ইনসাইড থট

সাম্প্রতিক বিশ্বে স্পষ্টবাদী, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, অকুতোভয় এক বিশ্বনেতার নাম ‘শেখ হাসিনা‘


প্রকাশ: 27/04/2023


Thumbnail

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। প্রাণঘাতী করোনার প্রভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল ব্রিটেনের অর্থনীতি। নভেল করোনা মহামারির পর থেকে দেশটিতে বেকারত্বের চিত্র থেকে বোঝা যায়, করোনা মহামারি কতটা সংকটে ফেলেছে ব্রিটিশ অর্থনীতিকে। ব্রিটেনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের নাম হচ্ছে পর্যটন খাত।

অর্থনৈতিক সংকটের জেরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের পদ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন লিজ ট্রাস। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তৎকালীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও পরবর্তিতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ শেষ হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোল আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিতিশীলতাকে দীর্ঘায়িত করছে। কারণ, বিশ্বের অন্যতম খাদ্য জোগানদাতা রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় সরবরাহ ব্যবস্থায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটেছে। বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম তো বেড়েছেই। আবার মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরির হার না বেড়ে বরং কমে যাওয়ায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। 

কোভিড-১৯ এর আঘাতে দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকায় পর্যটক সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অভূতপূর্ব মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার প্রায় সম্পূর্ণ নিঃশেষ, চিকিৎসা দ্রব্য সরবরাহে ঘাটতি এবং মৌলিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির মতো ঘটনায় যে অর্থনৈতিক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়, তার জের ধরে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের বৃহত্তম সরকার-বিরোধী আন্দোলনটি সংঘটিত হয়।

করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন লকডাউনসহ নানা নিষেধাজ্ঞা আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দায়

চরম অর্থনৈতিক সংকটে আছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সংবাদ সংস্থা  ‘ব্লুমবার্গ‘ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গত ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় দেশটির মুদ্রা রুপি‘র বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির রেকর্ড দরপতন হয়ে ২৮৭.২৯ রুপিতে পৌঁছেছে, যা একটি নতুন রেকর্ড। 

২০২২ এর পুরোটা সময়জুড়ে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে ছিল পাকিস্তান। ২০২৩ এর শুরুতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ৬ জানুয়ারি ২০২৩, পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দ্য স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৪ দশমিক ৩৪৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যেটি মাত্র ৩ সপ্তাহের আমদানি খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

জ্বালানী সংকট মোকাবিলায় পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানী ইসলামাবাদের সব বাজার, শপিং মল ও বিয়ের অনুষ্ঠানের হলগুলো রাত ৯টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

তবে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দাকালেও বাংলাদেশে দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্রের হার কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘খানা আয় ও ব্যয় জরিপ-২০২২‘ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে অতিদরিদ্রের হার ৫.৬ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে ছিল ১২.৯ শতাংশ। ‘কোভিড-১৯ এর কারনে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটে সাড়ে তিন কোটি মানুষ মারা যাবে‘ বিশ্ব খাদ্য সংস্থার এই ভবিষ্যতবাণী থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার সঠিক নির্দেশনায় বাংলাদেশে কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্যের কারণে বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যে আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত হয়েছে যা বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। করোনা মহামারির পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় সফলতার কারনে জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক গঠিত গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের ৬ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের একজন হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। 

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় 

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রাপ্তির পটভূমিতে শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক গৃহীত সময়োপযোগী সংস্কারের জন্য ‘ব্লুমবার্গ‘ কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ লিডার বেটস আইএমএফ-ম্যান্ডেটেড রিগর উইল পে অফ ইন পোলস’ শিরোনামের নিবন্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছে এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক বলিষ্ঠ নেতৃত্ব হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনা। বিচ্ছিন্নতাবাদী, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কারণে তিনি এখন সারাবিশ্বে রোল মডেল। ১০ লাখের বেশি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে বৃটিশ সংবাদ মাধ্যম কর্তৃক ‘মানবতার মা‘ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব মন্তব্য করেছেন, ‘শেখ হাসিনার কাছে অনেক কিছু শিক্ষনীয় রয়েছে‘। জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার কারণেও তিনি সারাবিশ্বে সমাদৃত। তার চৌকস নেতৃত্বে দেশ পরিচালনায় ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমান্তরাল সহযোগিতার সম্পর্ক বিরাজ করছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বিদেশি হস্তক্ষেপ বন্ধ করার বিষয়েও তিনি সচেতন।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় হিমশিম অবস্থায় গত দুবছরে সরকারকে আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা আন্তর্জাতিক চাপ ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান ও সেসব দেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করার অভিপ্রায় নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে বেরিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুব শীঘ্রই প্রতিবেশী দেশ ভারত সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার সুস্পষ্ট মনোভাব তুলে ধরেছেন, যা নজিরবিহীন। ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের সুসম্পর্ক দিনে দিনে গভীরতর হচ্ছে। জি-২০ সম্মেলনে ভারত বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ বার্তা দেওয়ায়, বাংলাদেশ-ভারত গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আজ মর্যাদার সহযোগিতার সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা‘ স্বাধীনতার বার্তায় যুক্ত করেছেন। দুই শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ও চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে বাংলাদেশকে পাশে রাখতে মরিয়া। আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তায় ভারত ও রাশিয়ার অগ্রাধিকারও বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন যাবত  স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র সবাই বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ইতিবাচক মনোভাবকে ধরে রাখাই হবে দূরদর্শী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক কৌশল।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দৃঢ় ব্যক্তিত্বের বিশ্বনেতা। জলবায়ুর পরিবর্তন, নিরাপদ অভিবাসন, আন্তর্জাতিক সংকট মোকাবিলা, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হচ্ছেন শেখ হাসিনা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭