অবশেষে গতকাল স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়ার পর এই কমিটির ঘোষণা করা হয়। তবে কয়েকজনের টাকা তারেক জিয়ার কাছে না পৌঁছানোর কারণে ২৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ২১৩ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এক মাসেরও বেশি আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় এসএম জিলানিকে সভাপতি এবং রাজিব আহসানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। এরপরেই শুরু হয় কমিটি বাণিজ্য।
লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিভিন্ন পদের জন্য অর্থ ঘোষণা করেন এবং অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২৫১ সদসস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির ২১৩ জন সদস্য হয়েছে একশ কোটি টাকারও বেশি চাঁদা দিয়ে। এই চাঁদা বিভিন্ন মাধ্যমে তারেক জিয়ার কাছে পৌঁছেছে এবং তারেক জিয়া টাকা পৌঁছানোর পরপরই কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো, এই কমিটি গঠনে বিএনপির গঠনতন্ত্র বা স্বেচ্ছাসেবক দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হয়নি। স্বেচ্ছাসেবক দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা ১০১ সদস্যের। কিন্তু গঠনতন্ত্রের সংশোধন ছাড়াই ২৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০ থেকে ১১ জন সহ-সভাপতি থাকার কথা। সেখানে অর্থ আদায়ের সুবিধার জন্য ২০ জনকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। প্রতি সহ-সভাপতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে এই পদ পেয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদও ১১জন। সেখানে ২৮ জনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। প্রতি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। এছাড়াও যারা বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে রয়েছেন, তারাও ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।
অন্যদিকে সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে নূন্যতম ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে তাদেরকে কমিটির সদস্য হতে হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে এই পদ পেয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সাধারণ সম্পাদকও ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে এই পদ পেয়েছেন বলে একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। গত কিছুদিন ধরেই বিএনপিতে কমিটি বাণিজ্য হচ্ছে প্রকাশ্যে। যে কোনো কমিটি গঠনের আগে তারেক জিয়াকে একটি বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয়। তারেক জিয়া এই টাকা পাওয়ার পর কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর সভাপতি ও সাধারণ সম্পদকের পদ দু’টি নিলামে ওঠে। যিনি সবচেয়ে বেশি টাকা দিতে সম্মত হন, তিনি এই পদ দু’টি পান। তবে শর্ত থাকে যে লন্ডনে টাকা না পৌঁছানো পর্যন্ত এই কমিটি ঘোষণা না করা। আংশিক কমিটি ঘোষণার পর টাকা সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় বিএনপির মধ্যে। বিভিন্ন পদের জন্য কে কে আগ্রহী, কে কত টাকা দিতে পারবে ইত্যাদি মাসব্যাপী চলে এই অর্থ সংগ্রহ বা চাঁদা সংগ্রহ অভিযান।
কমিটি বাণিজ্য সম্পন্ন হওয়ার পর যখন টাকার ভাগ লন্ডনে তারেক জিয়া পেয়ে যান, তখন তিনি কমিটিগুলো অনুমোদন করেন। তবে বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, শুধু তারেক জিয়া একা না, অনেকেই এই টাকার ভাগ পান। সম্প্রতি ভয়েজ অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, জনগণের টাকায় লন্ডনে তারেক জিয়া চলেন। আর জনগণের টাকা যে এই কমিটি বাণিজ্যের টাকা, সেটি স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণিত হলো।