ইনসাইড বাংলাদেশ

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিদায় বনাম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বিদায়


প্রকাশ: 24/04/2023


Thumbnail

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অনেক ব্যতিক্রমী ঘটনার জন্ম দিয়েছে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের হয়ে লড়াই করা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন জো বাইডেন। এদিকে নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে গেলেও ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফল উল্টে দিতে সব ধরনের চেষ্টা চালান ট্রাম্প। আয়োজন করেন বিশাল গণসমাবেশের। ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত গণসমাবেশে জনতার উদ্দেশে বিতর্কিত বক্তব্য দেন ট্রাম্প। জো বাইডেনের জয় আটকাতে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায় তার সমর্থকরা। এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই ১৫২ বছর পর আরেক ব্যতিক্রমী ঘটনার জন্ম দেন। তা হলো— নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন না তিনি। 

৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি (বুধবার) শপথ নেন জো বাইডেন। বাইডেনের পর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমালা হ্যারিস। ১৫২ বছরের ইতিহাস ভেঙে শপথ অনুষ্ঠানে অংশ না নিয়েই হোয়াইট হাউজ ছাড়েন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে, নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানে তিনি থাকবেন না, এমন ঘোষণা আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেন ট্রাম্প এবং কথামত সেদিন সকালেই স্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে হোয়াইট হাউজ ছাড়েন তিনি। যদিও এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছিলেন যে নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নিলেও তিনি জো বাইডেনের হাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

২৪ এপ্রিল ২০২৩, দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন ছাড়েন আবদুল হামিদ। দুপুরে বঙ্গভবনের নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিকুঞ্জের প্রেসিডেন্ট লজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন আবদুল হামিদ। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রাশিদা খানম ও ছেলে সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিকসহ অন্যরা। এর আগে এদিন বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ প্রায় একশ বিশিষ্ট অতিথি যোগ দেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

প্রথা অনুযায়ী শপথ অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্রপতিকে চেয়ারে বসিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন রাষ্ট্রপতিকে পরিচয় করিয়ে দেন আবদুল হামিদ। এরপর ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে 'গার্ড অব অনার' দেওয়া হয়। পরে বঙ্গভবনের প্রধান ফটক পর্যন্ত ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে ও বিউগলের করুণ সুর বাজিয়ে আবদুল হামিদকে বিদায় দেওয়া হয়। রাজসিক বিদায় অনুষ্ঠান শেষে তার গাড়ি বহরের যাত্রা শুরু হয়। এসময় তাকে এসকর্ট দেয় পুলিশের অশ্বারোহী দল। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে মোটর শোভাযাত্রায় বঙ্গভবন থেকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর নিকুঞ্জে তাঁর নিজের বাড়ি রাষ্ট্রপতি লজে।

বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতির বিদায়ের দিনে এমন সংবর্ধনাপূর্ণ আয়োজন হয়েছে। এর আগে কোনো রাষ্ট্রপতিকে নিজেদের আয়োজনে বিদায় জানানোর সুযোগ হয়নি বঙ্গভবনের। যে কারণে এ বিদায়টি উৎসবে পরিণত হয়েছে। যেকোনো দেশের জন্য এই ঘটনা অনুকরণীয় উদাহরণ। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেটা পারেনি, সেটা করে দেখালো বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কথায় কথায় গণতন্ত্র নিয়ে নানা বুলি আওড়ায়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থা নিয়ে নানা ছবক দেয়। কিন্তু আজকের বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ ও ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্যে দিয়ে অনেক দেশেরই অনেক কিছু শেখার আছে। গণতান্ত্রিক ধারা যদি অব্যাহত থাকে তবে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের যে শিষ্টাচার সেটা পশ্চিমা দেশগুলোকে শেখাতে পারে আজকের রাষ্ট্রপতি বিদায়ের উদাহরণ দিয়ে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭