এডিটর’স মাইন্ড

কেন আওয়ামী লীগ জানুয়ারিতে নির্বাচন চায়?


প্রকাশ: 05/05/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে—সে সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। যদিও নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপে বলা হয়েছে ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার আগে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলাপ করবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ ডিসেম্বরের শেষে নয়, বরং জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচন করতে আগ্রহী। 

একাধিক আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে তারা ২০২৪ এর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন করার ব্যাপারে আগ্রহী। তবে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করার এখতিয়ার শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন যেটিকে গ্রহণযোগ্য তারিখ মনে করবে সেই তারিখে তারা নির্বাচন করবে। তবে আওয়ামী লীগ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী বলে জানা গেছে। এর প্রধান কারণ হল সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব। 

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, জোড় সালে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার সবগুলো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ওই নেতা উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৯৬ এর নির্বাচন, ২০০৮ নির্বাচন, ২০১৪ এবং ২০১৮ নির্বাচন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে জোড় সালে  যে নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেছে সেই নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারেননি। অন্যদিকে বেজোড় সালের নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ অপ্রত্যাশিত ফলাফল করেছে। যেমন; ১৯৯১ সালের নির্বাচন, ২০০১ সালের নির্বাচন। অবশ্য ১৯৮৬ সালের একটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেছিল এবং ওই নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ এগিয়ে ছিল। কিন্তু এরশাদের অধীনে ওই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের হারিয়ে দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনটি বাদ দিলে বাকি সব নির্বাচনের তথ্য-উপাত্ত, পরিসংখ্যান ইত্যাদি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে বেজোড় সালের একটি নির্বাচনে মাত্র আওয়ামী লীগ জিতেছিল। তাও ১৯৭৩ সালের নির্বাচন। আর জোড় সালের একটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জোর করে হারানো হয়েছিল, সেটি ১৯৮৬ সালের নির্বাচন। 

একারণেই আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করেন যে আওয়ামী লীগের জন্য জোড় সাল শুভ। আর এই শুভ সালেই তারা নির্বাচন করতে চায়। ২০২৪ এর ১ থেকে ১০ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ বেশি। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা এ ধরনের অদৃষ্টবাদী ধারণাকে অরাজনৈতিক এবং উদ্ভট বলে মনে করেন। তারা বলেছেন যে জনগণ সমর্থন করলে সেই নির্বাচন যখনই অনুষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ জিতবে। আর যদি জনগণ প্রত্যাখ্যান করে তাহলে জোড় বা বেজোড় সাল কোনটাই কাজে লাগবে না। তবে আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেকেই নির্বাচনের সঙ্গে যে কিছু ভাগ্য জড়িত এটি অস্বীকার করছেন না। 

তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আরেকটি কারণ হল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে পুরো বিশ্ব ছুটিতে যায়। বিশেষ করে ক্রিসমাস এবং ইংরেজী নববর্ষের কারণে তাদের পক্ষে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রতিনিধি পাঠানো সম্ভব হয়না। ২০১৮ এর নির্বাচনে এটির বড় প্রমাণ ছিল যে ওই নির্বাচনে বিদেশিরা ক্রিসমাস এবং ইংরেজী নববর্ষের কারণে পর্যবেক্ষণে আসতে পারেননি। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ মনে করে যে দুই তারিখের পর থেকে পুরো বিশ্ব আস্তে আস্তে চালু হয় এবং কর্মচাঞ্চল্যে ভরে। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে প্রচুর সংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশে আসতে পারেন। কারণ আওয়ামী লীগ এবার যেকোনো মূল্যে একটি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে তার অবস্থান ব্যক্ত করেছেন বলে জানা গেছে। এখন দেখার বিষয় যে আওয়ামী লীগের পছন্দের সালে নির্বাচন হয় নাকি নির্বাচন কমিশন তার সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭