ইনসাইড বাংলাদেশ

বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প খুঁজতে বলেছে কূটনীতিকরা


প্রকাশ: 04/05/2023


Thumbnail

কূটনীতিকদের ওপর নির্ভর করেই বিএনপি আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল এবং সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের ঘোষণা দিয়েছিল। সেই কূটনীতিকরা এখন বেঁকে বসেছে। কূটনীতিকরা বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন না। বরং বিএনপি নেতাদেরকে বলে দেওয়া হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প কিছু খুঁজে বের করার জন্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে একটি আপোষ ফর্মুলা খুঁজে বের করার জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। 

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে আগের যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি তা সংবিধানের পুন:সংযোগ করতে হয় এবং এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে হবে। তা না হলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং নির্বাচন হতেও দেবে না। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন মৃত ইস্যু। সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। কাজেই এটিকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল মার্কিন দূতাবাসে মধ্যাহ্নভোজে গিয়েও সাফ জানিয়ে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তারা কোন অবস্থাতে ফিরিয়ে আনবে না। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন না করার সরকারি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। সরকারের এই অবস্থানের কারণে কূটনীতিকরাও এই বিষয়টি নিয়ে এখন নতুন করে ভাবছেন। বিশেষ করে পৃথিবীর কোনো দেশেই যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেয় সেখানে বাংলাদেশে নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন করা কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প কিছু খুঁজে বের করার জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দিচ্ছেন। এমন একটি ব্যবস্থা তারা তৈরি করতে চান যেখানে নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তারা রুটিন কাজের বাইরে কোন কাজ করবে না। নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট ক্ষমতাবান থাকবে এবং সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর মাধ্যমে আগামী নির্বাচন যেন অবাধ গ্রহণযোগ্য নিশ্চিত হয় সেটি দেখতে চান অধিকাংশ পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা। আর সেজন্যই বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাইরে কি কি দাবি দাওয়া পূরণ করলে তারা নির্বাচনে আসবে সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন। 

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের নেতারা কূটনীতিকদের বলেছেন যে বাংলাদেশের নির্বাচন কাঠামোটি এমন যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা ২০১৮ উদাহরণ দিয়ে বলেছেন যে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করবে। প্রশাসন সরকার সাজিয়েছে, কাজেই এই প্রশাসন কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়েও বিএনপির আপত্তি রয়েছে। তবে এ সমস্ত আপত্তি সত্ত্বেও এখনো একটি সমঝোতার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। তারা মনে করছেন যে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে গেলে দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপিকে নির্বাচনে আসতেই হবে। আর তারা এসে যেন সুষ্ঠু নির্বাচন করে এবং অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে পারে সেই সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য তারা সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। 

সরকার সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে যে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে যে কোনো গ্রহণযোগ্য সম্মানজনক সমঝোতা প্রস্তাবে তারা রাজি। তবে এই সমঝোতা হতে হবে উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে। আওয়ামী লীগের নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে সরকার এমন কোনো চাপের মধ্যে নেই যে বিএনপিকে ছাড় দিয়ে নির্বাচনে আনতে হবে। বিএনপি যদি জনপ্রিয় হয় তাহলে নির্বাচনে এসে তারা জনপ্রিয়তা যাচাই করবে। এখন এই অচলাবস্থা শেষ পর্যন্ত কূটনীতিকরা কাটাতে পারেন কিনা সেটি দেখা বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭