এডিটর’স মাইন্ড

দুঃখিত কাদের সিদ্দিকী, আপনি অন্যায় করেছেন


প্রকাশ: 30/04/2023


Thumbnail

টাঙ্গাইলের সখীপুরে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতে (গার্ড অব অনার) নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাধা দিয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। শুধু বাধা দেননি, অসম্মানজনক, অসৌজন্যমূলক কথা বলেছেন। পরে ইউএনও চলে গেলে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার জানাজা হয়। অবশ্য কাদের সিদ্দিকী ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই নারী ইউএনও ফারজানা আলমের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ খানকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয় বা গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। 

গত শুক্রবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে সখীপুরে বাজারের নিজ বাড়িতে মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ খান। গত শনিবার বেলা দুইটার দিকে সখীপুর পিএম পাইলট মডেল গভ. স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর সময় ফারজানা আলমকে বাধা দেওয়া হয় ঘটনা থেকে। এই ঘটনায় দেশবাসী স্থম্ভিত, হতবাক। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আপনি ভুল করেছেন। 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নাম নিঃসন্দেহে স্বর্ণাক্ষরে খচিত থাকবে। ১৯৭১ সালে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় থাকবেন। একমাত্র বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা তিনি যিনি 'বীর উত্তম' খেতাব পেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ওই মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন স্বয়ং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছিলন, অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অবশ্যই অন্যতম। এ কারণে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কিন্তু একজন ব্যক্তি যদি অযুত পরিমাণও ভালো কাজ করেন সেটি যেমন প্রশংসার দাবি রাখে, তেমনি তিনি যদি একটি মন্দ কাজও করেন সেটি সমালোচনার দাবি রাখে। এক্ষেত্রে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অন্যায় করেছেন, সঠিক করেননি।

ফারজানা আলম একজন ইউএনও। তিনি নারী কিংবা পুরুষ সেটি বড় কথা নয়। তিনি একজন ম্যাজিস্ট্রেট। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ মারা গেলে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয় এবং এই গার্ড অব অনার প্রদান অনুষ্ঠানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকেন। একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিত থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা একটি রাষ্ট্রীয় নীতি এবং রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার। এর সঙ্গে জানাজার কোন সম্পর্ক নেই। জানাজা এবং গার্ড অব অনার দুটি পৃথক জিনিস। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এই বাস্তবতার না বুঝে শুধুমাত্র মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন এবং উগ্র মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক একটা কদর্য চেহারা জনগণের সামনে উন্মোচন করেছেন। এজন্য আমরা তাকে ধিক্কার জানাই। এটি একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে অগ্রহণযোগ্য, অন্যায্য। অবশ্য কাদের সিদ্দিকী এ ধরনের ঘটনা বহু ঘটিয়েছেন। এজন্যই রাজনীতিতে তিনি যে জায়গায় থাকতে পারতেন সে জাগায় নেই। রাজনীতিতে তাঁর অবদানের জন্য তিনি যে সকলের মাথার মনি হয়ে থাকতেন সেই জায়গাটায় তিনি নেই তার এই সমস্ত বিভ্রান্তি এবং কদর্য রাজনৈতিক আচরণের কারণে। 

কাদের সিদ্দিকী এক সময় নয়াদিগন্ত নামে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত একটি পত্রিকায় কলাম লিখতেন। দিগন্ত টেলিভিশনে তিনি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। এক সময় আওয়ামী লীগকে তীব্র ভাষায় গালাগালি করেছিলেন আবার স্বার্থের জন্যই এখন আওয়ামী লীগার হয়ে উঠেছেন এবং আওয়ামী লীগার হিসেবেই তিনি জাতিকে নসিহত করছেন। রাজনীতিতে তার কোনো স্থিরতা নেই, নেই সঠিক পথে চলার প্রেরণাও। বরং তিনি বারবার নিজের সুবিধা জন্য দিক বদল করেছেন, জায়গা বদল করেছেন। এমনকি কখনো কখনো তিনি দিক ভ্রান্ত হয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে গিয়ে আওয়ামী লীগের কবর রচনা করেছেন, শেখ হাসিনাকে গালমন্দ করেছেন আবার গণভবনে গিয়ে তিনি আনন্দে আপ্লুত হয়েছেন। এই সমস্ত বিভ্রান্তিকর রাজনীতিবিদরাই তো দেশের জন্য ক্ষতিকর, এটি বারবার প্রমাণিত হয়েছে। 

অনেকেই বিভিন্ন সময় বলে থাকেন যে কাদের সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগের নেয়া উচিত। কিন্তু এই ধরনের বিপদকে শেখ হাসিনা কেন দূরে রাখেন সেটি আরেকবার প্রমাণিত। শেখ হাসিনার এটিই বিচক্ষণতা। তিনি একাত্তর এবং পঁচাত্তরের অবদানের জন্য কাদের সিদ্দিকীকে সম্মান করেন আবার এ ধরনের বিভ্রান্তিকর মৌলবাদী এবং অসংলগ্ন তৎপরতার জন্য দল থেকেও তাকে দূরে রাখেন। কাদের সিদ্দিকী আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আপনাকে সম্মান জানাই কিন্তু আপনি নারীকে অপমানিত করছেন, মুক্তিযুদ্ধকে অপমানিত করছেন এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প উস্কে দিয়েছেন। এজন্য আপনাকে ধিক্কার জানাই। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭