ইনসাইড থট

পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে আবারও ‘মিডিয়া ক্যু’


প্রকাশ: 18/04/2023


Thumbnail

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের মন্তব্যকে বিকৃত করে আবারও মিডিয়া ক্যু হয়েছে।একাধিক প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ায় একটি সংবাদ গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত হয়েছে। পত্রিকার শিরোনাম-‘নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছে সরকার’ (প্রথম আলো, ১৭ এপ্রিল)।প্রথম আলোর মতো আরো অনেক পত্রিকা এবং টিভি ও অনলাইন নিউজে মন্ত্রী মহোদয়ের মন্তব্যকে বিকৃত করে মিথ্যাচার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ড. এ কে আব্দুল মোমেন সেদিন কি কথা বলেছিলেন তার ভয়েজ রেকর্ড আমাদের কাছে আছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিঙ্কেনের মতামতও সকলের কাছে পরিষ্কার করেছেন। তবু মিডিয়া ক্যু করে সজ্জন এই মন্ত্রীকে বিব্রত করা হচ্ছে বারবার।এ ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ হওয়া দরকার।

প্রকৃতপক্ষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিঙ্কেন সেদিন বলেছিলেন, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে মুখিয়ে বিশ্ব।অন্যদিকে ড. মোমেন তাঁর বক্তব্যে উপস্থাপন করেন অনেকগুলো গুরুত্ববহ বিষয়।প্রকাশ্রিত সংবাদটি এরকম- ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য তথা মডেল বা আদর্শ নির্বাচন দেখতে চায়। জবাবে আমি বলেছি, আমরাও তাই চাই। তিনি বলেন, আমি বলেছি গণতন্ত্র আমাদের রক্তে মিশে আছে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখতে মানুষ রক্ত দিয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মোমেন স্বাধীন নির্বাচন কমিশন এবং স্বচ্ছভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গৃহীত সরকারি পদক্ষেপের বিস্তারিত তুলে ধরেন। বলেন, আমি বলেছি, বাংলাদেশ মার্কিন পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানায় কিন্তু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো পক্ষপাতিত্বমূলক পর্যবেক্ষককে নয়। মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমি বলেছি- একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিরোধী দলকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ও শ্রমিকদের অধিকার সমুন্নত রাখা এবং সন্ত্রাসবাদ দূর করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান মোমেন। বলেন, তিনি মার্কিন মন্ত্রীকে খোলাসা করেই বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। সেই সঙ্গে সরকার ও দল আশা করে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে সাহায্য-সহায়তাসহ নানাভাবে তারা খুশি রাখতে পেরেছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে সব দল এলেও তারা বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন। মন্ত্রী বলেন, এ জন্য আমার সরকার সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য তথা মডেল নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এই বক্তব্যে কোথাও ‘নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছে সরকার’ প্রভৃতি প্রসঙ্গ নেই। অথচ হঠাৎ করে মিডিয়া আবিষ্কার করেছে মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্যে ভিন্নতর অনুষঙ্গ। উপস্থাপন করেছেন মিথ্যা সংবাদ।পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিডিয়ায় অপপ্রচার চলছে অনেকদিন যাবৎ।এজন্য ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, আমাদের দেশে সাংবাদিকতা যারা করেন তাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে। এদের পরিপক্বতা দরকার। ওইদিন (শনিবার)দুপুরে সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার বিসিএস (এফএ) অ্যাম্বাসেডর্স (এওফা) এর সদস্যদের নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে  শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।আসলে ড. এ কে আব্দুল মোমেন সেদিন বলেছিলেন, ‘গত ২৬ অক্টোবর(২০২২) প্রেসক্লাবে ‘‘বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামে’’র একটি সেমিনারে আমি বক্তব্য দেই। ১৭টি গণমাধ্যম তা নিয়ে যে হেডলাইন করেছে তার সাথে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের সম্পর্ক নাই। সেখানে আমি নাকি আমেরিকাকে যুদ্ধবাজ বলেছি। ১৭টি গণমাধ্যমই মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক তথ্য দিয়েছে। মঞ্চে যারা সেদিন উপস্থিত ছিলেন তারা কাছ থেকে আমার বক্তব্য শুনেছেন। তারাও সাক্ষ্য দেবেন যে আমি সেরকম কোনো কথা বলিনি।অডিও-ভিডিও রেকর্ড চেক করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।’

অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল, আমাদের দেশে সাংবাদিকতা যারা করেন তাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে। এদের পরিপক্বতা দরকার। যে সাংবাদিকরা এটা করেছেন, এটা তাদের জন্য লজ্জার বিষয়। আর আপনাদের (গোপালগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিক) জন্য দুঃখের বিষয় যে আপনাদের সহকর্মীরা এই ধরনের বানোয়াট জিনিস প্রকাশ করেছেন। আমি অনেক সাংবাদিকদের বলেছি আপনাদের এই নিয়ে গবেষণা করা উচিত। কেন এতো নিম্নমানের এই সাংবাদিকতা। এটা আপনাদের জন্য দুঃখের বিষয়।...যে জিনিসগুলোর ধারে কাছে বলিনি সেগুলো সাংবাদিকরা প্রকাশ করেছেন। তারা কোন উদ্দেশ্যে মিথ্যা প্রচারণা করছেন? তাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মনে করবে আমরা বোধ হয় তাদের শত্রু। এমনভাবে প্রচারণা করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে শত্রু বানানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছে যা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।’

অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে একবার শত্রু বানায় মিডিয়া আবার সহযোগিতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মিডিয়া। এভাবে নানান মিথ্যাচারে ভরা সংবাদে সত্যিই পাঠকসমাজ হতভম্ব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিডিয়া ক্যু’-এর পুরানো ইস্যু তুলে ধরা দরকার। জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষ্যে ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম ‘‘জাতিসংঘের আঙিনায় শেখ হাসিনা” শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অনুষ্ঠানের সমস্ত কাজের তদারকি আমাকে করতে হয়েছে। আর সেমিনারে প্রথম থেকে শেষ অবধি আমি উপস্থিত ছিলাম। আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তৃতা কিছু মিডিয়া ভুলভাবে উদ্ধৃত করে অসত্য সংবাদ এবং টিভি স্ক্রল প্রচার করেছে- যা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ যে সমস্ত বিষয় তাঁকে উদ্ধৃত করে প্রচার করা হয়েছে তা অসত্য।আমি নিজে মন্ত্রী মহোদয়ের পাশে বসে সবটুকু কথা নিজের কানে স্পষ্টত শুনেছি। অথচ যা তিনি বলেননি তাকেই গুরুত্ব দিয়ে শিরোনাম তৈরি এবং টিভিতে স্ক্রল করে প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে মিডিয়ার দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে আমাদের মনে।

মন্ত্রী মহোদয়ের পুরো বক্তৃতা মনোযোগ সহকারে শুনলে দেখা যাবে সাংবাদিকদের প্রচারিত হেডলাইন-এ কোনো মিল ছিল না। সংবাদ মাধ্যমগুলোয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে উদ্ধৃত মিথ্যা হেডলাইনগুলো হলো-(১) “ড. মোমেন বলেছেন  “আমেরিকার কাজই যুদ্ধ করা, নয়তো তাদের অর্থনীতি চলবে না” (এনটিভি), (২) “যুদ্ধ ছাড়া আমেরিকার অর্থনীতি চলবে না” (ডিবিসি নিউজ),(৩) “ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হলে তাইওয়ানে যাবে আমেরিকা” (সময় টিভি), (৪)  “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যুদ্ধনির্ভর” (সময় টিভি), (৫) “যুদ্ধ ছাড়া মার্কিন অর্থনীতি সচল নয়” (যমুনা টিভি), (৬)  “যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধপ্রিয় দেশ, যুদ্ধ ছাড়া দেশটির অর্থনীতি সচল থাকে না” (ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি), (৭) "যুদ্ধেই সচল থাকে যুদ্ধপ্রিয় আমেরিকার অর্থনীতি” (দেশ টিভি), (৮) “ড. মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধপ্রিয় দেশ” (এটিএন নিউজ), (৯) “সব দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করাই তাদের মূল কাজ” (চ্যানেল ২৪), (১০) “যুদ্ধের জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সচল থাকে” (এসএ টিভি), (১১) “যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যুদ্ধ ছাড়া চলবে না” (রেডিও টুডে), (১২)  “যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করাই হল যুক্তরাষ্ট্রের মূল কাজ” (আমাদের সময় ডটকম),(১৩)  “যুক্তরাষ্ট্রের কাজই হলো যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা” (ইনকিলাব), (১৪) “আমেরিকা যুদ্ধপ্রিয় দেশ, যুদ্ধ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অচল” (দেশ রূপান্তর), (১৫) “যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করাই হলো যুক্তরাষ্ট্রের মূলকাজ” (মানব জমিন), (১৬)  “আমেরিকার অর্থনীতি যুদ্ধ ছাড়া চলবে না” (দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর) ইত্যাদি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যের কোথাও ‘‘যুদ্ধবাজ আমেরিকা’’ না থাকলেও তা হয়েছে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম।এজন্যই মন্ত্রী মহোদয় সংবাদ মাধ্যমের নৈতিকতা ও পরিপক্বতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।যে প্রশ্ন ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এসে আবারও তুলতে হলো।

উল্লেখ্য, সেদিন  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চমৎকার একটি বক্তব্য প্রদান করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তাঁর কথায় ছিল অভিজ্ঞতার বয়ান। দেশপ্রেমিক সত্তার উন্মোচন এবং বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের পরিচয়ে সমৃদ্ধ।হতাশার বিষয় হলো এরপর কিছু কিছু মিডিয়া ও টেলিভিশন চ্যানেল পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করে সংবাদ প্রচার করে। উল্লিখিত ওধরনের সংবাদ শিরোনাম দিয়ে এবং টিভি স্ক্রলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে জনসাধারণ এবং বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে বিভ্রান্তিকর বার্তা দেওয়া হয়েছে- যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নামে তাঁকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করে এধরনের বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারকারী মিডিয়া ও টিভি চ্যানেলগুলোকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারের জন্য ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশসহ সঠিক সংবাদ প্রচারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।এবং প্রতিবাদলিপিটি কয়েকটি পত্রিকায় ছাপানোও হয়।

প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার পরে গত ৫৩ বছরে মিডিয়ার ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হলেও সাংবাদিকদের দায়িত্ববোধ ততটা উন্নত হয়নি। এজন্য পরিতাপের সঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিকরা এসব নিয়ে অনেক কথা বলে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পিছনে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের গুরুত্ববহ ভূমিকা ছিল। কেবল চাকরি করা নয় বরং দেশ ও জাতির বিবেক হিসেবে সংবাদকর্মীরা বিবেচিত হতেন। বলা হয়ে থাকে সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা সবচেয়ে সম্মানের বিষয় ছিল। একুশ শতকে নানাকারণে সেই সম্মানের জায়গাটা দখল করেছে পুঁজিপতিরা।তবু মিডিয়া বিশ্বব্যাপী মানুষের অধিকারের কথা বলে চলেছে।

মিডিয়াকে বঙ্গবন্ধু নিজের সাধ্যের মধ্যে রেখে প্রসারিত করেন তাঁর শাসনামলে। মুক্তিসংগ্রামে ইত্তেফাক, সংবাদ প্রভৃতি পত্রিকার প্রগতিশীল ভূমিকা তিনি ভালো করেই জানতেন। এজন্য ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু দেশের সংবাদপত্রকে স্বাধীন মতপ্রকাশে সুযোগ তৈরি করে দেন।এমনকি সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণমূলক কাজে সরকারি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা তৈরি করেন। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন পাস হওয়া ‘নিউজ পেপার ডিক্লারেশন এনালমেন্ট অর্ডিন্যান্স’ নামে আইনটি করা হয়েছিল তখনকার সাংবাদিক নেতাদের পরামর্শে। এর আগ পর্যন্ত সাংবাদিকদের কোনো বেতন কাঠামো ছিল না। মালিকরা সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন দিতেন না। বঙ্গবন্ধু এসব জানতেন। এজন্য ৭৫ সালের ১৬ জুনের পর যেসব পত্রিকা বন্ধ করা হয় তিনি সেসব সাংবাদিক-কর্মচারীর বেতন নিশ্চিত করেছিলেন। তারা এক তারিখ ট্রেজারিতে গিয়ে বেতন নিয়ে আসতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘নেশন মাস্ট বি ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট করাপশন। পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলাইজ না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না।’ গণসচেতনতা তৈরিতে মিডিয়ার ভূমিকা বঙ্গবন্ধুর আমল থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে স্বীকৃত।

এই গণসচেতনতা তৈরিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তিনি নিজে একজন লেখক। জনপ্রিয় কলামিস্ট। তাঁর রয়েছে দশের অধিক গ্রন্থ। দেশ-বিদেশে যোগাযোগের দিক থেকেও তিনি পররাষ্ট্রনীতিকে সমুন্নত করেছেন।দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও জাতিসংঘের আঙিনায় আমাদের অধিকার আদায়ে তাঁর সদা তৎপরতা লক্ষণীয়।

বলা হয়ে থাকে, গণমাধ্যম জনগণের মতামতকে ঠিক করে দেয়। অর্থাৎ গণমাধ্যমের এজেন্ডা পাবলিক এজেন্ডায় পরিণত হয়। সমাজে নানা ঘটনার মধ্যে কোনটি বেশি আলোচিত হবে বা গুরুত্ব পাবে গণমাধ্যমই তা নির্ধারণ করে দেয়। এর মধ্যে সহজবোধ্য ও দ্রুততম তথ্য প্রাপ্তির উৎস হিসেবে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া একধাপ এগিয়ে। অতীত এবং বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যম বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা যেমন নিশ্চিত করতে হয়েছে তেমনি স্বাধীনভাবে কাজ করার যাবতীয় দিক উন্মোচিত।সুশাসন প্রতিষ্ঠার গতি আরও ত্বরান্বিত এখন। আর সুশাসন সুমন্নত অবস্থানে আছে বলেই বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও ভাল হবে।  

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা তৈরি হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সত্যনিষ্ঠ প্রিন্ট ও টিভি চ্যানেল এবং সামাজিক ন্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনলাইন গড়ে ওঠে। অপরদিকে ২০০৯-২০২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমে কর্পোরেট মালিকানার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হলেও তথ্য পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সাংবাদিকতায় উৎকর্ষ অর্জিত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ও সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০১ থেকে ২০০৮ অবধি সেই অগ্রগতি থমকে দাঁড়ালেও এখন পরিস্থিতি মিডিয়ার জন্য অনেক ভালো।

এই ভালো সময়ে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের ঝোঁক মারাত্মকভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে দেশকে। মিডিয়া যদি মনে করে থাকে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করলে জনপ্রিয় হবে তাদের হাউজ- তাহলে বোকার বেহেশতে বসবাস করছে তারা।

গত ১৪ বছরে শেখ হাসিনার শাসনামলে এদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক সাফল্য লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত আমলে গণমাধ্যমের করুণ দশা সকলেরই জানা।অবশ্য কর্পোরেট সুবিধার কথা ভেবে গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করা শুরু করেছে। অর্থাৎ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ সময়েও দেখা যায় বিশ্বের প্রায় ৭৭টি দেশে এখনও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া হচ্ছে।বাংলাদেশে ভিন্ন চিত্র। এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রচুর। আর এই স্বাধীনতা লালন করার জন্য দরকার দায়িত্বশীল আচরণ। কারণ এখানে সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হন না। বরং মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের সু সম্পর্ক রয়েছে।তারা জানেন কোন মন্ত্রী দেশপ্রেমিক, উদার ও সজ্জন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে মিডিয়া ক্যু সম্পর্কে বলা দরকার, কোনো কোনো গণমাধ্যমকর্মী নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য স্বেচ্ছাচারীর ভূমিকা পালন করেন। আবার কেউ কেউ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অপব্যবহার করে ক্ষেত্রবিশেষে গ্রহণযোগ্যতা ও অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে কেউ কেউ বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে দেশদ্রোহী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আজ বিশ্বব্যাপী একথা স্বীকৃত যে, গণমাধ্যমের মাধ্যমেই নিজেদের পরিশীলিত করা যায়। এসব কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করলে তা দেশ ও জনতার ক্ষতি হিসেবে গণ্য হবে- এটা মনে রাখা দরকার মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সবার।সাধারণ মানুষের তথ্য প্রাপ্তির অন্যতম উৎস হল গণমাধ্যম। তা যেন নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনে ব্যস্ত না থাকে। বরং দেশপ্রেমিক পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কথা ও বক্তব্যকে নিজের দেশের জন্য যথার্থ বিবেচনা করে বিকৃত না করে প্রচার করতে হবে।

(লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস,  বঙ্গবন্ধু গবেষক এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-drmiltonbiswas1971@gmail.com)




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭