ইনসাইড পলিটিক্স

অন্ধকার টানেলে জাহাঙ্গীর


প্রকাশ: 30/04/2023


Thumbnail

গাজীপুরের আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর আলম কি রাতনীতির অন্ধকার টানেলে প্রকাশ করলেন?—এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচিত হচ্ছে। আজ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিনে তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেছে। ঋণ খেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। জাহাঙ্গীর গণমাধ্যমকে বলেছেন যে এটি অপ্রত্যাশিত, তিনি ঋণ খেলাপী নন। একটি বিদেশী ব্যাংকের ঋণে তিনি গ্যারান্টার ছিলেন। সেই ঋণও পরিশোধ করা হয়েছে। সেখানে কোনো খেলাপী নেই। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র তিনি দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর এটিও জানিয়েছেন যে তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। জাহাঙ্গীর করুন বা নাই করুন রাজনীতিতে এক জটিল গোলকধাঁধার মধ্যে পৌঁছে গেছেন হঠাৎ ঝলসে যাওয়া আওয়ামী লীগের এই নেতা। এখন যদি তিনি রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে আপিল করেন সেক্ষেত্রে তিনি আওয়ামী লীগের কাছে চির শত্রুতে পরিণত হবেন। 

আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত হয়ে আবার ফিরে এসেছিলেন জাহাঙ্গীর। এবার যদি তিনি বহিস্কৃত হন তাহলে তার আওয়ামী লীগের রাজনীতি অন্তত শেষ হয়ে যাবে। জাহাঙ্গীর কি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবেন? আবার যদি জাহাঙ্গীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন তাহলে তার অবস্থান গাজীপুরে একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। কারণ তিনি আজমত উল্লাকে চ্যালেঞ্জ করেই গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে দলের বিরুদ্ধে নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার অবস্থান। অফিসার রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক তার মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত যদি শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে এবং এটির বিরুদ্ধে যদি তিনি আপিল না করেন তাহলে তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ আর দর কষাকষি করবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে তিনি নির্বাচন করুন না করুন এই নির্বাচনে তিনি আজমত উল্লাকে প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সমর্থন না দেন বা কোনো কারণে যদি এই নির্বাচনে আজমত উল্লার কোনো বিপর্যয় ঘটে তাহলে তার সব দায়-দায়িত্ব পড়বে জাহাঙ্গীরের ওপর। ফলে জাহাঙ্গীরের রাজনীতির সমাপ্তির অধ্যায় সূচিত হবে এখান থেকেই। 

যদিও জাহাঙ্গীর পন্থীরা মনে করছেন যে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে জাহাঙ্গীরকে আজমত উল্লাহকে হারাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। কিন্তু আজমত উল্লাহ যদি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হেরে যান তাহলে আজমত উল্লাহ যত না ক্ষতি হবে তার চেয়ে বড় ক্ষতি হবে জাহাঙ্গীরের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে গতবারের মতো অবস্থা এবার আর নেই। জাহাঙ্গীর এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের তৃণমূল একাট্টা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আসলে আওয়ামী লীগের নন, জাহাঙ্গীর লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গাজীপুরে—এমন বক্তব্য গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতারা দিচ্ছেন। এর চেয়েও জরুরী বিষয় যেটি তাহলো জাহাঙ্গীর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করাকে রাজনৈতিক ধৃষ্টতা হিসেবে দেখছেন। কাজেই গাজীপুরের নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত গাজীপুরে জাহাঙ্গীর প্রার্থী হোন না হোন তার রাজনীতি ক্রমশ কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাহাঙ্গীর রাজনীতির এক অন্ধকার টানেল প্রবেশ করেছেন। খুব অল্পসময়ে সবকিছু পাওয়ার পর সেটি ধরে রাখতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের কাছে তিনি একজন ক্ষমতালোভী এবং পদ লোভী ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছেন। অনেকেই জাহাঙ্গীরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে এবার নির্বাচন না করে আজমত উল্লাহকে সমর্থন দিয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে সংগঠিত করার। কিন্তু সে পথে তিনি যান নেই। এখন মনোনয়নপত্র বাতিলের মধ্য দিয়ে কৌশলের খেলায় আরও কোণঠাসা হয়ে পড়লেন জাহাঙ্গীর। এই অন্ধকার টানেল থেকে তিনি কিভাবে বেরিয়ে আসবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭