এডিটর’স মাইন্ড

গডফাদারও নেই জাহাঙ্গীরের পাশে!


প্রকাশ: 05/05/2023


Thumbnail

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীর আলমের। গতকাল তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করেছেন। কিন্তু বিভাগীয় কমিশনার সাবেরুল ইসলাম শুনানি শেষে তার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। ফলে আপাদত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই জাহাঙ্গীর আলমের। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন তার জন্য একটিই পথ খোলা আছে। আর তা হলো হাইকোর্টে রিট আবেদন করা। সেটি জাহাঙ্গীর করবেন কি না তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তাকে যারা আত্মহননের পথে ঠেলে দিচ্ছেন তাঁরা তাকে রিট করারও পরামর্শ দিতে পারেন। জাহাঙ্গীরপন্থীরা কেউ কেউ তাকে বুঝাচ্ছেন যে কোনো মূল্যে তাকে প্রার্থী হতে হবে। প্রার্থী হলেই তার রাজনৈতিক কদর বাড়বে। দর কষাকষি করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসা সম্ভব হবে। কিন্তু যদি এই অবস্থায় জাহাঙ্গীর প্রার্থী না হয় তাহলে তার আওয়ামী লীগের রাজনীতি তো শেষ হবেই, সাথে তার রাজনৈতিক অধ্যায়েরও পরিসমাপ্তি ঘটবে। এরকম পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর তার গডফাদারের সাথে পরামর্শ করার কয়েক দফা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এবার গডফাদারও তার ফোন ধরছেন না, তাকে পাত্তা দিচ্ছেন না।

উল্লেখ্য যে, একজন গডফাদারের হাত ধরেই আওয়ামী লীগের রাজিনীতিতে জাহাঙ্গীরের উত্থান। জাহাঙ্গীর ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। এসময় তিনি জুট ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল বিত্তের মালিক হন এবং আওয়ামী লীগের একজন অতি গুরুত্বপূর্ণ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ঐ নেতার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠতার ফলে দ্রুত রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরের উত্থান হয় এবং তিনি গাজীপুর জেলা  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান। ২০১৮ নির্বাচনে দলের ত্যাগী পরিক্ষিত নেতা আজমত উল্লাহকে বাদ দিয়ে জাহাঙ্গীরককে মনোনয়ন দেয়ার পেছনেও ঐ নেতার বড় ধরনের ভূমিকা ছিলো। কিন্তু মেয়ার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর যখন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তি করেন তখন ঐ নেতা আর তার পাশে দাঁড়ান নি। বরং যে সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন সেই সভায় তিনি নীরবতা পালন করেছিলেন। 

অবশ্য এরপর জাহাঙ্গীরকে আবারও দলে ফিরিয়ে নেয়া আসার পেছনে তার গডফাদারের ভূমিকা ছিলো বলে কেউ কেউ মনে করেন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সাধারণ ক্ষমার আওতায় জাহাঙ্গীর আবার দলের প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরে পান। ঐ সময় তিনি সাধারণ ক্ষমার জন্য আবেদনে বলেছিলেন যে ভবিষ্যতে কোনোদিন দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজ করবেন না কিন্তু জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পরপরই সিটি নির্বাচন নিয়ে তিনি যা করেছেন তা অমার্জনীয় বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। এরকম পরিস্থতিতে ঐ গডফাদার জাহাঙ্গীরের পাশে আর দাড়াচ্ছেন না, তাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, গডফাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় জাহাঙ্গীরের উত্থান ঘটেছিলো। তিনি এরকমই, সু-সমইয়ে পাশে থাকেন বটে তবে দুঃসময়ে তিনি দূরে সরে যান। এবারও জাহাঙ্গীর তার কঠিন সময়ে তার গডফাদারকে পাচ্ছেন না। 

এখন প্রশ্ন হলোম জাহাঙ্গীরের রাজনীতির পরিণতি কি? জাহাঙ্গীর যেটা আশা করেছিলেন যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটা দর কষাকষি করবেন। নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, তিনি দলের একটা পদ-পদবি পাবেন। কিন্তু তার সেই আশায় গুড়েবালি। এখন জাহাঙ্গীরের উপর আওয়ামী লীগ বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। জাহাঙ্গীরের এখন দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো যে কোনো মূল্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। কিন্তু এখন গাজীপুরের রাজনীতিতে যে অবস্থা তাতে জাহাঙ্গীর যদি প্রার্থী হয় তবে গোটা গাজীপুর আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অবস্থান করবে। জাহাঙ্গীরের তৃতীয় উপায় হলো আবার ক্ষমা প্রার্থনা করে নির্বাচনে আজমত উল্লাহর প্রচারণায় অংশ নেয়া। কিন্তু তা কি জাহাঙ্গীর করবেন এই প্রশ্নই রাজনৈতিক অঙ্গনে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭