এডিটর’স মাইন্ড

যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা চাপে ফেলতে চায় সরকার?


প্রকাশ: 18/04/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নানা রকম চাপ প্রয়োগ করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যেই দৌড়ঝাঁপ করছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করছে কোন রকম রাখঢাক ছাড়াই। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে কিনা সেই প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৌড়ঝাঁপ এখন দৃষ্টিকটু পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারেই কথা বলছেন না, বাংলাদেশের মানবাধিকার সুশাসন ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কথা বলছে। বাংলাদেশের মানবাধিকারের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সর্বশেষ মানবাধিকার রিপোর্টেও বাংলাদেশের গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। নির্বাচন মানবাধিকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইত্যাদি ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর যে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে তার প্রধান লক্ষ্য কি গণতন্ত্র নাকি এর পেছনে অন্য কোনো লক্ষ্য করেছে?

কূটনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে, বিশ্ব রাজনীতি এবং নতুন বিশ্ব মেরুকরণের কারণেই বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশকে যেমন যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিয়ে তার নিজস্ব বলয়ে রাখতে চায় এজন্য কোয়ার্ড এবং অন্যান্য জোটে যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে এই অঞ্চলে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি বা এই অঞ্চল যেন মার্কিন নিয়ন্ত্রণে থাকে সে জন্যও সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ প্রয়োগের কৌশল অবলম্বন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

শুধু ভূ-রাজনীতি নয় অর্থনৈতিক কারণেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় মাথাব্যথার কারণ। আর সে কারণেই বাংলাদেশকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসেছে বলে কোন কোন কূটনীতিক মনে করছেন।

তবে এই চাপের কাছে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত নতি স্বীকার করেনি এবং নতিস্বীকারের এর লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশ তার কৌশল পরিবর্তন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা চাপে রাখার নীতি গ্রহণ করেছে বলেই ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। মার্কিন বলয়ের বাইরেও যে বাংলাদেশে যেতে পারে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও শত্রুদের সঙ্গেও যে বাংলাদেশ চাইলে সম্পর্ক করতে পারে সেটি বাংলাদেশ ইচ্ছে করেই দেখাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন তার একটি বড় প্রমাণ। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ যেমন ইরানের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তেমনি ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ এপ্রিল টেলিফোনে আলাপ করেছেন। ইরান এখন চীন-রাশিয়া বলয়ে রয়েছে। আর বাংলাদেশ যে চীন-রাশিয়া বলয়ের সঙ্গে প্রকাশ্যে সুসম্পর্ক রাখতে চাচ্ছে তা অনেকটাই দৃশ্যমান এবং চীনের স্পেশাল এনভয় দেং শিজুন ঢাকা সফর করে গেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ মোমেন চীন সফর করছেন। আগামীকাল তার দেশে ফেরার কথা। এসবের মাধ্যমে বাংলাদেশ কি যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা চাপে ফেলতে চাইছে? কারণ, বাংলাদেশ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে চীন, ভিয়েতনামের সাথে সুসম্পর্ক করে তাহলে সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। তাই চীন, ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করে বাংলাদেশ কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এরকম কোন বার্তা দিচ্ছে যে যদি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর মার্কিন চাপ অব্যাহত রাখে তাহলে বাংলাদেশ চীন-রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও বৃদ্ধি করবে এবং মার্কিন বিরোধী যে জোট এখন তৈরি হচ্ছে সেই জোটের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে? এরকম একটি পরিস্থিতি যদি তৈরি হয় তাহলে সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কি এক এক ধরনের অস্বস্তি হবে না?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭