কালার ইনসাইড

কেন এত বিতর্ক? কী আছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’তে?


প্রকাশ: 08/05/2023


Thumbnail

ইউটিউবে ছবির ট্রেলার দেখেই বিতর্কের মেঘ ঘনিয়েছিল। মুক্তির পর তোলপাড় ফেলে দিয়েছে পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। কেউ ছবিটিকে সমর্থন করছেন, কেউ এর বিপক্ষে সরব হয়েছেন।

কিন্তু ঠিক কী আছে এই ছবিতে? কেন ছবিটি নিয়ে এত বিতর্ক? অনেকে বলছেন, বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’কেও ছাপিয়ে যাচ্ছে আদাহ শর্মা অভিনীত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।

ছবিটির মূল চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে, তা নিঃসন্দেহে বিতর্কিত। এই ছবিতে হিন্দু মহিলাদের উপর ইসলাম আগ্রাসনের কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায় জোরদার হয়েছে বিতর্ক।

ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম শালিনী উন্নিকৃষ্ণণ। হিন্দু এই তরুণী ভাগ্যের ফেরে হয়ে উঠেছেন ফতিমা। অর্থাৎ, তাঁর ধর্ম পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক ‘ফাঁদ’ পেতে শালিনীকে ফাতিমা করে তোলার কাহিনি দেখিয়েছেন পরিচালক সুদীপ্ত।

শুধু হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে যাওয়াই নয়, এই ধর্মীয় পরিবর্তন শালিনীর জীবনেও বয়ে এনেছে চরম দুর্ভাগ্য। তাঁকে সিরিয়ার জঙ্গি দলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। ধর্মান্তরিত নারীর অসহায় জীবন সংগ্রামকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।

পরিচালক দেখিয়েছেন, শুধু হিন্দু নয়, কেরলে এই ধর্মান্তরণের ‘ফাঁদে’ পা দিয়ে সর্বনাশ ডেকে এনেছেন খ্রিস্টান মহিলারাও। এই ছবির ট্রেলারে দাবি করা হয়েছে, কেরালা থেকে ৩২ হাজার মহিলা ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছেন।

সুদীপ্ত নিজে অবশ্য এই ছবিকে ‘ইসলামবিরোধী’ বলার ঘোর বিরোধী। তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি ছবি তিনি তৈরি করেছেন। নেপথ্যে রয়েছে অনেক গবেষণা, পরিশ্রম এবং তথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ।

পরিচালকের কথায়, ‘‘আমি কখনওই বলিনি কেরলে যে সব মেয়েদের ধর্মান্তরণ হচ্ছে তাঁরা আইসিস-এ যোগ দিচ্ছেন। আমার প্রশ্ন, মেয়েগুলো একেবারে উবে যাচ্ছে কী ভাবে?’’ কেরালায় ধর্মান্তরণকে ঘিরে নিষ্ঠুর এবং করুণ চক্র চলছে বলে দাবি পরিচালকের।

তিন নারীকে নিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন বলে দাবি পরিচালক সুদীপ্তের। তিনি জানিয়েছেন, যাঁদের কাহিনি এই ছবিতে দেখানো হয়েছে, ‘‘তাঁদের এক জন এখনও আফগানিস্তানের জেলে বন্দি। অন্য জন আত্মহত্যা করেছেন, বিচারের অপেক্ষায় তাঁর মা-বাবা। অন্য আর এক মেয়ে এখন গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন যাঁকে ক্রমাগত ধর্ষণ করা হয়েছে।’’

এই ছবিকে ইতিমধ্যেই করমুক্ত বলে ঘোষণা করে দিয়েছে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। একাধিক রাজ্যে বিজেপি নেতা হিন্দু মহিলাদের জড়ো করে ছবিটি দেখাচ্ছেন। দাবি, গোটা ভারতের সমস্যার কথা বলে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।

বিজেপিশাসিত কর্নাটকে ভোট আসন্ন। সেখানেও নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা গিয়েছে সুদীপ্তের ছবির কথা। মোদীর দাবি, এই ছবি সমাজে সন্ত্রাসবাদের মুখোশ খুলে দেবে।

এ দিকে, যে কেরালাকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই বামশাসিত রাজ্যে ছবিটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন স্পষ্ট জানান, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে দিতে এই ধরনের ছবি তৈরি হয়েছে।’’

সিপিএম, কংগ্রেসের মতো বিজেপিবিরোধী দলগুলি একযোগে এই ছবিকে ‘প্রচারসর্বস্ব’ বা ‘রাজনৈতিক প্রচারমূলক’-এর আখ্যা দিয়েছে। আঙুল উঠেছে সঙ্ঘ পরিবারের দিকেও।

মুক্তির আগে ছবিটি থেকে অন্তত ১০টি দৃশ্য বাদ দিতে হয়েছে। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র উপর কাঁচি চালিয়েছে সেন্সর বোর্ড। কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দের সাক্ষাৎকারের অংশও বাদ পড়েছে।

বেশ কিছু দৃশ্যে হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে সংলাপ ছিল। তাই সে সব দৃশ্য বাদ পড়েছে। ছবিতে একটি সংলাপ ছিল, যেখানে বলা হয় ‘ভারতীয় কমিউনিস্টরা দু’মুখো’। ‘ভারতীয়’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে এই সংলাপ থেকে।

‘দ্য কেরালা স্টোরি’র একটি দৃশ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আগামী দু’দশকে এই রাজ্য মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যে পরিণত হবে।’’ বিতর্কিত সংলাপের জন্য এই গোটা দৃশ্যই বাদ দেওয়া হয়েছে।

ছবির নায়িকা অদাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন। সমালোচকদের কাছে তাঁর আর্জি, যাঁরা বিতর্কে ইন্ধন দিচ্ছেন, তাঁরা আগে ছবিটি দেখুন। তারপর তা নিয়ে মন্তব্য করবেন। নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মতামত তৈরি করার অনুরোধ জানিয়েছেন অদা।

অনেকে বলছেন, ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহে সুদীপ্তের এই ছবি বিতর্কে ঘি ঢেলেছে। বিজেপিও ভোটের মুখে ছবিটিকে আঁকড়ে ধরেছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭