ইনসাইড পলিটিক্স

আজমত উল্লার পক্ষে একাট্টা গাজীপুর আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 02/05/2023


Thumbnail

জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধাচারণ গাজীপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লার জন্য শাপে বর হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এবং মনোনয়ন জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেছে। মনোনয়ন বাতিল হোক বা গৃহীত হোক সেটা বড় বিষয় নয়, তার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত এবং তার কিছু বক্তব্য গাজীপুর আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র বিতর্ক তৈরি করেছে। এমনকি যারা বিভিন্ন সময়ে জাহাঙ্গীরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন, যারা আজমত উল্লার বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরকে পাদপ্রদীপে আনার জন্য চেষ্টা করেছিলেন তারা পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের ওপর রুষ্ট, ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আর একারণেই এখন জাহাঙ্গীর গাজীপুর আওয়ামী লীগে এক ঘরে হয়ে পড়েছেন। তার মুষ্টিমেয় কিছু সমর্থক, তল্পিবাহক গোষ্ঠী ছাড়া কোনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জাহাঙ্গীরের পক্ষে নেই। 

গতকাল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন জাহাঙ্গীরকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে জাহাঙ্গীর যদি শেষ পর্যন্ত আজমত উল্লার পক্ষে কাজ না করেন তাহলে তাকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। দলের হাইকমান্ডের সাথে কথা বলেই এসএম কামাল এরকম বক্তব্য দিয়েছেন। শুধু এসএম কামাল নয়, আওয়ামী লীগের সমস্ত নীতিনির্ধারক নেতারা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আর এটিই বুঝতে পেরেছে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা এখন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথাবার্তা বলা থেকেও বিরত থাকছে। জাহাঙ্গীর দৃশ্যত গাজীপুরে একা হয়ে গেছে।

২০১৩ নির্বাচনে আজমত উল্লা বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এইসময় জাহাঙ্গীরসহ আওয়ামী লীগের একটি অংশ আজমত উল্লার বিরুদ্ধে গোপনে কাজ করেছিল এবং আওয়ামী লীগের এই বিভক্তির কারণে শেষ পর্যন্ত আজমত উল্লা পরাজিত হয়েছিলেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। ২০১৮ নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার পৃষ্ঠপোষকতা পান এবং তার মনোনয়ন লাভ অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। এই মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর আজমত উল্লা জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি জাহাঙ্গীরের বিভিন্ন অপমান এবং লাঞ্ছনা সহ্য করেও দলের স্বার্থে গাজীপুর আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর মেয়র হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ওপর বিরূপ আচরণ শুরু করেন। আওয়ামী লীগের যারা ত্যাগী পরীক্ষিত তাদেরকে বাদ দিয়ে একটি বিকল্প আওয়ামী লীগ গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার টাকার ঝন ঝনানীর কারণে নব্য আওয়ামী লীগারদের দাপট বেড়ে যায় গাজীপুরে। কিন্তু এই পরিস্থিতি বেশিদিন চলেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে অসৌজন্যমূলক বক্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।পরবর্তীতে তিনি মেয়র পদ হারান। এরকম পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর যে মনোনয়ন পাবেন না তা মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। যদিও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় যারা দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা মানে এই নয় যে তিনি আবার নির্বাচনের মনোনয়ন পাবেন। বরং জাহাঙ্গীর যদি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে আজমত উল্লার পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করতো বা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েও থাকতো তাহলে তার এই পরিণত হতো না। 

জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সিদ্ধান্ত হওয়ার পর একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন এবং তার পিছু কিছু বক্তব্য ধৃষ্টতাপূর্ণ, ঔদ্ধত্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর প্রেক্ষাপটেই এখন জাহাঙ্গীর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের। ফলে গাজীপুরে গত এক দশকের মধ্যে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় আছে এবং এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারলে আজমত উল্লা গাজীপুরের নির্বাচনে সহজ জয় পাবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭