ইনসাইড হেলথ

নিয়ন্ত্রণই জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/02/2018


Thumbnail

সবেমাত্র ৩২ বছরে পা দিয়েছেন তৌহিদ সাহেব। শরীরে কিছুদিন থেকে বেশকিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছিলো। একটু পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠতেন, দুর্বল লাগতো, ক্ষুধা পেতো বেশি, পানি খেলেও পিপাসা লেগেই থাকতো। অফিসের সহকর্মীদের পরামর্শে ডাক্তার দেখালেন, রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ল ডায়বেটিস। তিনি তো হতবাক, ভাবলেন এত কম বয়সে কীভাবে এটা হলো? কারো এত তাড়াতাড়ি ডায়বেটিস হয়, তা তো আগে শোনেননি কখনো। ভেবে পেলেন না কিছু। চিকিৎসক ভরসা দেন তবে তিনি পৃথিবী অন্ধকার দেখতে লাগলেন।

নিয়মিত চেকআপে এসে বৃদ্ধ একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো তৌহিদ সাহেবের। কথায় কথায় জানতে পারলেন মাত্র ২৮ বছরেই তাঁর ডায়াবেটিস ধরা পড়েছিল। পরিবার, পরিজন বন্ধুবান্ধব হা হুতাশ করত তাঁর কী হবে। তবে তিনি নিজে কখনো আত্মবিশ্বাস হারাননি। এর পর ৪০ বছর কেটে গেছে। এখনো তিনি অনেকটাই সুস্থ জীবন যাপন করেছেন। যেখানে তাঁর অনেক সুস্থ বন্ধুও পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছে অনেক আগেই। বৃদ্ধ তৌহিদকে উপদেশ দিলেন এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ওষুধ, খাদ্যাভাস এবং শৃঙ্খলা মেনে চললেই ডায়বেটিস নিয়ে আর ভয়ের কিছু নেই। আমার তো মনে হয় ডায়াবেটিস হওয়ার নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে আমি আরও ১০ বছর বেশি পেয়েছি জীবনে।

বিশ্বজুড়ে ডায়বেটিস রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। দিন দিন এই রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই রোগ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় ডায়বেটিস সচেতনতা দিবস।

রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে বেশিদিন ধরে থাকলে ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। সাধারণত ডায়াবেটিস বংশগত কারণে ও পরিবেশের প্রভাবে হয়। কখনো কখনো অন্য রোগের ফলেও হয়ে থাকে। এ রোগ সব লোকেরই হতে পারে। ডায়াবেটিস একবার হলে তা আর সারে না। এটা সব সময়ের এবং আজীবনের রোগ। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ রোগকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব হয়।

বার বার প্রস্রাব, অত্যধিক পিপাসা, বেশি ক্ষুধা, দুর্বল বোধ করা এবং কেটে ছিঁড়ে গেলে ক্ষত তাড়াতাড়ি না শুকানো হচ্ছে এ রোগের সাধারণ লক্ষণ। যাদের বংশে (রক্ত-সম্পর্কযুক্ত আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস আছে, যাদের ওজন খুব বেশি, যাদের বয়স ৪০-এর উপর এবং যারা শরীর চর্চা করেন না, গাড়ি চড়েন এবং বসে থেকে অফিসের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অত্যধিক চিন্তা-ভাবনা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, আঘাত, সংক্রামক রোগ, অস্ত্রোপচার, অসম খাবার, গর্ভাবস্থা এবং ওজন বেশি বেড়ে গেলে এ রোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখে প্রথম থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করা যায়।

ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়, এ ধারণা ঠিক নয়। নিয়মশৃঙ্খলাই ডায়াবেটিস রোগীর জীবনকাঠি। ডায়াবেটিস রোগীকে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গ্রহণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। রোগ সম্বন্ধে ব্যাপক শিক্ষা ছাড়া ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। তবে ডায়াবেটিস বিষয়ে শিক্ষা কেবল রোগীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। একই সঙ্গে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব এবং ডাক্তার ও নার্সদের শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। রোগী যদি চিকিৎসকের সঙ্গে সহযোগিতা করে তার উপদেশ ও নির্দেশ ভালোভাবে মেনে চলেন এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যথাযথভাবে গ্রহণ করেন তবে সুখী, কর্মঠ ও দীর্ঘজীবন লাভ করতে পারেন।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস অন্ধত্ব, হৃদরোগ, কিডনি নষ্ট, স্ট্রোক ও পঙ্গুত্বের মতো কঠিন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। টাইপ-১ ও টাইপ-২ এই দুই ধরনের ডায়াবেটিস হয়। সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সীদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের দেহে ইনসুলিন একেবারেই হয় না অথবা ইনসুলিনের ঘাটতি থাকে। তাদের ইনসুলিন নিতেই হয়।

তবে দেশে টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী তুলনামূলক কম। অপর দিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী বাংলাদেশে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ। তাদের শরীরে ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকে অথবা ইনসুলিনের ঘাটতি থাকে। এ ধরনের রোগীদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়াম চর্চা করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে যদি কায়িক পরিশ্রম না করা হয়, মোটা হয়ে যায়, অতিমাত্রায় ফাস্টফুড খাওয়া ও কোমল পানীয় পান করা হয়, অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকে, যদি ধূমপান করা হয়, যাদের বাবা-মা অথবা রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে এবং যাদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনির বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

এগুলো ভেবে চিন্তে সচেতন হোন আজই। শৃঙ্খলা মেনে চলুন। সেই সঙ্গে অপরকেও সচেতন করে তোলার চেষ্টা করুন।


বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭