ইনসাইড পলিটিক্স

জাহাঙ্গীরের পেছনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা?


প্রকাশ: 28/04/2023


Thumbnail

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিলেন বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীর যেন শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন জমা না দেন, সেজন্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তার সঙ্গে যোগোযোগ করেছিলেন। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাকে অনুরোধ করা হয়েছিল, নির্বাচনের আগে তিনি যেন দলে বিভক্তি না আনেন। এই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য একটি বড় ধরনের বিপর্যয় আনতে পারে। 

তাকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে, আজমত উল্লা’র পক্ষে যদি তিনি কাজ করেন, তাহলে ভবিষ্যতে পুরস্কৃত হবেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর কারো কথাই শুনেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে জাহাঙ্গীর বলেছেন, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী তাকে টেলিফোন করলেই তিনি মনোনয়ন জমা দেবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন। জাহাঙ্গীরের এ ধরনের বক্তব্যকে ধৃষ্টতা মনে করছেন আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, আমরাই জাহাঙ্গীরকে মাথায় তুলেছি। তার যোগ্যতা এবং পরিপক্কতার বাইরে তাকে পদ-পদবী দেওয়া হয়েছে। যে জন্যই আজকে সে পদের লোভে দলকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলতে চাইছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যে নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় জাহাঙ্গীরের উত্থান ঘটেছিল, সে নেতাই এখন নেপথ্যে থেকে তাকে মদদ দিচ্ছেন। তার সাথে পরামর্শ করেই মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ওই নেতাই (সাবেক জুট ব্যবসায়ী) জাহাঙ্গীরকে আস্তে আস্তে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করেন এবং গতবছর নির্বাচনে তাকে মনোনয়নও পাইয়ে দিতে সাহায্য করেন। ওই নেতার পৃষ্ঠপোষকতায়ই জাহাঙ্গীরের উত্থান ঘটেছে বলে জানা গেছে। তবে জাহাঙ্গীর যখন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যান এবং জাহাঙ্গীরের অডিওগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়, তখন ওই নেতা আর জাহাঙ্গীরকে বাঁচাতে পারেননি। সে সময় ওই নেতা নিরবতা পালন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই নেতা এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রেও এক ধরনের  নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিলেন বলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।  

এই মনোনয়ন বোর্ডের সভায় জাহাঙ্গীরকে যে মনোনয়ন দেওয়া হবে না, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলো। সে জন্যই তিনি জাহাঙ্গীরের পক্ষ অবলম্বন করেননি। কিন্তু মনোনয়ন না পাওয়ার পর, স্বতন্ত্রভাবে জাহাঙ্গীর যেন নির্বাচনে দাঁড়ান সে ব্যাপারে তার প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। তার সবুজ সঙ্কেতেই জাহাঙ্গীর শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

তবে জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির জন্যই জাহাঙ্গীর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী ৮ মে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। তার আগেই তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে জাহাঙ্গীর প্রত্যাশা করছেন, তাকে সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে অনুরোধ করবেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য এবং তিনি কি পাবেন সে হিসেব-নিকেষ করেই তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন।

তবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেছেন, জাহাঙ্গীর যদি আওয়ামী লীগের সাথে দর কষাকষি করে, তাহলে পস্তাবে। তাহলে সে এখনও শেখ হাসিনাকে চেনেনি। কারণ শেখ হাসিনাকে কেউ চাপে ফেলে কোনো কিছু আদায় করতে পারে না। যদি জাহাঙ্গীর নির্বাচনে না দাঁড়াতেন, শুধুমাত্র রাজনীতি করতেন এবং আজমত উল্লাকে সমর্থন করতেন, তাহলে হয়তো জাহাঙ্গীরের প্রতি সুপ্রসন্ন হতেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু এখন এ ঘটনা জাহাঙ্গীরের ক্যারিয়ারের জন্যই হুমকির সৃষ্টি করছে বলেই একাধিক সূত্র মনে করছে। 

তাছাড়া মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার পরও আওয়ামী লীগের যে বিভক্তি, সেটি অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর গাজীপুরে যদি শেষ পর্যন্ত কোনো বিপর্যয় হয়, তাহলে তার জন্য জাহাঙ্গীরই দায়ী থাকবেন। এমনকি এখন যে পরিস্থিতি, তাতে আজমত উল্লা যদি বিজয়ী হয়, তাতেও জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক অধ্যায়ের শেষ সীমা দৃশ্যমান হচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭