের বিড়ম্বনা


প্রকাশ: 13/04/2023


Thumbnail

চাষীরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলান, এটা সবার জানা।কিন্তু এই পরিশ্রমের মাত্রা যে কতখানি, সেটা সবার জানা নেই। লাঙলের জায়গায় ট্র্যাক্টর, পাওয়ার টিলার এসেছে, কিন্তু অন্য শ্রমগুলি প্রায় একই আছে। জমিটা তৈরি হওয়ার পর শুরু হয় বীজ বপন।কোন ধান, কতখানি জলে কত সময় থাকলে সুস্থ অঙ্কুরোদ্গম হবে, অভিজ্ঞ চাষী তা জানেন।সেই ধান মাঠে নিয়ে গিয়ে নিয়ম মেনে তিনি বপন করেন।বীজ সবাই সঠিক ভাবে বুনতে পারে না।এক জায়গায় অধিক বীজ দিয়ে ফেললে গাছ ভাল বার হয় না, চারা দুর্বল হয়।যন্ত্রের সাহায্যে বীজ বপনের সুবিধা বহু জায়গায় নেই।যন্ত্রের দাম চড়া, ভাড়াও অনেক।অতএব, নিজের হাতই ভরসা।দীর্ঘ সময় জলে দাঁড়ানোর ফলে পায়ে-হাতে হাজা, চুলকানি, জ্বর-সর্দি-কাশি কৃষকের নিত্যসঙ্গী।শরীর খারাপ নিয়েও মাঠে যেতে বাধ্য হন।ধানের চারা বার হওয়ার কত দিন পরে সেটা স্থায়ী রোপণের উপযুক্ত হবে, সেটা জানতে হয়।অনভ্যস্ত লোক চারা রোপণ করতে গেলে গাছ দাঁড়াবে না, একটু পরই হেলে পড়বে।কীটনাশক প্রয়োগও কঠিন কাজ।জলে দাঁড়িয়ে মশা, কীটপতঙ্গের কামড় খেতে খেতে নাক-মুখ চাপা দিয়ে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছড়াতে হয়।বহু কৃষকের মৃত্যু হয় কেউটের কামড়ে।অতঃপর ধান পাকলে মাঠে নেমে ধান কাটা, ঝাড়াই, পরিষ্কার করা, বস্তাবন্দি করা— প্রতিটি কাজই পরিশ্রমসাপেক্ষ।একই মেহনত আলু, আনাজ, গম, ডাল, পাট, চা, আখ, তৈলবীজ, ফল চাষেও।তবেই ফসল ঘরে আসে।

কিন্তু এই প্রাণান্তকর পরিশ্রমের মূল্য কি কৃষকরা আজও পান? হ্যাঁ, এটা ঠিক, কৃষকদের অবস্থার আগের চেয়ে, অর্থাৎ পঞ্চাশ বছর আগে যা ছিল, তার চেয়ে উন্নতি হয়েছে।আগে দিনে এক বারই হয়তো গোটা পরিবারের আহার জুটত, কৃষক বধূ গিঁট দিয়ে কাপড় পরতেন, শিশুরা উলঙ্গ ঘুরে বেড়াত।খাল-বিলে জাল দিয়ে চুনো মাছ ধরতে পারলে তেলমশলা বিহীন শুধু ঝাল রান্না হত।তেল কেনার পয়সা কোথায়? তুলনায় বর্তমান কৃষকরা একটা চোখে দেখার মতো মজুরি এখন পান।তবে বহু কৃষক এখনও প্রায়, কিংবা সম্পূর্ণ রূপেই, ভূমিহীন।

আনাজপাতি চাষ যাঁরা করেন, তাঁরা যদি নিজেদের ফসল নিজেরাই বাজারে নিয়ে গিয়ে বসেন বিক্রির জন্য, তাতে লাভবান হন।কিন্তু সেটা একমাত্র সম্ভব ক্ষুদ্র চাষীর পক্ষে।তবে তাঁদের জিনিসপত্রের পরিমাণও থাকে কম। কাজেই, দরিদ্রই থেকে যান তাঁরা।তুলনায় বড় চাষীকে সেই দালাল, ফড়িয়া, মহাজনের হাত ধরতেই হয়।এই সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকেন ফড়িয়ারা।নিতান্ত স্বল্পমূল্যে জিনিস খরিদ করে, চাষীকে ঠকিয়ে বস্তাবন্দি জিনিস নিয়ে চলেন মুনাফা অর্জনের পথে।তার পর, কোনও কোনও বছর ফলনের পরিমাণ অধিক হওয়ার পাইকারি বাজারে ফসলের দাম অস্বাভাবিক ভাবে কমে যায়।ফলে চাষের খরচ ওঠে না।ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পেরে বহু চাষী আত্মহননের পথ বেছে নেন।এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হলে প্রশাসনের মানবিক এবং কর্তব্যনিষ্ঠ হতে হবে।চাষী একান্তই ঋণশোধে অপারগ হলে, তাঁকে রক্ষার দায়িত্ব প্রশাসনের।A farmer is a magician who produces money from the mud. আমরা যেন ভুলে না যাই : একজন কৃষক একজন জাদুকর যিনি কাদা থেকে অর্থ উৎপাদন করেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭