ইনসাইড আর্টিকেল

ভারতে পবিত্র মাহে রমজান মাস যেভাবে পালিত হয়


প্রকাশ: 16/04/2023


Thumbnail

পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পার মাস। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস এই রমজান। তাই এই মাসের বিশ্বের সমস্ত মুসলিম উম্মাহ ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। তেমনি আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের মুসলমানরাও আনেকটা আমাদের দেশের মতো করেই পবিত্র রমজান উদযাপন এবং রোজা পালন করে থাকেন।    

ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। হিন্দু প্রধান এই দেশটিতে সংখ্যালঘু হিসাবে বসবাস করছেন আনুমানিক ২০০ মিলিয়ন মুসলমান।রপিউ রিসার্চ সেন্টারের নতুন তথ্য অনুসারে, আগামী কয়েক দশকে ভারত ইসলাম এবং হিন্দুধর্ম পালনকারী জনসংখ্যার সর্ববৃহৎ দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। ২০৫০ সালে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ৩১১ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১১ শতাংশ।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অনুসারে এবারের রমজানকে কিছুটা ভিন্নমাত্রায় উদযাপন করছেন দেশটির মুসলিমরা। রমজান মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র মাস, এ সময় সুবহে সাদিক থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা রাখা হয়। বেশি বেশি ইবাদত, আত্মসংযমের মাধ্যমে রবের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা হয়।

ঠিক তেমনি ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি পবিত্র রমজান মাসকে একটি আলাদা পরিচয় দেয়। রমজানে রাজধানী নয়াদিল্লির মুসলমানরা তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অনুসারে পবিত্র মাসের আবির্ভাব উদযাপন করতে একত্রিত হয়ে রমজানকে একটি আলাদা পরিচয় দিয়েছেন।

ভারতের অন্যতম পুরোনো শহর দিল্লিতে রোজাদারদের ঘুম ভাঙাতে গান, গজল, তেলাওয়াত পরিবেশন করেন সেহরিওয়ালারা। এটি ভারতের অত্যন্ত পুরোনো একটি ঐতিহ্য। অনেক কিছু পরিবর্তিত হলেও দিল্লি তার এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এটি শহরের একটি পুরোনো মোঘল সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। পবিত্র রমজান মাসে সেহরিওয়ালারা সূর্যোদয়ের আগে শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। আল্লাহ ও নবীর নাম উচ্চারণ করে রোজাদারদের সেহরি গ্রহণ করতে আহ্বান জানায়। তারা বাড়ির দরোজা, দেয়ালে টোকা দেওয়ার জন্য লাঠি বা বেত বহন করে। সেহরিওয়ালারা এ দায়িত্ব বংশ-পরম্পরায় পালন করে থাকে। নতুন নতুন পেশায় অংশগ্রহণ বাড়ছে, ফলে তাদের সংখ্যা কমছে; তবুও পুরোনো দিল্লিতে এ প্রথা এখনও চালু রয়েছে।

ভারতের মুসলমানরা জুমার নামাজের সময় মসজিদে সমবেত হয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। নতুন দিল্লির মাদ্রাসায় তরুণ ছাত্ররা কুরআন তেলওয়াত করে। যে সমস্ত ছাত্ররা পুরো কুরআন মুখস্ত করে অর্থাৎ কোরআনে হাফেজ হয়, তাদের দিল্লির বিভিন্ন মসজিদে নামাজের সময় কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য পাঠানো হয়।

ভারতে পুরো রমজান মাসে মসজিদগুলো মুসল্লিদের চাপে থাকে একেবারে ঠাসা। বিশেষ করে, তারাবির নামাজে মসজিদে ঠাঁই নেই অবস্থার সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো স্থানে মসজিদ ছাড়িয়ে রাস্তায় পর্যন্ত কাতার ছড়িয়ে পড়ে। বিপুলসংখ্যক মানুষ নামাজের জামাতে শরিক হয়। শান্তি-সৌহার্দ্যের জন্য মোনাজাত করে। ভারতের মসজিদগুলোতে সাধারণভাবে ২৭ রমজানের মধ্যেই তারাবিতে পুরো কোরআন খতম হয়। তবে কোনো কোনো মসজিদে প্রতি ৫ রোজায় একবার পবিত্র কোরআন পাঠ সম্পন্ন করা হয়। সময়-সুযোগের আলোকে মুসল্লিরা সংশ্লিষ্ট মসজিদে তারাবি আদায় করেন। কোনো কোনো স্থানে মসজিদ কমিটি বিশেষ নামাজের পর স্থানীয় ভাষায় পবিত্র কোরআনের তাফসির মাহফিলের আয়োজন করেন।

ভারতের মুসলমানরা এই মাসে দরিদ্রদের সাহায্য করাকে সওয়াবের কাজ বলে মনে করে। রমজানে ভারতের বাজারগুলোতে প্রচুর জনসমাগম থাকে। এসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ইফতারের জন্য ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়। এই দেশে সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বিভিন্ন ধরণের খেজুর আমদানি করা হয়। এই মাসে বাজারগুলো খেজুরে ভরে যায়। কারণ এ দেশের মুসলমানরা খেজুর দিয়ে তাদের ইফতারি করতে পছন্দ করে।

ভারতের মুসলিমরা সাধারণত মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করে। তবে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র‍্যে ভরপুর এখানকার একেক রাজ্যের ইফতারির আয়োজন একেক রকম। যেমন হায়দরাবাদের লোকজনের খাবারের তালিকায় থাকে হালিম, কলকাতার ইফতারে থাকে খেজুর ও বিভিন্ন ধরনের ফল এবং চিকেন শর্মা, বটি কাবাব, কাটলেটের মতো মুখরোচক খাবার। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারত বিশেষ করে তামিলনাড়ু ও কেরালায় ইফতারের প্লেটে থাকে ননবো কাঞ্জি নামের এক ধরনের খাবার।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭