এডিটর’স মাইন্ড

নির্বাচনকালীন সরকার: আওয়ামী লীগ-বিএনপি কে কতটা ছাড় দিবে


প্রকাশ: 19/04/2023


Thumbnail

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় বরং একটি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দলের মধ্যে দরকষাকষি চলছে। পশ্চিমা কয়েকটি দূতাবাসের উদ্যোগে এই নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই আলাপ-আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মূলত মার্কিন মধ্যস্থতায় প্রধান দুটি দল নির্বাচনকালীন সময়ে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এই নির্বাচনকালীন সরকারের যে আলাপ আলোচনা বা সমঝোতার চেষ্টা সেটি আদৌ সফল হবে কি না তা নিয়েও অনেকের মধ্যে সংশয় রয়েছে। 

নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে এই নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও নয় আবার বর্তমান সরকার বহাল রেখে নির্বাচন সেটিও নয় মাঝামাঝি একটি অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং সেখানে মূলত কয়েকটি বিষয় দেখা হচ্ছে। 

প্রথমত, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে প্রধানমন্ত্রী যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাহলে তার ক্ষমতা হ্রাস করা। বিশেষ করে তিনি যেন রুটিন কাজের বাইরে কোন নীতি নির্ধারণী কাজ করতে না পারেন সেটি নিশ্চিত করা এবং তাঁর নির্বাচনী এলাকার বাইরে অন্য কোথাও যেন তিনি সরকারি প্রটোকল এবং সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে না পারেন সেটি নিশ্চিত করা। 

দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে সরকার থাকবে সে সরকার অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। প্রয়োজনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হতে পারে। যে রকম সরকার গঠনের প্রস্তাব ২০১৪ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন। তবে এখানে একটি সমস্যা রয়েছে তা হলো বিএনপির সংসদ সদস্যরা ইতোমধ্যে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কাজেই চাইলেও তাদেরকে নির্বাচনকালীন সরকারে অন্তর্গত করা যাবে না। তবে সমঝোতার পক্ষে কেউ কেউ বলছেন যে ১০ জনের মন্ত্রিসভা হলেও একজনকে টেকনোক্র্যাট কোঠায় মন্ত্রী রাখা যায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির প্রতিনিধি রাখা কোন কঠিন ব্যাপার নয়। এটি অন্তত সহজেই করা যেতে পারে। 

তৃতীয়ত, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং যেকোনো সময় ভোট বাতিলের যে প্রস্তাব নির্বাচন কমিশন করেছে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করা। ইতোমধ্যেই নির্বাচন আইন সংস্কারের প্রস্তাব নীতিগতভাবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রেরিত এই প্রস্তাবনায় নির্বাচনকালীন সময়ে অনিয়মের অভিযোগ হলে নির্বাচন কমিশনকে ভোট বাতিল করে দেয়া এখতিয়ার দেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে সরকারের কারো কারোও আপত্তি রয়েছে। আর এই বিষয়টির ব্যাপারে পশ্চিমাদের আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে আরেকটি ভাবনা হলো নির্বাচনের সময় প্রশাসনকে পুরোপুরি ভাবে নির্বাচন কমিশন এর আওতায় নিয়ে আসা এবং প্রশাসনের যে কাউকে চাইলে রদবদল করতে পারে এবং প্রশাসনের যেকোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তবে যেটিই হোক না কেন নির্বাচনকালীন সরকার হবে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে, এটি নিশ্চিত হয়েছে। বিএনপি যে দাবি করেছিল সংবিধান সংশোধন করে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সেটি হচ্ছে না। তবে দেখার বিষয় যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে কতটুকু ছাড় দেয়। 

আওয়ামী লীগের নেতারা অবশ্য বলছেন যে ২০১৪’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ ছাড় দিয়েছিল সেটি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ছাড়। তার বাইরে আওয়ামী লীগের আর বেশী ছাড় দিতে পারবে না। তবে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর প্রধান লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সংকুচিত করা, প্রধানমন্ত্রীকে নিষ্ক্রিয় রাখা, কর্তৃত্বহীন রাখা। এই দরকষাকষিতে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সমঝোতা হয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭