ইনসাইড পলিটিক্স

ফখরুলের নেতৃত্বে তৃতীয় ধারা?


প্রকাশ: 05/05/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় ধারার সৃষ্টির চেষ্টা দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময়ে সুশীল সমাজ এবং পশ্চিমা দেশগুলো এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সে সমস্ত উদ্যোগ কখনোই সফল হয়নি। নির্বাচন এলেই এ ধরনের একটি তৃতীয় ধারা সৃষ্টির চেষ্টা দৃশ্যমান হয়। কিন্তু বারবারই এই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এবারও নির্বাচনকে মাথায় রেখে রাজনীতিতে একটি তৃতীয় ধারা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। সুশীল সমাজের প্রথম পছন্দ ছিল জিএম কাদের। কিন্তু জিএম কাদের শেষ পর্যন্ত সুশীলদের ফাঁদে পা দেননি। তিনি গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। 

জাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদেরের আলাদা একটা গ্রহনযোগ্যতা ছিল। একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। শিক্ষিত, মার্জিত এবং রুচিশীল হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রশংসিত। কিন্তু তিনি যখন তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেননি তখন নতুন করে ভাবনায় এসেছে আন্তর্জাতিক মহল এবং সুশীল সম্প্রদায়। তাদের এখনকার পছন্দের ব্যক্তি হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিএনপি থেকে বের করে নিয়ে এসে অন্যান্য মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সুশীলদের পছন্দের একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। আর এ কারণেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন দলের বাইরেও একাকী বিভিন্ন ব্যক্তি এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। 

বিএনপির ব্যাপারে নানা কারণেই কূটনীতিক এবং সুশীলদের আস্থা নেই। আওয়ামী লীগকেও তারা ক্ষমতা থেকে হটাতে চায়। আর এই কারণেই ফখরুলের নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা আস্তে আস্তে শুরু হচ্ছে বলেও বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর রাজনীতিতে একটি তৃতীয় ধারা সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যান এবং গণফোরাম গঠন করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে যেকোনো রাজনৈতিক দল ডানা মেলতে পারে না। ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম তার একটি বড় উদাহরণ। গণফোরাম মুখ থুবরে পড়ে গেছে। এই দলটি বিভক্ত হয়ে এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। 

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট বিপুল বিজয় হয়ে ক্ষমতায় আসে। এসময় বিএনপি-জামাতের নানারকম তৎপরতা বিশেষ করে মৌলবাদী, জঙ্গিবাদের উত্থান, সন্ত্রাস এবং সীমাহীন দুর্নীতির কারণে আন্তর্জাতিক মহল আবার তৃতীয় ধারা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এসময় ড. ইউনূসকে নিয়ে কাজ শুরু হয়। ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর একটি রাজনৈতিক সংগঠন গঠন করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেই রাজনৈতিক সংগঠনের সাংগঠনিক সংগঠন নিয়ে এগোতে পারেননি ড. ইউনূস। তবে এই সময় সুশীলরা বাংলাদেশে একটি পট পরিবর্তন করে এবং সুশীল নিয়ন্ত্রিত সেনা সমর্থিত একটি সরকারকে ক্ষমতা বসাতে সক্ষম হয়। সেনাসমর্থিত এক-এগোরো সরকার ক্ষমতায় বসিয়েই একটি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করে এবং ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী নেতৃত্বে সেই প্রক্রিয়া শুরুতেই হোঁচট খায়। কারণ এটি জনগণ গ্রহণ করেনি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-বিএনপি থেকে প্রধান দুই নেতাকে মাইনাস করার যে প্রকল্প সুশীল এবং পশ্চিমা দেশগুলো গ্রহণ করেছিল সেটিও জন প্রতিরোধের মুখে ভেস্তে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে এক-এগোরো সরকার একটি নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের বাধ্য হয়। এখন নতুন করে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আর এই চেষ্টার প্রধান লক্ষ্য হল কোনো অরাজনৈতিক সুশীল ব্যক্তি নয়। বরং একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির নেতৃত্বে তারা মেরুকরণ করতে চায়। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিতে অনেক রাজনীতিবিদ আছেন যারা সুশীলদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করেন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে গ্রহণযোগ্য, আস্থাভাজন। তাদেরকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে যারা মূল নেতৃত্বের প্রতি অসন্তুষ্ট তারা এরকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। কারণ তারা অতীতে দেখেছেন যে মূল ধারার বাইরে গেলে রাজনীতিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়তে হয়। আর এ কারণেই এখন তারা এই রাজনৈতিক মেরুকরণের সামিল হবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭