ইনসাইড পলিটিক্স

জাতীয় পার্টি নিয়ে সরকারে স্বস্তি


প্রকাশ: 05/05/2023


Thumbnail

অবশেষে জাতীয় পার্টি নিয়ে সরকারের ভেতর যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে। গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ঘোষণা করেছেন যে পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবেন। আগামী সবগুলো নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে বলেও ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি নির্বাচন কমিশনকে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন করা এবং লেভেল প্লেয়িং নিশ্চিত  করার জন্য আহ্বান জানান। জাতীয় পার্টির এই নির্বাচনমুখী হওয়াটাকে সরকার একটি বড় অর্জন হিসেবে মনে করছে। এর ফলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অনেকের মধ্যে স্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

জাতীয় পার্টিকে নিয়ে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে সরকার এক ধরনের অস্বস্তি এবং আতঙ্কের মধ্যে ছিল। বিশেষ করে এরশাদের মৃত্যুর পর জিএম কাদের জাতীয় পার্টির হন। জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে সক্রিয় স্বাতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সরকারের কঠোর সমালোচনা শুরু করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতাগুলো নিয়ে জোরেশোরে কথাবার্তা বলতে থাকেন। পাশাপাশি জিএম কাদের আগামী নির্বাচনে যাবেন কি যাবেন না এ নিয়ে একটি অনিশ্চিয়তার ভ্রুমজাল সৃষ্টি করেন। এ সময় জিএম কাদেরের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ বা সুলীলদের যোগাযোগ ইত্যাদি নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। জিএম কাদেরকে নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি এবং আতঙ্ক তৈরি হয়। এর মধ্যে সরকার জাতীয় পার্টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নেন এবং যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন তারা নতুন করে সংগঠিত হয়। এর প্রেক্ষিতে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রওশন এরশাদ স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জিএম কাদেরের সঙ্গে তার বৈরিতা প্রকাশ্য রূপ ধারণ করে। ব্যাংকক থেকে রওশন এরশাদ ফিরে আসার পর  রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদেরের দূরত্ব জাতীয় পার্টিতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হতে থাকে।

রওশন এরশাদ জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য দলের কাউন্সিল ডেকেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন মহলের উদ্যোগে তাদের মীমাংসা হয়ে যায়। এর মধ্যে দেখা যায় যে জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ নির্বাচনমুখী। কাজেই জিএম কাদের আগামী নির্বাচনে যাবো কিনা বা অর্থবহ নির্বাচন না হলে জাতীয় পার্টি যাবে না এ ধরনের বক্তব্য থেকে সরে আসেন। তবে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি এক ধরনের অস্পষ্টতা রেখেই চলেছেন। গতকাল তিনি সুস্পষ্টভাবে বলে দেন যে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করছে। এর ফলে আগামী নির্বাচন যে একতরফা হবে না এটি মোটিমুটি নিশ্চিত। কারণ জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দিলে নির্বাচনে এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বীতা এবং অংশগ্রহণ করার প্রবণতা সৃষ্টি হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। আর আওয়ামী লীগ মনে করছে যে আগামী নির্বাচন আর যাই হোক একতরফা করা যাবে না। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টিকে তাদের বড় প্রয়োজন। 

২০১৪ সালেও জাতীয় পার্টির সব আসনে নির্বাচন করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এরশাদ বেঁকে বসেন এবং তার প্রার্থীদেরকে নিদের্শ দেন তারা যেন নির্বাচনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ ওই নির্বাচনে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদ হাল ধরেন এবং তার নেতৃত্বেই জাতীয় পার্টির একটি অংশ নির্বাচন করে, অন্যরা প্রায় বসে ছিল। তারপরও জাতীয় পার্টি সেবার জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে ওই নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়াটি সরকারের জন্য সমালোচনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার এখন ওই রকম পরিস্থিতিতে আর যেতে চায় না। আর এ কারণেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের যে পরিকল্পনা জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এক ধাপ অগ্রগতি তৈরি করল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭