ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

সুদানে সামরিক-বেসামরিক সেনা সংঘর্ষ, নেপথ্যে কি?


প্রকাশ: 17/04/2023


Thumbnail

ক্ষমতার লড়াইয়ে সেনা-আদা সেনা লড়াই চলছে সুদানে। শনিবার শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ রাজধানী খার্তুমসহ অন্যান্য শহরেও এর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কেন দেশটিতে এই সেনা-আধা সেনা সংঘর্ষ? বেশির ভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, সুদানে যে লড়াই শুরু হয়েছে তা দেশটির সামরিক নেতৃত্বে থাকা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এবং নিয়মিত সৈন্যদের সামরিক শত্রুতার প্রত্যক্ষ ফলাফল। বিবিসি। 

সংঘর্ষের পটভূমি 

সুদানে ২০২১ সালে অক্টোবরেও একটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়। এর পর থেকেই দেশটি ট্রানজিশনাল সার্বভৌমত্ব কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমান বিরোধের কেন্দ্রেও দুজন সামরিক ব্যক্তি রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং হেমেদতি নামে পরিচিত আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো। এক লাখ শক্তিশালী আরএসএফ মূল সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা। এরপর নতুন বাহিনীকে নেতৃত্বদানে কে নিযুক্ত হবেন। বেসামরিক শাসনের দিকে প্রস্তাবিত পদক্ষেপসহ আরও কিছু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে উভয়ের মধ্যে মতোবিরোধ নিয়েই মূলত এই সংঘর্ষ।  

কেন শনিবারই শুরু হলো সংঘর্ষ?

সম্প্রতি আরএফএস সদস্যদের সারা দেশে পুনরায় মোতায়েন করা হয়। সুদানের নিয়মিত সেনাবাহিনী এটিকে তখন থেকেই একটি হুমকি হিসাবে দেখে। আলোচনার মাধ্যমে সেনা মোতায়েন প্রত্যাহারের বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টাও করা হয়। তবে কোনো লাভ হয়নি। মূলত এর জের ধরেই শনিবার সকালে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। তবে কোন বাহিনী প্রথম হামলা শুরু করে তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে এটি সুদানের পরিস্থিতিকে অধিকতর খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। কারণ ইতোমধ্যেই অনেক সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কূটনীতিকরা উভয়পক্ষকে লড়াই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। 

আরএসএফ বাহিনী আসলে কারা?

২০১৩ সালে গঠিত হয়েছিল আরএসএফ বাহিনী। এর উৎপত্তি কুখ্যাত জানজাউইদ মিলিশিয়া (সুদানি আরব মিলিশিয়া গ্রুপ) থেকে যারা সুদানের দারফুরে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। তার পর থেকেই জেনারেল দাগালো এদের নিয়ে একটি শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তোলেন; যারা ইয়েমেন এবং লিবিয়ার সংঘাতেও হস্তক্ষেপ করেছিল। এছাড়াও বাহিনীটি সুদানে ২০১৯ সালের জুনে ১২০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে হত্যা করায় তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। 

সংঘর্ষে কেন সামরিক বাহিনী দায়ী? 

২০১৯ সালে সুদানে প্রায় তিন দশক ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। দেশটিতে সেই সময়ের বিক্ষোভের পর এটিই সর্বশেষ সংঘর্ষ। সেই সময়েও সেনাবাহিনীই ওমর আল-বশিরের অপসারণের জন্য অভ্যুত্থান করেছিল। কিন্তু দেশটির সুশীলরা গণতান্ত্রিক শাসন শুরু করার দাবি জানাতে থাকে। এর পর আরও একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবরে আরেকটি অভ্যুত্থানে সেই সরকারকেও উৎখাত করা হয়। সে সময় থেকেই জেনারেল বুরহান ও জেনারেল দাগালোর মধ্যে সম্পর্কের বৈরিতা বাড়তে থাকে। বেসামরিকদের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার জন্য গত ডিসেম্বরে একটি কাঠামোগত চুক্তিতেও সম্মত হয় তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চুক্তিটির কোনো সুরাহা হয়নি। তাই ধারণা করা হচ্ছে সেনাবাহিনী কখনোই বেসামরিকদের হাতে ক্ষমতা না দিতেই এই সংঘর্ষের সৃষ্টি করেছে। 

কোনো দিকে যেতে পারে সংঘর্ষের ভবিষ্যৎ?

সুদানের রাজনৈতিক ব্যক্তি, কূটনৈতিক বিশ্লেষকসহ আন্তজার্তিক মহল মনে করছে সংঘর্ষ নিয়মিত চলতে থাকলে দেশ আরও ভাগ হবে। যেমন দক্ষিণ সুদান ভাগ হয়েছিল। এ ছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধিসহ অবকাঠামোগত ক্ষতি ও ব্যাপক প্রাণহানি হতে পারে। ইতোমধ্যে সহিংসতাটি সাধারণ সুদানিজদের একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। 

এছাড়া যেসব কূটনীতিক সুদানের বর্তমান সরকারকে বেসামরিক শাসনে ফিরে আসার আজ্বান করেছিলেন তারাই সামরিক সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক আরএসএসের দুই জেনারেলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করতে বলতে পারেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭