ইনসাইড থট

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়: ‘পি জি হসপিটাল‘ বা ‘বিএসএমএমইউ‘ নয়


প্রকাশ: 04/05/2023


Thumbnail

আমার ডিপার্টমেন্টের একজন বড় ভাই। সদাহাস্য, সদালাপী, চলাফেরা, পোষাকে-আশাকে অত্যন্ত স্মার্ট একজন মানুষ। ছাত্র হিসাবে কেমন, জানা নেই। তবে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের সুযোগ্য নেতা ছিলেন। নাম ডাঃ এস এম বি এফ এ সবুর। আমরা ছোটরা ‘সবুর ভাই‘ বলে সম্বোধন করতাম। উনার বন্ধুরা দুষ্টুমি করে ডাকতো ‘A-Z সবুর'। মূল নাম লিখতে capital ও small letter  মিলে ৫ টি বর্ণ ব্যবহৃত হলেও নামের টাইটেল হিসাবে ৬ টি capital letter ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এই ৬ টি বর্ণে কি বুঝায় বা অর্থ কি, আমার জানা নেই বা জানতে চেষ্টাও করিনি। এমনি আরও একটি উদাহরণ আরেকজন সাবেক ছাত্রনেতা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন, বর্তমানে খুবই সম্মানিত ব্যক্তি। ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের সফল অধ্যক্ষ এ কে এম আব্দুর রফিক। ৯০ এর দশকে যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থা  অত্যন্ত নাজুক, সেসময়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদে (বাকসু ৮৮-৮৯) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত ‘রফিক-আওলাদ‘ পরিষদ পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়েছিল। আমরা দুজন একই হলের একই ফ্লরে পাশাপাশি রুমে অবস্থান করলেও, আমি কখনই জানতে পারিনি ‘এ কে এম‘ বর্ণ তিনটির অর্থ কি। 

এই বর্ণগুলো নামের টাইটেল বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করা হলেও, এই বর্ণগুলোর সাথে মূল নামের শুধুমাত্র আদ্যক্ষর ব্যবহার করে সম্বোধন করা হলে ভিন্ন অর্থ দাঁড়ায় যাহা লঙ্কাকান্ড ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। তাই কোথায়ও কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামের শুধুমাত্র আদ্যক্ষরগুলি ব্যবহার করা উচিত নয়।

এই কথাগুলো অবতারণা করার উদ্দেশ্যে ভিন্ন। আলোচনা দীর্ঘ না করে সরাসরি বলছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশবরেণ্য ব্যক্তিদের দেশ ও সমাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের অবদান রয়েছে। রাজনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, গবেষণা, সমাজসেবা, ইত্যাদি বিষয়ে ঐ সকল গুনীজনদের নিজ নিজ অবদানের জন্য  সম্মানিত করা বা তাদের অবদানকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ঐ সকল গুনিজনের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ভবন বা রাস্তাঘাটের নামকরন করা হয়ে থাকে। তেমনিভাবে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সুবিধার্থে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ এলাকায় অবস্থিত হোটেল শাহবাগ এর ভবনগুলো ব্যবহার করে পোষ্ট গ্রাজুয়েট হসপিটাল স্থাপন করেছিলেন, যাহা সংক্ষেপে ‘পি জি হসপিটাল‘ হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে পিজি হসপিটাল কে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়‘ নামকরন করে। ইংরেজিতে Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Medical University (BSMMU). 

কয়েকদিন পূর্বে কোন এক সামাজিক অনুষ্ঠানেএকজন সিনিয়র চিকিৎসক নিজ পরিচয় দিতে গিয়ে বললেন, আমি ডাঃ ‘.....', প্রফেসর বিএসএমএমইউ। এই পরিচয় শুনে আমার মনে প্রশ্ন জাগলো, তিনি এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামটি ব্যবহার করলেন না কেন। উনার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারলাম। তিনি আওয়ামীলীগ ঘরানার একজন সিনিয়র চিকিৎসক। ছাত্র জীবনেও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ধরে নেওয়া যাক, এটা উনার ইচ্ছাকৃত ভুল নয়। সংক্ষেপে বলার সুবিধার্থে ‘বিএসএমএমইউ‘ ব্যবহার করেছেন। অথচ তিনি পরিচয়ে বঙ্গবন্ধুর নামটা পুরো ব্যবহার না করে আদ্যক্ষরগুলি ব্যবহার করলেন। যাহা আমার মনে প্রশ্ন জাগতে সহায়তা করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংসংক্ষিপ্ত রূপ হওয়া উচিত নয়। বঙ্গবন্ধুর পুরো নাম উচ্চারণ না করে শুধুমাত্র আদ্যক্ষরগুলি ব্যবহার করলে সকল মুজিব প্রেমিক, স্বাধীনতার পক্ষের সাধারণ মানুষের মনে একই প্রশ্ন জাগতে পারে। শুধুমাত্র এই আদ্যক্ষরগুলি থেকে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবেনা বা জানার চেষ্টাও করবেনা যে এই অক্ষরগুলোর মধ্যে বাঙালি জাতির পিতার নাম লুকায়িত রয়েছে। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও কিছু ভুল রয়েছে বলে মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুউচ্চ ভবনের চূড়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে নান্দনিক তোরণ নির্মাণ করে সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামের পাশে ‘বিএসএমএমইউ‘ লেখা রয়েছে, যাহা সাধারণ মানুষকেও বলার সুবিধার্থে এই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বিএসএমএমইউ‘ বলে অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি করতে উৎসাহিত করছে। 

দেশের অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত সাধারণ মানুষ অনেকেই অজ্ঞতাবশতঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে এখনও ‘পিজি হাসপাতাল‘ বললে এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটিকে ক্ষমা করা যায়। কিন্তু প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় শিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত অনেকে এবং আওয়ামীলীগ এর অনেক নেতাকর্মীরাই শুধু নয় ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তারাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংক্ষিপ্তভাবে ‘বিএসএমএমইউ‘ ব্যবহার করে থাকেন। অশিক্ষিতদের অজ্ঞতাজনিত ভুলত্রুটি ক্ষমার যোগ্য হলেও শিক্ষিতদের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটিকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারন তাদের এই অবহেলার কারণে পিজি হাসপাতালের ন্যায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম বিএসএমএমইউ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে যে উদ্দেশ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা প্রদান করার জন্য স্থাপিত দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম আনা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

তাই প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামটি যথাযথ ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিষ্ঠানের ভবন, প্রবেশদ্বার সহ সকল ক্ষেত্রে ‘বিএসএমএমইউ‘ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নাম যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭