ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

২০১৪ তে শেখ হাসিনাকে হঠাতে চেয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা?


প্রকাশ: 18/04/2023


Thumbnail

বিতর্কের সূত্রপাত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। মহামান্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির ভাষণে বিস্ফোরক মন্তব্যটি তিনি করেন। তবে সেই মন্তব্যের বিস্তারিত তিনি আলোকপাত করেননি। শুধুমাত্র একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ওই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংকটে রাষ্ট্রপতির ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিশেষ করে ২০১৪ নির্বাচনের সময় অনেক আওয়ামী লীগ নেতাও তাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন। কিন্তু সেই সমস্ত পরামর্শে রাষ্ট্রপতি বিভ্রান্ত থাকেননি, তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করেছেন। এটি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তেমন কোনো চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়নি। কেন সৃষ্টি হয়নি সেটি একটি বিস্ময় বটে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যটি ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতবাহী এবং তাৎপর্যপূর্ণ। 

এ কথা অনস্বীকার্য যে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় বিপদে পড়েছে, ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে এবং সংকটে পড়েছে, দলের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্যই। দলের বাইরের কোনো ষড়যন্ত্র বা বাইরের কোনো চাপের কারণে আওয়ামী লীগ কখনোই পরাজিত হয়নি। আর এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ তখনই সংকটে পড়ে বা বিপদগ্রস্ত হয় যখন দলের ভিতরে ষড়যন্ত্র হয়। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের বাইরে যেমন ষড়যন্ত্র ছিল তেমনি ভিতরে ষড়যন্ত্র ছিল। ভিতরের ষড়যন্ত্রের কারণেই আওয়ামী লীগ বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। 

একানব্বই সালেও আওয়ামী লীগ ভিতরের ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েছিল। বাকশাল গঠনের সময় আওয়ামী লীগ ভিতর থেকেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল। আর এক-এগোর’র ষড়যন্ত্রের কথা তো সকলেই জানেন। কিন্তু প্রশ্ন হল যে ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায়। এই সময় কোন বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয় না। যদিও অনেকে মনে করেন এ সময় রাজনীতিতে অনেক চড়াই-উৎরাই এর মধ্য শেখ হাসিনাকে সময় পার করতে হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের প্রকৃতি কি, ধরন কি সে সম্পর্কে অনেকেই অজানা। আবার বিভিন্ন মহল মনে করেন যে এই সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার নিরঙ্কুশ ছিল। কাজে দলের অভ্যন্তরে কেউ ষড়যন্ত্র করার সাহস পায়নি। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সূত্র ধরে বাংলা ইনসাইডার এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো চেষ্টা করে। 

কি হয়েছিল ২০১৪ সালে? 

বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এ সময় কূটনীতিকদের মধ্যস্থতায় একাধিক বৈঠক হয়। যে সমস্ত বৈঠকে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট দুজন নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা নিয়োজিত ছিলেন। মূল আলাপ আলোচনা হয়েছে যতটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে তার চেয়ে বেশি হয়েছে কূটনীতিকদের সঙ্গে। এ সময় বিদেশে থেকে সমঝোতার জন্য কূটনীতিকরা এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে সমঝোতা প্রস্তাবের এক পর্যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাঝামাঝি কোন কিছু করা যায় কিনা এমন বিষয়টি উত্থাপিত হয়। বিদেশি কূটনীতিকরা প্রস্তাব দেন যে প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে এ ধরনের একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায় কিনা। এতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা সম্মতি দিয়েছিল বলেও বাংলা ইনসাইডার নিশ্চিত হয়েছে এবং এই সম্মতির প্রেক্ষিতেই তারা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আবদুল হামিদকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে প্রধানমন্ত্রীকে যেন তিনি পদত্যাগ করতে পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে রাষ্ট্রপতির অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে পারে। সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি তাতে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি। 

শুধু তাই নয় কূটনীতিকরাও প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচনের জন্য একটা উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করেন এবং রাষ্ট্রপতি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাহলে পরে সংকটের সমাধান হয়। ওই উপদেষ্টাও এ ব্যাপারে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু বিদায়ী রাষ্ট্রপতি দুটি প্রস্তাবের একটিও গ্রহণ করেননি। বরং তিনি বলেছেন যে সংবিধান সম্মতভাবেই নির্বাচন হবে। রাষ্ট্রপতি কখনো সরকার প্রধান হতে পারেন না। আর এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও রাষ্ট্রপতি অবহিত করেছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ওই দুই নেতা সেই সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুইজন মন্ত্রী ছিলেন। আর তারা এখন মন্ত্রী না থাকলেও ঠিকই প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭