ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচন নিয়ে উভয় সংকটে আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 17/04/2023


Thumbnail

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা জলে কুমির ডাঙায় বাঘের মতোই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একদিকে যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে এই নির্বাচন অর্থহীন হবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। আবার এই নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করছেন। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, আগামী নির্বাচন ২০১৪ বা ২০১৮ এর মত হলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। ২০১৪ তে আওয়ামী লীগ যেভাবে বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন করেছিলেন এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল সেটি এবার সম্ভব হবে না। কারণ আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ। অংশগ্রহণমূলক বলতে তারা বিএনপির অংশগ্রহণের কথাটি ইঙ্গিত করেছেন। ফলে বিএনপি যদি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত হবে বটে, কিন্তু সেটি আন্তর্জাতিকভাবে এবার গ্রহণযোগ্য হবে না। আর এরকম অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী লীগ ২০১৪-এর মত টানা পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। 

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা অনেক বেশি বিস্তৃতি লাভ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দফায় দফায় বিভিন্ন মহলের সাথে বৈঠক করা হচ্ছে। এ রকম বাস্তবতায় আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে আওয়ামী লীগ সংকটে পড়তে পারে বলে কোন কোন মহল মনে করছেন। আবার শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হয় তাহলে বেশ কিছু ছাড় দিতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ একটি আপোষ ও সমঝোতার মধ্যে দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসবে যেখানে বিএনপির পক্ষে কিছু কিছু ছাড় দিতে হবে। যেমন সরকারের ক্ষমতা সীমিত করা বা সরকারে অন্তত কয়েকজন নির্দলীয় ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। যদি এসব করা হয় তাহলে বিএনপি উজ্জীবিত হবে। বিশেষ করে বিএনপি'র পক্ষ থেকে একাধিক বৈঠকে বিভিন্ন বিদেশী দূতাবাস কে বলা হয়েছে যে, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন এবং মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। যেন তারা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। 

এ রকম ঘটনা যদি শেষ পর্যন্ত ঘটে, সে ক্ষেত্রে বিএনপি আগামী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দীতা গড়ে তুলতে পারে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে কোনো অবস্থাতেই যেন ২০১৮ এর মত নির্বাচন না হয় সে ব্যাপারে পর্যবেক্ষক মহল যেমন সচেতন তেমনি বিএনপিও সচেতন। এই বাস্তবতায় নির্বাচনে জয়লাভ আওয়ামী লীগের জন্য সহজলভ্য হবে না। অনেকেই মনে করছেন যে, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগের অনেক এমপিদের মধ্যে এক ধরনের আত্মম্ভরিতা, অহংকার, অহমিকা তৈরি হয়েছে। সেই অহংকার এবং অহমিকার কারণে জনগণের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। সেই নেতিবাচক ধারণাগুলোকে কাটিয়ে ওঠার জন্য আওয়ামী লীগকে অবশ্যই কিছু কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। সেই জন্য আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য কোনোভাবেই সহজ বিষয় হবে না। চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার জন্য আওয়ামী লীগকে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭