ইনসাইড পলিটিক্স

নীরবতা ভাঙছেন খালেদা: উদ্বিগ্ন তারেক


প্রকাশ: 17/04/2023


Thumbnail

দীর্ঘ প্রায় চার বছর পর নীরবতা ভাঙছেন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৯ সালের পর থেকে তাঁঁর কোনো কথাবার্তা গণমাধ্যমে দেখা যায়নি বরং এ সময় তিনি অসুস্থতা এবং ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। এরকম বাস্তবতায় রাজনীতিতে আস্তে আস্তে তিনি দূরে সরে যেতে থাকেন এবং তাঁর বদলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। একসময় বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির রাজনীতিতে অপাঙ্‌ক্তেয় এবং অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠেন। কারণ কোন বিষয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করেনি। এমনকি বেগম খালেদা জিয়া ২০২০ সালের মার্চে যখন প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ফিরোজায় অবস্থান করেন তখনও তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক বিষয়ে যোগাযোগ রাখা বন্ধ করেন। 

খালেদা জিয়ার জামিনের শর্তে তাঁর বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণের কথা বলা হয়েছিল। এই শর্তে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা বিবৃতি দিতে পারবেন না এমন কোনো বক্তব্য ছিল না। কিন্তু তারপরও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সবকিছু থেকে দূরে রাখা হয়। বেগম খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন বিবৃতি দেয়া থেকেও তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গত কয়েকটি ঈদের দিনে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির নেতারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বটে তবে সেটি আনুষ্ঠানিকতার বাইরে কিছু ছিল না বলেই বিএনপি নেতৃবৃন্দ স্বীকার করেছেন। সেই বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ করে রাজধানীতে নীরবতা ভেঙেছেন। আর এটি বিএনপির মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে সৃষ্টি করেছে। 

গতকাল বেগম খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তাঁর (খালেদা জিয়া) বাসভবনে ডেকে নিয়ে যান। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রথমে শামীম ইস্কান্দার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের কথা জানান। কিন্তু সেই সময় শামীম ইস্কান্দারের কথায় পাত্তা দেননি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পরপরই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরাসরি ফোন করেন বেগম খালেদা জিয়া এবং তাকে দেখা করার জন্য বলেন। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাত আটটায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল এবং বিএনপি'র কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা আসলে কি করতে চাচ্ছে এটি নিয়েও তিনি (খালেদা জিয়া) জানতে চান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে জানান যে যা কিছু করা হচ্ছে সবই লন্ডনের নির্দেশে করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা বলেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়াকে বলেন যে তাদের দল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে একটি অবস্থান গ্রহণ করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া বলেন যে সে সম্পর্কে আমি পরে বলব। ঈদের ছুটিতে তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে বৈঠকের আহ্বান করেছেন এবং সেই বৈঠকে তিনি নির্বাচনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

একাধিক বিএনপির নেতা মনে করছেন যে সরকারের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার একটি গোপন যোগাযোগ হয়েছে, যেখানে বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের ব্যাপারে টোপ দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া যদি বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে যান তাহলে পরে তাকে তার বিদেশযাত্রার পথ সুগম করে দিবে সরকার। বিএনপির পরিবারের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিএনপির পরিবারের কেউ কেউ খালেদা জিয়াকে শেষ পর্যন্ত বিদেশে পাঠানো হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

তারা মনে করছেন যে সরকার হয়তো বেগম খালেদা জিয়াকে ব্যবহার করে ছেড়ে দেবে। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসে তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে এবং সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর বেগম জিয়া যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তারেক জিয়া আন্দোলনের ছক লন্ডভন্ড হয়ে যাবে এবং বিএনপি তখন দুই ধরনের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে একটা বিভক্তির দিকে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকে মনে করেন যে বিএনপিতে বিভক্তি হবে না। কারণ তারেক জিয়ার চেয়ে খালেদা জিয়ার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। খালেদা জিয়া যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার নির্দেশ দেন তাহলে বিএনপির মধ্যে হতাশা হবে বটে কিন্তু বিকল্প তাদের কাছে কিছু থাকবে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭