ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মধ্যস্থতাকারী থেকে মোড়ল হবার পথে হাটছে চীন?


প্রকাশ: 24/04/2023


Thumbnail

চীনের অন্তর্মুখী স্বভাব বিশ্বের কাছে নতুন কিছু না। সেই আদিম কালের রেশম চাষ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন- সবখানেই চীন নিজেকে গুটিয়ে রাখার স্বভাব দেখিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র মানেই তর্জন-গর্জন আর দেশে দেশে শান্তিরক্ষা কিংবা বিরোধ/সন্ত্রাস দমনের নামে মোড়ল হয়ে নাক গলানোর চিত্র।

তবে এবার যেন বিশ্ব রাজনীতির দাবার চালে এগিয়ে গেছে চীন। সম্প্রতি সৌদি আরব-ইরান সম্পর্ক উন্নয়নে চীনের মধ্যস্থতা নতুন করে ভাবাচ্ছে সবাইকে। যেখানে সৌদি মানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তরঙ্গ বন্ধু আর ইরান মানে চরম শত্রু, সেখানে দুপক্ষকে এক টেবিলে বসিয়ে ঝামেলা মেটাতে সফল হয়েছে চীন। এই সম্পর্ক উন্নয়নে বিশ্ব মাতবর যুক্তরাষ্ট্র একজন নীরব দর্শক ছাড়া আর কোনো ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়নি।

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কটা বেশ কয়েক বছর ধরেই একটু তিক্ত। এতদিন বড় রকমের হম্বিতম্বি ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের আঁতে ঘা লাগে এমন টুকিটাকি কাজ করলেও চলতি বছরে চীন মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যা করল তা আমেরিকার গালে জোরেসোরে এক চপেটাঘাত।

সৌদি-ইরান সম্পর্কে চীনের ভূমিকা

পেট্রোডলার চুক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে সৌদি। সৌদি বাদশাহরা এতদিন যুক্তরাষ্ট্রকে তেল দিয়েছে আর তার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেয়েছে। নিজেদের ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে আরামপ্রিয় সৌদি বাদশাহরা এতদিন বের না হলেও নতুন প্রিন্স মুহম্মদ বিন সালমান একটু অন্য ধাচের মানুষ।

সালমান বুঝতে পেরেছেন, শুধু তেল দিয়ে আজীবন চলতে পারবে না সৌদি। আর আমেরিকা এমন এক বন্ধু যে নিজের স্বার্থের কারণে যখন-তখন পল্টি নিতে পারে, যা আরব-ইসরাঈল যুদ্ধের ইতিহাস থেকে প্রমাণিত। পরবর্তীতে যখন ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে হত্যার জন্য সৌদি যুবরাজ সালমানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র তখন থেকেই যে এতদিনের বন্ধুর ওপর সব ধরনের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন সালমান তা বর্তমান কর্মকাণ্ড দেখে বুঝতে কষ্ট হয় না।

এদিকে চীনের সবচেয়ে বড় শক্তি তার ব্যবসায়িক মনোভাব। চীন যেখানে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে সেখানে যুদ্ধবাজ যুক্তরাষ্ট্রের ধান্ধা অস্ত্র বিক্রি ও নিরাপত্তার দোহায় দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের ওপরে হস্তক্ষেপ করা। যুদ্ধের ঝামেলায় জড়াতে চায় না কেউ, আর সেখানেই চীন নিজের পাশার দানে এগিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কয়েক ধাপ।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম ডিপ্লোম্যাটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি-ইরান চুক্তিতে চীনের মধ্যস্থতা দুটি জিনিস নির্দেশ করে। প্রথমত, এটি চীনের দায়িত্বশীলতা ও শক্তিমত্তার বার্তা দেয়। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের মাতুব্বরি ছাড়াও যে বিশ্ব চলে ওয়াশিংটনকে এমন কঠিন বার্তা দিয়েছে বেইজিং।

ডিপ্লোম্যাটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ দিয়ে মধ্যপ্রচ্যে নিজের প্রভাব বিস্তার করেছে, সেখানে চীন নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে অবকাঠামোগত উন্নতির মাধ্যমে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি যেখানে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ সেখানে চীনের মূলনীতি হচ্ছে, এমন একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলা যেখানে সবাই একযোগে উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। এই নীতি সামনে রেখেই চীন দেদারছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে টাকা ঢেলেছে, যার ফলাফল দা-কুমড়া সম্পর্কের দুই দেশকে এক টেবিলে বসিয়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে এক রকমের সমাধানে আনা।

মধ্যপ্রাচ্যে চীন এতটাই নিজের প্রভাব বিস্তার করেছে যে, খোদ যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের এই মধ্যস্থতাকে সমর্থন না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি গোয়ার্তুমি করে বসে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আজীবনের জন্য নিজের অবস্থান হারাবে দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যের হাতে এখন বিকল্প আছে। নিরাপত্তারর জন্য সৌদির নিজস্ব অস্ত্র ও শক্তিমত্তা ও ইরানের পারমাণবিক শক্তি ও রাশিয়া-চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বই যথেষ্ট; যেখানে তেলের জন্য এখনও গালফ কোওপারেশনের দেশগুলোর ওপরে নির্ভরশীল যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ এতদিন যে যুক্তরাষ্ট্র ছিল মধ্যপ্রাচ্যের মাতবর, এখন তাদেরকেই রিয়াদ-আবুধাবিকে তোয়াজ করে চলতে হবে।

বার্তাসংস্থা সিএনএনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি এক চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে চীনের বর্ধনশীল সম্পর্ক ও কূটনীতির ইতিবাচক দিককে নির্দেশ করেছে।

সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যদিও এটি যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় নয়, তবু বড় রকমের ছবক। যদিও যুক্তরাষ্ট্র নিঃশেষ হয়ে যায়নি, তবে ধাক্কাটা ভালোই লেগেছে তাদের গায়ে।

চীনের ওপর সৌদি-ইরানের নির্ভরশীলতা

কেন চীনের কথায় মধ্যপ্রাচ্যের দুই মেরুর দুটি শক্তিধর দেশ এক টেবিলে বসল, তা বুঝতে গেলে দেশ দুটির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বিশ্লেষণের দাবি রাখে। পারমাণবিক বিষয়াদি নিয়ে যেখানে ইরানের পিঠে এক ঝাঁক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার তকমা, সেখানেই ইরানের উদ্ধারকর্তা হিসেবে দেখা দিয়েছে চীন।

নিষেধাজ্ঞার জোরে ইরানের অর্থনীতি যখন হাবুডুবু খাচ্ছে তখন দেশটিতে ২৫ বছর মেয়াদি বাণিজ্যিক সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে চীন। আগামী ২৫ বছরে বেইজিং তেহরানে ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, যার বিনিয়মে চীনকে লাগাতার জ্বালানি তেল দেবে তেহরান।

তেহরান যখন পশ্চিমাদের কাছে তেল বিক্রি করতে পারছিল না, সেখানে চীনের এমন প্রস্তাব এক কথায় লুফে নিয়েছে দেশটির সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খোমেনি। চীনের হালচালকে ইঙ্গিত দিয়ে এক রকমের স্বস্তি প্রকাশ করেই খোমেনি বলেছেন, ক্ষমতা এখন পশ্চিম থেকে পুবের দিকে যাচ্ছে। ইউরোপ কিংবা আমেরিকা নয়; এশিয়ায় সামনের বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।

অন্যদিকে সৌদি যুবরাজ সালমান বুঝে গেছেন শুধু তেল আর অস্ত্র দিয়ে দেশের উন্নয়ন ঘটানো যাবে না। তাইতো অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চীনের দ্বারস্থ হয়েছে দেশটি। গত বছরের চীন ও গালফ কোওপারেশন কাউন্সিলের এক চুক্তি অনুযায়ী সৌদি ও চীন সাতটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে। মূলত অটোমোবাইল ম্যানুফেকচারিং, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স সম্পর্কিত উন্নয়ন ও খাদ্যদ্রব্য আমদানি-রফতানি সম্পর্কিত বিষয়ে সৌদি এখন চীনের ওপর ভরসা করছে।

এ ছাড়া জ্বালানিখাতে সৌদি আরব চীনের সঙ্গে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে, যেখানে রংশেং পেট্রোক্যামিকেল কোম্পানির আওতায় রিয়াদ প্রতিদিন বেইজিংকে ৪ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে বলে বার্তাসংস্থা সিএননের একটি প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেছে।

চীনের সঙ্গে সৌদি সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলি শিহাবি সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমেরিকার সঙ্গে একমুখী সম্পর্কের দিন শেষ। আমরা এবার বিশ্বের সঙ্গে উন্মুক্ত সম্পর্কের দিকে আগাচ্ছি। আমেরিকার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের কথা অস্বীকার করছি না, তবে একইভাবে চীন, ভারত ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্য যা যা করা দরকার আমরা করব।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত সৌদি রাষ্ট্রদূতও সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, পাঁচ কিংবা দশ বছর আগের সৌদিকে বর্তমান সৌদির সঙ্গে মিলিয়ে লাভ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ না করেও যে বিশ্বের অন্যান্য শক্তিধর দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা যায় সেলক্ষ্যে কাজ করছে রিয়াদ।

সৌদি যতই বলুক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কহানি হবে না, তবে বন্ধুর শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে যুক্তরাষ্ট্রকে নিঃসন্দেহে শীতল বার্তা দিচ্ছে রিয়াদ।

সম্প্রতি রিয়াদ ও তেহরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বেইজিং। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, সৌদির সঙ্গে ইরানের বাণিজ্যিক সম্পর্কের অর্থমূল্য ৮৭ বিলিয়ন ডলার, যার ৫৭ বিলিয়ন ডলারই সৌদির জ্বালানি বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অন্যদিকে তেহরানের তেল বিক্রির নির্ভরযোগ্য বন্ধুও বেইজিং যাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলার।

সম্পর্কের ভিত যখন তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক মানদণ্ডের ওপরে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের ঝনঝনানি ও 'শুকনো কথায় চিড়া ভেজানো'র নীতিতে সৌদে যে ভরসা রাখতে পারছে না সে কথা বলা বাহুল্য।

ইসরায়েলও ঝুঁকছে চীনের দিকে

‘হারাধনের দশটি ছেলে’ কবিতার মতো যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির সর্বশেষ বন্ধু ইসরায়েল। কিন্তু সেই ইসরায়েলও চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমুখী সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে। তাইতো দিনকে দিন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে আগাচ্ছে ইহুদি রাষ্ট্রটি।

২০১৭ সালকে বলা যায়, চীন-ইসরায়েল সম্পর্কের উষ্ণ সময়। সে সময়ে দেশ দুটির রাষ্ট্রপ্রধান নিজেদের সম্পর্কের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে বেইজিংয়ে মিলিত হয়েছিলেন। সেই সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। মূলত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সম্পর্কিত এসব চুক্তিকে আদতে ইতিবাচকভাবে নেয়নি ওয়াশিংটন।

বেইজিং থেকে নেতানিয়াহু ফেরার নয় মাসের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন এমন একটি বিশ্ব তৈরি করতে চাচ্ছে যা যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ডোনাল্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার মূল লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের বিভিন্ন জায়গা থেকে চীনকে দূরে সরিয়ে রাখা।

কিন্তু ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে চীনের আধিপত্য ও দেশটির সৌরবিদ্যুৎখাতে চীনা কোম্পানি হুয়াইয়ের ইনভার্টার ব্যবহার ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ইসরায়েলের সাইবার নিরাপত্তা যেভাবে দিনকে দিন চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তাতে করে ইসরায়েলের ওপর প্রভাব খাটানো নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চীন ধীরে ধীরে ইসরায়েলের প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, যার বর্তমান সংখ্যা এসেছে ঠেকেছে পাঁচশতে। বর্তমানে ইসরায়েলের প্রযুক্তিখাতে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ ৯ বিলিয়ন ডলার।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইসরায়েল চীনের সঙ্গে কোনো উচ্চ প্রযুক্তিগত চুক্তি কিংবা অস্ত্র বাণিজ্য করবে না বা করলেও আগে যুক্তরাষ্ট্রকে অবগত করবে; তবে দিনকে দিন ইসরায়েলের ব্যক্তিগত ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের এমন হস্তক্ষেপকে ভালোভাবে নিচ্ছে দেশটির কর্তাব্যক্তিরা।

ইসরায়েলের গোয়ান্দা বিভাগের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, ‘চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঝামেলা কোথায় সেটা আমাদের বোধগম্য না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও আমাদের কাছে এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। ইসরায়েল মনে করে, চীন আমাদের বিরুদ্ধের লোক কিংবা শত্রুপক্ষের কেউ না।’

ইসরায়েলের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইতহাক শিকর তার এক নিবন্ধে জানান, ‘ওয়াশিংটনের চীন নিয়ে যেসব সমস্যা, তার বেশিরভাগই মনস্তাত্ত্বিক। বাস্তবিক অর্থে চীন নিয়ে ওয়াশিংটনের এতটা মাথাব্যথার কারণ দেখি না। চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে, কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে তো দেশটির কোনো বিরোধ নেই।’

এদিকে চীনের সঙ্গে ইসরায়েলের বর্তমান সম্পর্কের আঁচ পাওয়া যায় ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে চীনের মধ্যস্থতা করার ইচ্ছা প্রকাশে। ইতোমধ্যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিরসনের কয়েকটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছে চীন, যা এতদিনেও যুক্তরাষ্ট্র করতে পারেনি।

চীনের লক্ষ্য চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ সমাধান

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি-ইরান মধ্যস্থতার পর এবার চীনের লক্ষ্য এতদিনের চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সংঘর্ষের সমাধান। সমাধানকল্পে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং এর সঙ্গে ইতোমধ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিকদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে সংবাদমাধ্যমটি।

চীনা সংবাদমাধ্যম জিন হুয়ার বরাত দিয়ে জানা যায়, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনকে এ বিষয়ে ফোন করেছিলেন কিন গ্যাং। কোহেনকে শান্তির আহ্বান জানিয়ে কিন বলেন, ‘আসুন আমরা আলোচনার টেবিলে বসি। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের জন্য মধ্যস্থতা করতে চীন প্রস্তুত আছে।’

একইভাবে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকিকেও কিন জানান, অতি দ্রুত শান্তি আলোচনা শুরু হবে ও শিগগিরই সমাধানের দিকে যাবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সম্পর্ক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি-ইরানের পর চীন যদি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সম্পর্ক উন্নয়নে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে আর কোনো প্রভাব থাকবে না। চীনের হাতে এতদিনের মোড়ল আমেরিকা হারাবে তার অঘোষিত কলোনি মধ্যপ্রাচ্য।

এদিকে এশিয়াতে যুক্তরাষ্ট্র যত বিচ্ছিন্ন হচ্ছে, চীন তত বেশি করে সংযুক্ত হচ্ছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টির পর দেশ দুটির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক জোরালো হয়েছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র একটি দেশের অভ্যন্তরীণ আদর্শিক ব্যাপারে নাক গলাতে সিদ্ধহস্ত, সেখানে চীন মূলত ব্যবসায়িক সম্পর্কে পুঁজি করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। কোন দেশে গণতন্ত্র আছে বা নেই তা নিয়ে চীনের মাথাব্যথা নেই। বরং একটি দেশের সঙ্গে চীনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার ও সে সম্পর্ককে পুঁজি করে কূটনীতির খেলায় গোল দেয়াই চীনের আসল কৌশল।

এ ছাড়া চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভ’ (বিআরআই), ব্রিকসের সঙ্গে যুক্ত থাকা, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা, ইউরোপে ব্যবসা বৃদ্ধি ও ধীরে ধীরে ডলারকে একপেশে করে দ্বিপাক্ষিক মুদ্রার প্রচলন করার কূটনীতি চীনকে নিছক মধ্যস্থতাকারী নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিয়ে বিশ্ব মোড়ল তকমা হাসিলের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭