ইনসাইড পলিটিক্স

বিশ্বাসঘাতকদের জন্য আওয়ামী লীগের বিশেষ নজরদারি


প্রকাশ: 01/05/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের জন্য আগামী পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন এটা তাদের 'অ্যাসিড টেস্ট'। একদিকে নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তার জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চায় অন্যদিকে এই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করে আওয়ামী লীগ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণ করতে চায় যে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অবান্তর। আর এই কারণেই এই নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের চেয়ে সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগ পাঁচ সিটি করপোরেশনে যে মনোনয়ন দিয়েছে সেই মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জ করে প্রায় প্রতিটি জায়গায় ষড়যন্ত্রকারী এবং বিশ্বাসঘাতকরা অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে খবর এসেছে। কোথাও কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে প্রকাশ্যে আবার কোথাও কোথাও গোপনে দলীয় প্রার্থীকে দুর্বল করার জন্য কাজ চলছে। এরকম একটি বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ যারা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচরণ করবে তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক এবং নব মোশতাক হিসেবে অভিহিত করছে এবং তাদেরকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। 

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, গতবার যারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচরণ করেছিল, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিল তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এবার আর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে না। নির্বাচনের আগে এই ধরণের বিদ্রোহ এবং দলের ভেতর অন্তর্ঘাতকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। জানা যাচ্ছে পাঁচ সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন ব্যক্তি, নেতা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানারকম নেতিবাচক তৎপরতা চালাচ্ছে। এই তৎপরতা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নেতারা খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং তাদেরকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

সবচেয়ে কম বিদ্রোহের মধ্যে পড়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। কিন্তু খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একটি অংশ, যুবলীগের কিছু অংশ অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা প্রকাশ্যে লিটনের অবস্থানের সমালোচনা না করলেও গোপনে গোপনে তারা লিটনের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালাচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে। খায়রুজ্জামান লিটন সাম্প্রতিক একাধিক বক্তৃতায় দলের এই অভ্যন্তরীণ শত্রুদেরকে চিহ্নিত করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিনি যে কমিটি গঠন করেছেন সেই কমিটিতেও এই সমস্ত 'বিশ্বাসঘাতকদের' তিনি রাখেননি। 

রাজশাহীতে বিষয়টি গোপন থাকলেও সিলেটে এটি অনেকটাই প্রকাশ্য। সিলেটে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার পর মুখে মুখে সিলেট মহানগর নেতারা তাকে সমর্থন জানালেও গোপনে গোপনে তার বিরুদ্ধে কাজ করছেন এমন অভিযোগ রয়েছে। সিলেটের নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তাদের তালিকা তৈরি করার কাজ করছেন। 

গাজীপুরে এই বিষয়টি প্রকাশ্যে হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হয়েছেন এবং জাহাঙ্গীর আলম যে আজমত উল্লাহর পক্ষে কাজ করবেন না এ সম্পর্কে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে জাহাঙ্গীর আলম এবং তার দলবল বন্য মোশতাক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন এবং তাদেরকে নতুন করে বহিষ্কারাদেশের আওতায় আনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও গাজীপুর নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে আওয়ামী লীগ এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।

বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহ এবং তার পিতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত এর বিরুদ্ধে কাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরকম ঘটনা যদি শেষ পর্যন্ত চলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত যদি তারা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছেন, তাদের প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ড নজরদারির মধ্যে রয়েছে। খুলনাতে সে তুলনায় বিদ্রোহ কম এবং সেখানে তালুকদার আব্দুল খালেক অনেক স্বাচ্ছন্দ্য অবস্থায় রয়েছে। তবে দলের অবস্থানের বিরুদ্ধে যারাই কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে এবার কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কারা কিভাবে করছে বিশেষ করে সন্দেহভাজন যারা তাদেরকে নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদেরকে এ ব্যাপারে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭