ইনসাইড আর্টিকেল

মাহে রমজানে বেজোড় রাতের তাৎপর্য


প্রকাশ: 15/04/2023


Thumbnail

পবিত্র মাস রমজান। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সমগ্র বিশ্বের মুসলিমরা সিয়াম সাধনা করছেন। রমজানের শেষ দশ দিনের বিশেষ একটি আমল হলো- ইতিকাফ। ইতোমধ্যে ইতিকাফকারীগণ মহান আল্লাহর ঘর মসজিদে অবস্থান নিয়েছেন। ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো, পার্থিব ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া। বিনয় নম্রতায় নিজেকে মহান আল্লাহর দরবারে সমপর্ণ করা। বিশেষ করে লাইলাতুল কদর অন্বেষণে তৎপর থাকা এবং তাতে ইবাদত করার সুযোগ লাভ করা।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো। (সহীহ বোখারী: ২০২০)। 

পবিত্র কোরআনে লাইলাতুল কদরকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমাময় একটি রাত। এই রাতের ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা এক হাজার মাসের রাত্রিগুলোতে ইবাদত-বন্দেগির চেয়েও বেশি।

এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত হিসেবে আমাদের উপর বিশেষ এক অনুগ্রহ। কেননা এক হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে আমাদের সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কালে অধিক সওয়াব ও কল্যাণ অর্জনের সুযোগ দান করেছেন।

সুরা কদর ও বাকারায় বর্ণিত আয়াত এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। কিন্তু এর সঠিক তারিখ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। ইসলামি স্কলাররা বিভিন্ন হাদিস পর্যালোচনা করে বলেন, লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে আসে। কিন্তু এরও কোনো তারিখ নির্দিষ্ট নেই। বরং যে কোনো রাতে হতে পারে। আবার প্রত্যেক রমজানে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। সহীহ হাদিসের ভাষ্যমতে, শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজান মাসের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করো। (সহীহ বোখারী: ২০২১)। 

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো। (সহীহ মুসলিম: ১১৬৯)। 

হাদিসের এসব বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই রমজান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সম্ভাবনা থেকেই যায়। ফলে অবহেলা না করে রমজানের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাতের আশায় ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা দরকার। কেননা এই রাতের ইবাদত বন্দেগিতে রয়েছে বিশেষ ফজিলত। আল্লাহ তায়ালা এই রাতে বান্দাদেরকে ব্যাপক হারে ক্ষমা করেন এবং অসংখ্য কল্যাণ দান করেন।

হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রাতে নামাজ আদায় করতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ মুসলিম: ৭৬০)। 

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, এতে (রমজানে) এমন এক রাত রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে সে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। (মুসনাদে আহমাদ: ২২৩০)। 

কদরের রাত এই কারণেও গুরুত্বপূর্ণ, এই রাতে মানুষের পুরো বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। মানুষের পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য, অর্থাৎ তার সামনে যা যা আসবে বা তার জীবনে যা কিছু ঘটবে, সেসব নির্ধারণ করা হয়। তার বেঁচে থাকা কিংবা মৃত্যু, তার ভালো-মন্দ, তার রুটি-রুজি ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণ করা হয় এই রাতে। আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘(কদরের) এই রাতে প্রত্যেক হেকমতপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ (সুরা দোখান, আয়াত: ৪)। 

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, তুমি কোনো মানুষকে বাজারে হাঁটাচলা করতে দেখবে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায়। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করে বলেন, প্রতি বছরই এ বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়ে যায়। (মুসতাদরাকে হাকিম: ২/৪৪৮)। 

আমাদের থেকে লাইলাতুল কদরের সুনির্দিষ্ট তারিখ গোপন রাখা হয়েছে। তবে হাদিসে কিছু নিদর্শন বলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিরাট হেকমত ও রহস্য। এর দ্বারা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো, এই মহামূল্যবান রাতের অনুসন্ধানে বান্দারা সাধনা করুক। এক রাতের জন্য একাধিক রাত জাগ্রত থাকুক। তাই আমাদের জন্য করণীয় হলো, রমজানের শেষ দশ দিন মহান আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকা। বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে। তবেই আমরা মহিমান্বিত সেই রাতে ইবাদতের সুযোগ লাভ করতে পারব।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭