ইনসাইড পলিটিক্স

আম-ছালা দুটোই হারাচ্ছেন জাহাঙ্গীর


প্রকাশ: 29/04/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলতে যেয়ে নিজেই চাপে পরে গেছেন বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। শুধু তিনি নন, তার মাকে দিয়েও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তিনি দলের নীতিনির্ধারকদের বিরাগভাজন হয়েছেন, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তার ব্যাপারে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি ওয়াশিংটনে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহিত হয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এই মনোনয়ন জমা দেওয়াকে তিনি ভালোভাবে নেননি। এটিকে দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যক্রম হিসেবেই প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করছেন। তার সঙ্গে আর কোন রকমের আলোচনা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। 

শুধু তাই নয়, জাহাঙ্গীর চেয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী তাকে ফোন করবেন এবং নির্বাচন না করার অনুরোধ করবেন। কিন্তু এমন কিছুই আওয়ামী লীগ সভাপতি করবেন না বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানাচ্ছে। তারা বলছে যে জাহাঙ্গীর এর ব্যাপারে কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। তার প্রতি দেখানো হবে না কোন ধরনের সহানুভূতি।

উল্লেখ্য যে ২০১৮ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আজমত উল্লার পরিবর্তে জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরের রাজনীতিতে উত্থান হঠাৎ আলোর ঝলকানির মত। ঝুঁট ব্যাবসায়ী থেকে তিনি রাতারাতি আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি পাদপ্রদীপে আসেন বলেও গাজীপুরের রাজনীতিবিদরা মনে করেন। ২০১৮ এর মনোনয়নের আগেই তাকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী পরীক্ষিত নেতারা মনে করেন এটিই ছিল আওয়ামী লীগের একটি বড় ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ এরকম একজন উঠতি কাঁচা টাকার মালিককে পদ-পদবী দেয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সম্পর্কেই একটি ভুল বার্তা দেয়া হয়েছিল। 

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের পর জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের বিপরীতে তার নিজস্ব বাহিনীর গঠন করেন এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতা-কর্মীদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, এমনকি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তি করেছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এ নিয়ে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় এবং বিষয়টি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পর্যন্ত গড়ায়। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন এবং পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দুর্নীতির অভিযোগে তাকে মেয়র পদ থেকেও বহিষ্কার করে। যদিও এই মেয়র পদের বহিষ্কার আদেশ চ্যালেঞ্জ করে জাহাঙ্গীর হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছিলেন। সেই রিট পিটিশনটি এখনও রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের কোন্দল বন্ধ করা এবং দলকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন বিদ্রোহী প্রার্থী এবং দল থেকে বহিষ্কৃতদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম ক্ষমা চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে তাকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হয়। সকলেই আশা করেছিল যে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে জাহাঙ্গীর সময় নেবেন এবং আস্তে-ধীরে রাজনীতিতে আবার তার অবস্থান পোক্ত করবেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর সেটি করেননি বরং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আজমত উল্লাহকে প্রার্থী করা হলে জাহাঙ্গীর প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেন। এটি দলের হাইকমান্ড নেতিবাচকভাবে নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আম-ছালা দুটোই হারাতে পারেন জাহাঙ্গীর এমন গুঞ্জন এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বোত্র।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭