ইয়ুথ থট

সোলো এক্সপিডিশনে ইয়ালা পিক'র চূড়ায় বাংলাদেশের তানভীর


প্রকাশ: 05/05/2023


Thumbnail

(পর্ব-২)

স্বপ্নের নেপাল। হিমালয়ের কন্যা সে। সাদা সুউচ্চ পর্বত একে তুষারের শুভ্রতা দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখে গভীর আর মৌন সৌন্দর্যে। আর তাই যারা পাহাড় ভালোবাসেন, উচ্চতাকে ভালোবাসেন তাদের কাছে হিমালয় হলো স্বর্গ

এক একটা পাহাড় জয় করা যেনো পাহাড়প্রেমীদের কাছেও স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নপূরণ করতে বাংলাদেশের থেকে যাত্রা করেন মোহাম্মদ তানভীর আলম। ছুয়ে আসেন ইয়ালা পিকের শিখর। ল্যাংটাং রিজিয়নের ইয়ালা পাহাড়ের উচ্চতা ৫৫২০ মিটার বা প্রায় ১৯ হাজার ফুট। সেই গল্প ও নেপাল পৌছানোর পর তার দিনলিপি নিয়ে লিখেছেন আমাদের কাছে।  তার গল্প আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো দুইটি ভিন্ন পর্বে। আজকে থাকছে অভিযানের শেষ পর্ব, থাপছে  অধরা কে ছুঁতে পারার আনন্দের গল্প। 

৫ম দিন-গন্তব্য: কায়ানজিন গোম্পা, উচ্চতা ৩'৮০০ মিটার

সকাল ৭:৩০ এ মুন্ডু থেকে রওনা হলাম কায়ানজিন গোম্পার উদ্দ্যেশ্যে। গোম্পা পর্যন্ত রাস্তা বেশী দীর্ঘ না, ২-২:৩০ ঘন্টা লাগবে পৌঁছাতে। মুন্ডুতে যে লজে ছিলাম সেখানে বুদ্ধা ইন নামে একটা লজের কার্ড দিয়েছে যদিও আমার থাকার ইচ্ছে শেরপা লজে। কারণ বেশিরভাগ বাংলাদেশী ঐ লজে থাকে। গোম্পা যাওয়ার আগে আমার ২ জন প্রোফেশনাল গাইডের সাথে কথা হয়। আমি একা ইয়ালা পিক সামিটে  যাব শুনে আমার সাথে পোর্টার হিসেবে যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করে এবং পথেই আমার সাথে ডিল করতে চায়, আমি পরে যোগাযোগ করতে বলে এগোতে থাকি।

১০টা নাগাদ গোম্পাতে চলে আসি এবং শেরপা লজ খুঁজতে থাকি। এমন সময় হঠাৎ আমাকে একজন ডাক দেয় এবং জিজ্ঞাসা করে আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি কিনা? আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করি তুমি কি করে বুঝলে? ও বলল, তোমার ব্যাগ ও তোমাকে একা দেখে। আমি একটা বোকা বোকা হাসি দিলাম। আমার মনে হয় ও গায়ের রং দেখে জাজ করছে। এই ভদ্রলোকের নাম চেম্বেল এবং  ও শেরপা লজের মালিক। 

লজের ডাইনিং রুমে ঢোকার পর একটা ভালো লাগার অনুভূতি ছুঁয়ে গেল। রুমের এক কোণায় বাংলাদেশ এর পতাকা শোভা পাচ্ছে। গোম্পাতে লোকাল যাদেরকেই বাংলাদেশী পরিচয় দেই  তাঁরা সবাই প্রথমেই বলে, শেরপা লজ? মানে বাংলাদেশীরা এই লজেই উঠে এটা মোটামুটি স্ট্যাবিলিশড। 

চেম্বেল এর সাথে এক্সপিডিশনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শেষ করে ১১ টার দিকে রওনা দিলাম কায়ানজি রি এর উদ্দেশ্যে। অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম করার পর মনে হলো ট্রেকিং রাস্তা ধরে এগোলে সময় বেশি লাগবে, তারচেয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে যাই।  কিছুদূর এভাবে উঠার পর বুঝতে পারলাম এটা পুরোপুরি সঠিক সিদ্ধান্ত হয় নি, কারণ যে জায়গায় পাহাড়ের গা বেয়ে উঠছি সেটা আমার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি খাড়া। ট্রেকিং রূটে ফিরব কিনা চিন্তা করতে করতে উপরে তাকিয়ে দেখি অনেকগুলো পাথরের মাথা বা অর্ধেক অংশ মাটির উপরে বের হয়ে আছে। সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম, পাথরগুলো ব্যবহার করে উঠার সিদ্ধান্ত নিলাম। এতে করে কিছুটা ক্লাইম্বিং প্রাক্টিস হয়ে যাবে। আমি উপরে উঠছি এমন সময় ওমর আর চন্দন নামছে। ওরা আমাকে এভাবে উপরে উঠতে দেখে ভাবছে আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। ওরা আমাকে বারবার রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে। হেসে ওদেরকে বুঝালাম এটা প্রাক্টিসের জন্যে করছি। এভাবে অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করার পরে ক্লান্ত হয়ে যাই এবং আবার ট্রেকিং রুটে ফিরে আসি।

১২:৩০ এ আমি রি এর চূড়ায় পৌঁছাই, পৌঁছানোর একটু পর আমার ভূল ভাঙ্গে। এটা আসলে নিচের চূড়াটা যাকে কায়ানজি রি লোয়ার পিক বলা হয়, এর উচ্চতা ৪,৩০০ মিটার। আসলে নিচে থেকে উপরের চূড়াটা দেখতে না পাওয়ায় এই বিভ্রান্তি। কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে পরেছি। উপরের চূড়ায় পৌঁছাতে আমাকে এখনও ৩০০ মিটার এর বেশি উপরে উঠতে হবে এবং ম্যাপ অনুযায়ী  ১.৫ কি:মি দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। এদিকে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে, পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে গিয়ে ভালোই শক্তি ক্ষয় হয়েছে।


অবশেষে ইচ্ছা শক্তিরই জয় হলো। দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে উপরের চূড়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করি। ১:১০ এ চূড়ায় পৌঁছাই, এর উচ্চতা ৪,৬৫০ মিটার। বাতাসের তীব্রতার কারণে ও তারাতাড়ি ফিরার ইচ্ছে থেকে ১০-১৫ মিনিট পরেই চূড়া থেকে নামা শুরু করি। ৩ টার দিকে গোম্পা ফিরে আসি। লজে ঢুকে গরম টমেটো স্যুপ খেয়ে ঘুমানোর জন্যে রূমে চলে আসি।

ঘুম থেকে উঠার পর হালকা মাথা ব্যথা এবং কিছুটা খারাপ লাগা অনুভব করি। চিন্তা হচ্ছে, এরকম হলে কালকে সারগিও রি যেতে পারব না। ঘুমানোটা হয়ত উচিৎ হয়নি। শরীর রিকভারি করার জন্যে ডিনারে বেশি পরিমাণে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং দেশ থেকে সাথে করে আনা গরুর মাংসের আঁচার দিয়ে ডাল ভাত খাই। পেট ভরার পরও যতটা পারি খাওয়ার চেষ্টা করি। রাত ১০ টায় একটা নাপা খেয়ে ঘুমিয়ে পরি।

৬ষ্ঠ দিন-গন্তব্য: সারগো রি, উচ্চতা ৪৯৮০ মিটার

কাল রাতে ঘুম ভালো হয়েছে এবং সকালে একদম চাঙ্গা অনুভব করছি। রাতে শরীর নিয়ে যে শঙ্কা করেছিলাম তা এখন একেবারেই নেই। সুতরাং সারগো রি যাচ্ছি।

সকাল ৭টায় সারগো রি এর  উদ্দেশ্যে বের হই এবং ১০:৩০ এ চূড়ায় পৌঁছাই। পথে আনায়া (অস্ট্রেলিয়ান) আমার কয়েকটা ছবি তুলে দেয়। চূড়ার পৌঁছানোর আগে শেষ ২০-৩০ মিটার পুরো রাস্তায় পাথর ভারগেলাস এ আবৃত ছিল।

আধা ঘন্টা চূড়ায় থেকে নেমে আসি। নামার সময় ভারগেলাস এড়ানোর জন্য অন্য একটা পথ বেছে নেই এবং ১ টার দিকে গোম্পায় ফিরে আসি। 

লাঞ্চ করার পরে রোদে বিশ্রাম নিচ্ছি, এমন সময় শুনতে পাই কয়েকজন নেপালি সারগো রি যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পরে। ওদের জন্য হেলিকপ্টার ডাকা হচ্ছে। হেলিকপ্টার এ করে ওরা কাঠমান্ডু ফিরে যাবে।

৭ম দিন-উচ্চতা ৪৬০০ মিটার

সকাল ৮টা, গোম্পা থেকে বের হচ্ছি ইয়ালা বেইজ ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে, সাথে পোর্টার চিরিং। যদিও পোর্টার নিব কিনা একটা দ্বিধা ছিল, তবে চ্যাম্বেল যে ভাবে পিছনে লেগে ছিল তাতে এমনিতেও না নিয়ে উপায় ছিল না। আরেকটা কারণে পোর্টার নিতে রাজি হয়েছি, সামিটের সময় যদি রোপ দিয়ে এংকর করতে হয় তখন যাতে ওকে এংকর পয়েন্টে রাখতে পারি।  

বের হওয়ার আগে গ্যাস বার্নারটা পরীক্ষা করছিলাম। সঠিকভাবে ফিট না হওয়ায় সংযোগ এর জায়গা দিয়ে আগুন ধরে যায়, চিরিং এবং চ্যাম্বেল দুজনই সাথে সাথে ভোদৌড়। পরে আগুন নিভিয়ে আমি পুনরায় সঠিকভাবে বার্নার আর গ্যাস কেনিস্টার সংযোগ করি এবং কোন সমস্যা ছাড়াই আগুন জ্বালাতে সক্ষম হই। অবশ্য এর আগে চ্যাম্বেল আমার ক্রয়কৃত গ্যাস কেনিস্টার এবং বার্নারকে ২নং উপাধি দিয়ে ফেলেছিল।


দুপুর ১২ টার দিকে আমরা ইয়ালা খারকা বা বেইজ ক্যাম্প ৪৬০০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছাই। ক্যাম্পে পৌঁছানোর আগে নিচ থেকে একটা অবয়ব দেখে মনে হয়েছিল খারকায় আরো লোক আছে, তবে ক্যাম্পের কাছে আসার সাথে সাথে আমাদের ভূল ভাঙ্গে। আমরা যে অবয়বটা দেখেছি ওটা মাউন্টেইন গোট (আইবেক্স) ছিল। সিদ্ধান্ত নেই হাই ক্যাম্পে তাবু ফেলার, কিন্তু হাই ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর পানির সোর্স খুঁজে পেতে ব্যর্থ হই। এই সময় চিরিং আমাকে সামনের একটা পাহাড় চূড়া দেখিয়ে বলে ওটা ইয়ালা পিক, তুমি সামিট করে আস, আমরা রাতে গোম্পা ফিরে যাই। আমি একটু অবাক হই, ইয়ালা ক্যাম্পের এত কাছে হলে সবাই ক্যাম্পে একরাত কেন থাকে। আমি না করে দেই আর চিন্তা করি পরে ম্যাপ দেখে সন্দেহ দূর করতে হবে। পানি না পেয়ে বাধ্য হয়ে আবার বেইজ ক্যাম্পে নেমে আসি এবং পাথর দিয়ে শেল্টার করা একটা জায়গায় তাঁবু ফেলি। গোম্পা থেকে সাথে করে নিয়ে  আসা আপেল কেক দিয়ে  লাঞ্চ সেরে ফেললাম। ক্যাম্পে আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। তাঁবু সেট করতে করতে একটা যুগল আসল, ভদ্রলোকের নাম ম্যাক্স (ওর বান্ধবীর নাম ভূলে গেছি)।

তাঁবু সেট করতে করতে ম্যাক্স এর সাথে ইয়ালা পিক নিয়ে কথা হচ্ছিল। ওকে চিরিং এর দেখানো চূড়াটি দেখালে ও ম্যাপ বের করে চেক করে এবং সন্দেহ পোষণ করে। কারণ ম্যাপে চূড়াটি ৫০০০ মিটার দেখাচ্ছে, কিন্তু ইয়ালা চূড়া ৫,৫০০ মিটার। আমিও ম্যাপ বের করে নিশ্চত হই ইয়ালা চূড়া আরো দূরে। চিরিংকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি ও আগে কখনও ইয়ালা পিক সামিট করে নাই,এই রাস্তাও ওর অচেনা। ওকে দিলাম বকা, না চিনে কেন ঐ পিককে ইয়ালা পিক বলল।

বিকাল ৫ টা,উচ্চতার সাথে খাপ খাওয়াতে উপরের দিকে ট্রেক শুরু করলাম, পাশাপাশি রাস্তা সম্বন্ধেও একটা ধারনা পাব। ২৫০ মিটার এর মত উঁচুতে ট্রেক করে ক্যাম্পে ফিরে আসলাম, এখন রাতের খাবার ব্যবস্থা করতে হবে। চিরিংকে বার্নার জ্বালাতে বললে ও বলল কখনও এই চুলায় রান্না করে নাই। আমি নিজের সৌভাগ্যকে সাধুবাদ জানালাম, আমার এখন পোর্টারকেও রান্না করে খাওয়াতে হবে! যাই হক স্যুপ নুডুলস তৈরি করে রাতের খাবার ব্যবস্থা করলাম। খাওয়া শেষে ম্যাক্স এর সাথে গল্প করে তাঁবুতে ঢুকে পরলাম। আমার পরিকল্পনা ভোর রাত ৩টায় বের হওয়া, ওর পরিকল্পনা ৪ টায় বের হওয়া। ৪টায় বের হলে একসাথে পথ চলব না হলে ও আমার ফুট স্টেপ অনুসরণ করবে এই বলে ওর থেকে বিদায় নিলাম।তাঁবুতে ঢোকার পর সবচেয়ে অস্বস্তিকর যে বিষয় মোকাবেলা করতে হচ্ছে সেটা হলো চিরিং এর মোজার দূর্গন্ধ। মনে হচ্ছে কয়েকটা ইঁদুর মরে পচে আছে তাঁবুর ভিতর। যদিও বমি আসার মত অবস্থা তাও আগে থেকে মানসিক প্রস্তুতি থাকায় ধীরে ধীরে মানিয়ে নিলাম।

রাত ১২ টা, গত ১ ঘন্টা ধরে ঘুমানোর তীব্র চেষ্টায় আছি। বেটা চিরিং ১০টার দিকে ঘুম ভাংগিয়ে দিছিল, এরপর আর ঠিকমত ঘুমাতে পারি নি।  জেগে থাকার সবচেয়ে বড় ভয় ব্লাডার খালি করতে বাইরে যাওয়া। অনেক যুদ্ধের পর টিকতে না পেরে ব্লাডারের পানি বিয়োজন দেয়ার জন্যে উঠে পরলাম। এদিকে তাঁবুর ভেতরই তাপমাত্রা -৭°সে: পাচ্ছি। এই তাপমাত্রায় বাইরে যাব না ঠিক করে শুধু তাঁবুর ভিতরের পার্টের চেইন খুলালাম। তবে সুবিধা করতে না পেরে বাধ্য হলাম বাইরে বের হতে, মনে মনে নিজেকে গালি দিতে থাকলাম পি বোতল সাথে না রাখার জন্য। বের হওয়ার সাথে সাথে বাতাস গালে কষে একটা চড় দিল। কোনরকমে কাজ শেষ করেই আবার তাঁবুতে ফিরে আসলাম।

৮ম দিন- উচ্চতা ৫,৫২০ মিটার

ঘড়িতে প্রায় ৪ টার মত বাজে, একদিকে উত্তেজনা আরেকদিকে উৎকণ্ঠা কাজ করছে। এই প্রথম পাহাড় চূড়া সামিটে যাচ্ছি কোন গাইড ছাড়া সম্পূর্ণ নিজের ওপর নির্ভর করে। রাস্তা চেনার জন্য উইকিলকের একটা ম্যাপ ডাউনলোড করে নিছি।  চিরিংকে সাথে নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে রওনা দিলাম। চিরিং এইধরনের অভিযানে প্রথম তাই ওর প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়ে গেছে, ও হ্যাড ল্যাম্প আনে নি, আমার ব্যাকআপ ল্যাম্পটা ওকে দিলাম।


ম্যাপ ধরে এগোতে শুরু করলাম। তবে আমার কাছে যে ম্যাপটা আছে সেটা আরো অনেকটা উপর থেকে শুরু হয়েছে। আমার প্রথম চ্যালেন্জ ঐ লোকেশনে পৌঁছানো। ভাগ্য ভালো উইকিলকে ট্রাভেল নর্থ দেখাচ্ছে, ঐটা দিয়ে বারবার দিক ঠিক করে আগাতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরপর কম্পাস চেক করছি কারণ একহাত ডানে বা বামে ভূল হলে আমি লোকেশন থেকে অনেকদূর চলে যাব। আল্লাহর রহমতে কোন ভুল না করে ম্যাপের শুরুর লোকেশনে চলে আসলাম। এবার চিন্তাটা অনেক কমে গেল কারণ ট্রেইল এর বাইরে গেলেই ম্যাপ সেটা জানান দিচ্ছে। কিছুটা পথ আগানোর পর এখন আর ম্যাপ দেখা লাগছে না কারণ দিক নির্দেশনার জন্য পাথর দিয়ে তৈরি কেইন পেয়ে গেছি, এখন কেইন ফোলো করে আগাচ্ছি। 

হঠাৎ করে পিছনে চিৎকার শুনে ঘুড়ে দেখি চিরিং একটা পাহাড়ে চড়তেছে এবং আমাকে ডাকতেছে ওদিক দিয়ে যেতে। ওকে ডেকে আমার কাছে আনলাম এবং বললাম অন্যদিকে না যেতে, আমাকে ফলো করতে বললাম। পথে ভালো পরিমাণে নরম তুষার পাচ্ছি, এতোটা আশা করি নাই। যদিও গতকালকে হাই ক্যাম্প এর একটু পরে হাল্কা তুষার দেখছি কিন্তু গুরুত্ব দেই নি। নরম তুষারে দুবার পা ঢুকে জুতার ভিতর তুষার ঢুকে গেছে। দ্বিধায় পরে গেছি, ফিরে যাব কিনা? এই ভেজা পা নিয়ে আগানো বিপদজ্জনক, ফ্রোস্টবাইটের ঝুঁকি মাথায় ঘুরতেছে। নিজের উপর মেজাজ প্রচন্ড খারাপ, তাঁবুতে গেইটার ও মাইক্রো স্পাইক রেখে আসার জন্য। সিদ্ধান্ত নিলাম, বিশ্রাম ছাড়া এগিয়ে যাওয়ার, যাতে পা উষ্ণ থাকে। 

ইয়ালা পিকের কাছে চলে আসছি। এখান থেকে রাস্তাটা দুদিকে গেছে, একটা বাম দিক দিয়ে গ্লেসিয়ার হয়ে চূড়ার দিকে গেছে আরেকটা ডান দিক দিয়ে চূড়ার দিকে গেছে। জুতায় ট্রাকশন ডিভাইস বা ক্রাম্পন নেই তাই গ্লেসিয়ারের দিকে যাওয়া হবে বোকামি, অন্যদিক দিয়ে চূড়ায় উঠার শেষ অংশটা আবার খাড়া বেশি মনে হচ্ছে। চিরিং আর আগাতে চাচ্ছে না, ও বলতেছে এই চূড়া বিপদজ্জনক, ও যাবে না। ধমক দিয়ে বললাম ওকে সাথে আনছি রোপ এর এংকর পয়েন্টে রাখার জন্য, ভয় পাইলে চূড়ায় ওঠার দরকার নাই। 

ডান দিকে পায়ের ছাপ অনুসরণ করে আগাতে থাকলাম। চূড়ার একেবারে নিচে দাঁড়িয়ে আছি, আর ৫০ মিটারের মত উঠতে হবে, তবে এই অংশটা রক ফেস, ক্লাইম্ব করে উঠতে হবে।  রোপ এংকরিং করা ছাড়াই আমরা রক ফেসটা ক্লাইম্ব করছি।

সকাল ৯টা, আমি আবেগ ধরে রাখতে পারলাম না। এতক্ষন যে উত্তেজনা আর শংকা কাজ করছিল সেটা আনন্দ অশ্রু হয়ে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরছে। আমি চ্যালেঞ্জ জয় করেছি, আমি আজকে জয়ী। আবেগে  দেশের নাম নিয়ে জোরে চিৎকার দিলাম। আমি এখন ইয়ালা পিকের সামিট পয়েন্টে দাঁড়িয়ে। চিরিং ও আমার সাথে চূড়ায় পৌঁছেছে। 

নিচে ম্যাক্সকে দেখা যাচ্ছে, চিৎকার দিয়ে ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলাম। আধাঘণ্টা চূড়ায় কাটিয়ে নেমে আসলাম। পথে ম্যাক্সদেরকে শুভকামনা জানিয়ে ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে এগোতে লাগলাম। কোন অসুবিধা ছাড়াই ক্যাম্পে ফিরে আসলাম। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে লাঞ্চ তৈরির প্রস্তুতি শুরু করলাম, লাঞ্চ শেষে ক্যাম্প গুছিয়ে গোম্পাতে ফিরে যাব।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭